ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ এপ্রিল, ২০২২ ১২:০৩ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৯১ বার
হজরত সালমান ফারসি বর্ণিত হাদিসে মহানবি (সা.) রমজানের প্রথমভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত ও শেষভাগে জাহান্নাম থেকে মুক্তি বলে ঘোষণা করেছেন। সেই অনুযায়ী রহমতের ১০ দিন শেষ হয়ে গেল আজ। মহানবি (সা.) এ মাসের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে এরশাদ করেছেন, এটি সবুরের মাস। আর সবুরের প্রতিদান জান্নাত। সবুর বা সহিষ্ণুতা মানবজীবনের একটি উন্নত গুণ। সবুরের আভিধানিক অর্থ নিজেকে আবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রণে রাখা। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণকে সবুর বলা হয়। ইবাদত করতে গিয়ে যে কষ্ট হয়, নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে যে কষ্ট হয় এবং বিপদের সময় যে কষ্ট হয়, তা সহ্য করার জন্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার নাম সবুর।
আল্লাহতায়ালার আদেশ পালন অনেক সময় প্রবৃত্তির চাহিদার খেলাপ হয়। তখন নিজেকে সংযত রেখে সঠিক নিয়মে সেই অদেশ পালন করা ইমানের দাবি। যেমন ভোরে ঘুমের প্রাবল্য সত্ত্বেও বিছানা ছেড়ে ফজরের নামাজের জন্য উঠতে হয়। গভীর রাতের আরাম ত্যাগ করে যারা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ওঠেন, তাদের প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত নাজিল হয়। এভাবে শরিয়তের যেসব নির্দেশ পালন করতে গিয়ে প্রবৃত্তির সঙ্গে বিরোধিতা করতে হয়, সেগুলোতে প্রমাণিত হয় ইমানের দৃঢ়তা। নিষিদ্ধ কাজগুলো সাধারণত লোভনীয় হয়ে থাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, জান্নাতকে বেষ্টন করে আছে প্রতিকূলতা। আর জাহান্নামকে ঘিরে রেখেছে লোভনীয় বিষয়। অতএব, নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিবৃত্ত থাকা আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতিরই ফল।
তেমনই বিপদের সময় অবিচলিত থাকা মুমিনের অন্যতম উন্নত আদর্শ। আল্লাহতায়ালার হুকুম ছাড়া বিশ্বজগতে কিছুই ঘটে না। তারই ইচ্ছায় স্বাচ্ছন্দ্য ও সংকট হয়। তিনি যখন ইচ্ছা করেন। এভাবে নিজেকে রাব্বুল আলামিনের ইচ্ছা ও হুকুমের কাছে সোপর্দ করা প্রকৃত ইমানের দাবি। মহানবি (সা.) এরশাদ করেন, জেনে রেখ, তুমি যা পেয়েছ তা তোমার থেকে এড়িয়ে যাওয়ার ছিল না। আর তোমার থেকে যা এড়িয়ে গেছে, তা তোমার পাওয়ার ছিল না।
অবশ্য সবুরের আরও ক্ষেত্র রয়েছে। রাগের সময় সীমা লঙ্ঘন না করা সবুরের অন্তর্গত। মহানবি (সা.) এরশাদ করেন, লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করা বীরত্ব নয়, বরং রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারাই বীরত্ব। সমালোচনা সহ্য করাও সবুর। নিন্দুক বা সমালোচক সত্যের আশ্রয় নেবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবুও অস্থির না হয়ে নিজ কর্তব্য ও আদর্শে স্থির থাকার শিক্ষা দেয় ইসলাম। মোট কথা, সবুর একটি উন্নত মানবীয় গুণ, যা অর্জনের জন্য প্রতিটি ইমানদারের চেষ্টা করা উচিত।
মাহে রমজান সবুরের গুণ অর্জনে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। পানাহার বর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশের সামনে নিজের প্রবৃত্তি দমনের যে অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা যখন অন্য সব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, তখন একজন মানুষের চরিত্র হয় উন্নত থেকে আরও উন্নত। সবুরের মাহাত্ম্য ও প্রতিদান সম্পর্কে প্রচুর আয়াত ও হাদিস রয়েছে। যেমন সুরা বাকারার ১৫৩নং আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনরা, তোমরা সবুর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন। তেমনই সুরা জুমারের ১০নং আয়াতে বলা হয়েছে-নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের তাদের প্রতিদান অভাবনীয় মাত্রায় দেওয়া হবে।
নবি করিম (সা.) এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন যখন সব মানুষ আল্লাহর দরবারে হিসাব দেওয়ার জন্য হাজির হবে, তখন একজন ঘোষক বলতে থাকবেন, শ্রেষ্ঠ মানুষরা কোথায়? তখন ছোট একটি দল উঠে দাঁড়াবে এবং দ্রুতগতিতে জান্নাতের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। ফেরেশতারা এগিয়ে এসে তাদের জিজ্ঞাসা করবেন, আপনারা এত দ্রুত জান্নাতে যাচ্ছেন আপনারা কারা? তারা বলবেন, আমরা শ্রেষ্ঠ মানুষ। প্রশ্ন করা হবে আপনাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ কী? তারা বলবেন, আমাদের ওপর যখন অত্যাচার করা হতো, তখন আমরা ধৈর্য ধারণ করতাম। ফেরেশতারা বলবেন, যান আপনারা জান্নাতে চলে যান। আল্লাহ আমাদের ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত করুন।