ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ মে, ২০২২ ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৪০ বার
‘রাগ’ মানব জীবনের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য, রাগহীন মানুষ নেই বললেই চলে। তবে মানুষ ভেদে রাগের ধরন, পরিমাপ ভিন্ন। কারো রাগ বেশি কারো কম। রাগ বেশি আর কম ব্যক্তির ত্রুটি নয়। কিন্তু সেই রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে জীবনকে সুন্দরভাবে যাপন করাটাই ব্যক্তির সার্থকতা।
অতিরিক্ত রাগ সবসময়ই ক্ষতিকর। ইসলাম রাগ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেয়। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সা:কে বললেন, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, ‘রাগ করো না।’ সে ব্যক্তি কয়েকবার এ কথা বলল, রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘রাগ করো না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৬১১৬)
ইসলাম রাগকে একটি ত্রুটি উল্লেখ করে তাকে দমন করতে বলেছে। অতিরিক্ত রাগ মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ করে, মানুষ গুরুত্বপূর্ণ কাজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে অতিরিক্ত রাগের কারণে, তাই রাগ দমন ও নিয়ন্ত্রণের কিছু পদ্ধতিও ইসলামী শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা। দুই ব্যক্তি নবী করিম সা:-এর কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো- আমি আল্লাহর কাছে অভিশপ্ত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস-৬৮১২) রাগের সময় কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।
মানুষভেদে রাগের বহিঃপ্রকাশ ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ হয়তো অল্প কারণে রেগে যায়, আবার কারো রাগ গভীর কিছুর কারণে হয়ে থাকে। রাগ যেমনি বা যতটুকুই হোক না কেন, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যাবশ্যকীয়... হুট করে রাগের সময় যা আসে তা না বলে অর্থাৎ কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে চুপ থাকা উচিত, এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-৪৭৮৪)
তাৎক্ষণাত রাগ নিয়ন্ত্রণের আরেকটি কাজ অজুু, ব্যক্তির রাগের আগুনে অজুুর পানি বেশ কার্যকর, নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয় পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস -৪৭৮৬)
রাগ কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না, রাগকে বলা হয় বারুদ, যা একটু আগুনের ছোঁয়ায় ছাই করে দেয় সব কিছু। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ক্ষমার মানসিকতা রাখা প্রয়োজন। ‘রাগ’ যেমন জীবন ধ্বংস করে ঠিক তেমনি ‘ক্ষমা’ জীবনকে সুন্দর করে। এ প্রসঙ্গে সূরা আল ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াতটিতে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সব অবস্থায়ই অর্থ-সম্পদ ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ দমন করে ও অন্যের দোষ-ক্রটি মাফ করে দেয়। এ ধরনের সৎলোকদের আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবাসেন। ’
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘এবং রাগ দমনকারীরা ও মানুষকে ক্ষমাকারীরা। আল্লাহ অনুগ্রহকারীকে ভালোবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত -১৩৪)
আর কিছু না পারলেও অন্তত রাগ নিয়ন্ত্রণে ‘চুপ’ থাকার কথা বলা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-৪৭৮৬))
একটু কষ্ট করে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ ও দমনের ফলে যে উপকার লাভ করবে তা কল্পনারও অতীত। কুরআন ও হাদিসে রাগ দমনের উপকারিতা বর্ণনায় এসেছে। রাগ দমনকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তুমি রাগ করবে না, তাহলে তোমার জন্য জান্নাত।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস-২১)
শারীরিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিকেই যে বীর বলা হয় তা কিন্তু নয়, রাগকে নিয়ন্ত্রণ অথবা রাগ দমনকারী ব্যক্তিই মূলত শক্তিশালী। এটা মানুষের কথা নয়, স্বয়ং রাসূল সা:-এর বাণী। হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অপরকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস-৬৮০৯)
ক্ষেত্র বিশেষ কিছু রাগ বা ক্ষোভকে সঠিক বলে রায় দিয়েছে ইসলাম। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জুলুম ও বৈষম্য দূর করা এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য অপরাধী ও জুলুমবাজদের মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে রাগ বৈধ। জাতীয়, ধর্মীয় ও মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনে রাগকে কাজে লাগাতে হবে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে অন্যায় দমন করতে গিয়ে অন্যায়কে যাতে প্রশ্রয় দেয়া না হয়।
আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা আমাদের সবাইকে খারাপ রাগ, ক্ষোভ থেকে হিফাজত করুক। জাজাকাল্লাহ খায়রান। শিক্ষার্থী