ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

সেরা রজনীর সেরা উপহার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২১ এপ্রিল, ২০২২ ০৯:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫১৮ বার


সেরা রজনীর সেরা উপহার

শুরু হলো রমজানের শেষ দশক। দয়াময়ের রহমের দরিয়ায় ঝড় ওঠছে! বান বইছে! জোয়ার ডাকছে! এ ঝড়ে দুমড়েমুচড়ে পড়বে পাপের পর্বত! বানে ভেসে যাবে মুমিনের গোনাহের ময়লা! জোয়ারে অবগাহন করে পবিত্র হবেন ভাগ্যবান! জীবনের পাতা হবে পাক-সাফ! পুণ্যে ভরবে আমলের খাতা! গণহারে মুক্তি মিলবে এখন পাপীদের। মুক্তির সেই ডানামেলা আনন্দ বাড়িয়ে তুলতে অপেক্ষা করছে মহিমান্বিত ‘লাইলাতুল কদর’। যেকোনো রাত বিশেষ করে বেজোড় সংখ্যায় হতে পারে তার সাক্ষাৎ। এ রাতেই নাজিল হয়েছিল আল-কুরআন। হুদাল্লিন্নাস ওয়াল ফুরকান। যা সত্য-মিথ্যার মাঝে চির পার্থক্য নির্ধারণ করে স্পষ্ট করে দিয়েছিল সত্যান্বেষীর পথ। এ রাতেই শান্তির বার্তা নিয়ে দুনিয়ায় নামবে ঝাঁকে ঝাঁকে অসংখ্য ফেরেশতা। রহমতের চাদরে ঢাকবে প্রভুর প্রিয় বান্দাদের মজলিস। ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে সালাম জানাবে খাঁটি মুমিনদের। শান্তি আর শান্তি। চলবে ভোরের শুভ্র রেখার উদয় পর্যন্ত।

রুহুল আমিনের সাক্ষাতে ধন্য হবে বহু হাত। কেবল হতভাগারাই থাকবে বেখবর ও গাফেল। প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রতিটি কর্ম সম্পাদিত হবে এ রাত্রিতে। বাজেট পক্রিয়ার মতো এক বছরের জন্য হায়াত, মউত, রিজিকসহ গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ের সিদ্ধান্ত দায়িত্বরত ফেরেশতাদের বুঝিয়ে দেয়া হবে। আর মানবের সামনে রাখা হবে ভাগ্য পরিবর্তনের সুবর্ণ সুযোগ। মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বেজে উঠলেও এক রাত্রি ইবাদত করে অর্জন করতে পারবে হাজার মাস অপেক্ষা বেশি পুণ্য। আর জীবনের ছায়া লম্বা হলে তো কথাই নেই। ক্ষুদ্র জীবনে অসীম জগতের চির শান্তির ঠিকানায় অঢেল, অফুরন্ত নাজ-নিয়ামত বাড়িয়ে নেয়ার এটাই মাহেন্দ্রক্ষণ। একটি সিজদা হাজার মাসের সিজদাকে ছাড়িয়ে যাবে! একটি আমল হাজার মাসের আমলের সীমানা অতিক্রম করবে! সেরা রজনীর সেরা উপহারে ধন্য হবে মুমিনের প্রাণ। কাঁদবে চির জাতশত্রু অভিশপ্ত শয়তান।
আরবি মাস ২৯-৩০ দিনে যায়। সে হিসাবে বছর পূর্ণ হয় ৩৫৪-৩৫৫ দিনে। হাজার মাসে হয় ৮৩ বছর চার মাস প্রায়। একটি নেক বা হাসানাহ স্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় ১০ গুণ পর্যন্ত। সূরা আনআমের ১৬০ নং আয়াতে এসেছে- ‘কেউ কোনো ভালো কাজ করলে সে তার ১০ গুণ প্রতিদান পাবে!’ সে হিসাবে ‘লাইলাতুল কদরে’ একটি হাসানাহ বা নেককাজ করলে তার সাওয়াবের পরিমাণ দাঁড়াবে কয়েক লাখ।


এক হাদিসে এসেছে ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল। (শুআবুল ইমান : ৩০৫-৩০৬) বোখারি ও মুসলিমের হাদিসে এসেছে, ‘নামাজ জামাতে পড়লে ২৭ গুণ সাওয়াব বেশি হবে’। ইবনে মাজার এক হাদিসে এসেছে, ‘কোনো নামাজ ওয়াক্তিয়া মসজিদে জামাতে পড়লে ২৫ গুণ, জামে মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে নববী বা বায়তুল মুকাদ্দাসে পড়লে ৫০ হাজার গুণ ও কাবা শরিফে পড়লে এক লাখ গুণ সাওয়াব পাওয়া যাবে। আর লাইলাতুল কদরের হাজার মাসের সাথে এগুলো গুণ করলে বিশাল নেকের ভাণ্ডার তৈরি হবে।

আল্লøাহর রাস্তায় দানের বিষয়ে সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্যবীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, আর প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) একশ’ শস্য এবং আল্লøাহ যাকে ইচ্ছা করেন বর্ধিত করে দেন; বস্তুত আল্লøাহ হচ্ছেন অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ!’ সুতরাং লাইলাতুল কদরের দানের সাওয়াবও একইভাবে বৃদ্ধি পাবে। ‘লাইলাতুল কদর’-এর ফজিলতের কথা কুরআন কারিমে যেভাবে এসেছে তা থেকে বুঝা যায়- সেটার পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে। কারণ বর্ণিত হয়েছে, ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম্মিন আলফি শাহর’ তথা তার মর্যাদা হাজার মাস অপেক্ষা বেশি। সে বেশির পরিমাণ কত, কেউ জানে না। একমাত্র দয়াময় রবই জানেন। তাই মুফাসসিরিনে কেরাম বলেন, এ কথার অর্থ হলো অসংখ্য, অগণিত। লাইলাতুল কদরে নেকি অর্জনের এমন সুযোগ থাকার পরও যদি হাশরের মাঠে একটি নেকির জন্য জাহান্নাম ভোগ করতে হয় তাহলে তার থেকে কপাল পোড়া পৃথিবীতে কে আছে! এ জন্যই জিবরাইল আ: যখন দোয়া ধরলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও গোনাহ মাফ করাতে পারল না সে ধ্বংস হোক!’ তখন রাসূল সা: সম্মতি জানিয়ে বললেন, আমিন!’


 
লাইলাতুল কদর আল্লøাহর অতি প্রিয় রোজাদার বান্দাদের জন্য বিশেষ উপহার। তিনি বলেছেন, ‘রোজা আমর, আমিই তার প্রতিদান দেবো।’ এই প্রতিদানের পরিমাণ কী হবে, ধরন কেমন হবে, কেউ জানে না। দুনিয়ায় কী দেবেন, পরকালে কী দেবেন সবই অজ্ঞাত রেখেছেন। তবে একটি বিশেষ রাত উপহার দিয়ে তিনি বুঝিয়েছেন আখিরাতে তিনি কী পরিমাণ দেবেন! ধরে নিতে পারি এটি রোজার দুনিয়াতে ঘোষিত পুরস্কার।

সাওয়াব হলো মুমিনের সম্পদ। পরকালে আল্লøাহর কাছে মর্যাদা বৃদ্ধি ও মানব সেবার হাতিয়ার। এই সেবা চলবে হাশরের মাঠে। পুলসিরাতের পাড়ে। জাহান্নাম ওয়াজিব হওয়া বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে। কারণ পরকালে যার যত বেশি পুণ্য থাকবে তার মর্যাদা তত বেশি হবে। সাওয়াবের পরিমাণ অনুপাতে সম্মাননা দেয়া হবে ব্যক্তিকে।


 
আসুন, তাওবা করুন, মুক্তি চান। আমাদের প্রভু বড় দয়াবান! আমাদের পাপরাশি উচ্চতায় পর্বতকে ছাড়িয়ে গেলেও তাঁর কাছে তা অণু তুল্যও নয়! তিনি সব ক্ষমা করে রহমতে শে^ত চাদরে জড়িয়ে নিতে সদা প্রস্তুত! আমরা তো তাঁরই সৃষ্টি। পাপ করে তো তাঁর কাছে আসব। তিনি ছাড়া পাপ মোচনকারী আর কে আছে! শয়তানের জালে আর কত বন্দী থাকবেন। ফিরে আসুন! অহঙ্কারের বীজ হৃদয় থেকে উপড়ে ফেলুন! দিলটা মোমের মতো নরম করে দিন! লাইলাতুল কদর আপনার ভাগ্যেও জুটবে। আপনিও সফল হবেন সাচ্চা মুমিনের মতো।


   আরও সংবাদ