ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২২ ০৯:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৫ বার
ইসলামোফোবিয়া (ইসলামভীতি বা ইসলামবিদ্বেষ বা মুসলিম-বিরোধী মনোভাব) (ইংরেজি: Islamophobia বা anti-Muslim sentiment) হলো নিন্দার্থে বা ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত একটি রাজনৈতিক শব্দ যার অর্থ- ইসলামকে ভয় করা। এর দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাকেও বোঝানো হয়।
চলতি বছরে জাতিসঙ্ঘ (ইউএন) ১৫ মার্চকে ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে মনোনীত করেছে।
ইসলামোফোবিয়া ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রোফাইলিং, গো-রক্ষকদের গণপিটুনিতে হত্যা, বৈষম্যমূলক আইন, হিজাব পরা মহিলাদের ওপর আক্রমণ, মিনার নিষিদ্ধ, ইসলামী আইকনের অপব্যবহার এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলামকে যুক্ত করার এবং সমতুল্য করার প্রচেষ্টার দিকে পরিচালিত করেছে।
‘ইসলামফোবিয়া একটি বাস্তবতা’ ‘এ বছর জাতিসঙ্ঘ অবশেষে বিশ্বের মুখোমুখি হওয়া গুরুতর এ চ্যালেঞ্জকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যার উদ্দেশ্য- ধর্মীয় প্রতীক ও অনুশীলনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং নিয়মতান্ত্রিক ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য হ্রাস করা। পরবর্তীকালে চ্যালেঞ্জ এ যুগান্তকারী প্রস্তাবের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা’।
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পাঞ্জাবি, টুপি, দাড়িসহ ধর্মীয় আইকনগুলোকে অপব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন পোস্টার, গণমাধ্যম, চলচিত্র-নাটক ও নানা আয়নায়। এ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মাণ এটি ইসলামোফোবিয়ার অংশ এবং বাংলাদেশী ভার্সন।
বাংলাদেশে ইসলামের ধর্মীয় প্রতীক, পোশাক, রীতিনীতি পালন করতে গিয়ে হেনেস্তার শিকার হওয়ার উদাহরণ প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে এবং এর প্রবনতা বেড়েই চলছে। তার সাথে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ধর্মীয় নেতৃত্বের তালিকা তৈরি করে তথাকথিত গণকমিশনের ধর্মব্যবসায়ী ট্যাগ দিয়ে দেশদ্রোহী অপরাধীর খেতাব দেয়া।
ইসলামের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় ছড়িয়ে দেয়ার সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে আলেম সমাজ। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের অন্যতম মাধ্যম ওয়াজ মাহফিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলার শহরে, গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় অবস্থিত মসজিদ, মাদরাসা কিংবা দ্বীনদরদী মুসলিম ভাইদের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন বেশ পরিচিত একটি চিত্র।
মাহফিলের নেতৃত্বে রয়েছে মাদরাসা, মসজিদ ও ওয়ায়েজিন বক্তারা। তারা সাধারণত মানুষকে অপরাধ প্রবণতা ও পাপাচার থেকে মুক্ত হওয়ার আহ্বান ছড়িয়ে দেন মাহফিলে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। মাহফিলকে বলা হয় জান্নাতের বাগান। মাহফিল থেকে কোথাও হামলা করা, বোমাবাজি করা, হত্যা লুণ্ঠন করা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয় না, এমনকি এসব করার নজিরও নেই।
সেই শান্তির ধর্মের আহ্বানকারী, অন্যার অবিচার প্রতিরোধের আহ্বানকারী, পাপাচার, অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে মুক্ত করার অনুরোধকারী ওয়ায়েজ মাওলানা বক্তাদের ধর্মব্যবসায়ী, অপরাধী, দূর্নীতিবাজ হিসেবে চিন্তিত করার প্রয়াস বাংলাদেশে ইসলামোফোবিয়ার নতুন মাত্রা।
প্রথমত, আলেম বা বক্তা সবাই দেশের নাগরিক। তাদের এ দেশে নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার রয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার দিক থেকে তাদেরও যে কোনো বক্তব্য দেয়ার অধিকার রয়েছে।
দ্বিতীয়ত, তারাও মানুষ। মানুষ ত্রুটির উর্ধ্বে নয়। তারা অপরাধ করলে রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় বিচার হবে। কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রকে চ্যাংলেঞ্জ করে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, তারা ধর্মের অপব্যবহার করলে দেশের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। গণকমিশনের নূন্যতম ইসলামী জ্ঞান নেই, ধর্মের অপব্যবহার কি করে বুঝবে এবং পর্যালোচনা করবে? রাষ্ট্র বা ধর্ম কেউই এ অধিকার না দিলে এ অনধিকার চর্চা কার স্বার্থে?
মাদরাসা সাধারণত ধর্মিক মুসলমানদের দানের অর্থে নিম্নবিত্ত নাগরিক সন্তানদের ও এতিম আসহায়দের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবহার হয়। খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থানের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয় এসব মাদরাসায় সাধারণ মানুষের অর্থে। এমন একহাজার মাদরাসার তালিকা প্রণয়ন, দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধান নেহায়েত ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। যেখানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ সেখানে অর্থই অপচয় বিলাসিতা। আর এসব জায়গায় দুর্নীতির গন্ধ খোঁজা ইসলামোফোবিয়ার অংশ।
ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে বাংলাদেশে একদল তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তৎপরতা বৈশ্বিক ইসলাম বিদ্বেষের বাংলাদেশী ভার্সন। তারা হাজার কোটি টাকা লোপাট দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ না করলেও স্ব-প্রনোদিত হয়ে ইসলামী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মাদরাসা-ওয়াজমাহফিল-বক্তাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা ফুটিয়ে তুলেছেন।
আগামীদিনে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলা করা। যদি এ বিষয় সবাই সচেতন না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে, তাহলে সংঘাতের পথে হাঁটবে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ও জাতিসঙ্ঘের ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলার বিষয়গুলো সামনে রেখে সরকার ও সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায়।