ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২২ ১০:১৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫০৮ বার
ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ। কলেমা পড়ে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, হজরত মোহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। এই ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ নর-নারীর ওপর নামাজ ফরজ। মৃত্যু পর্যন্ত কায়েম রাখতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘নামাজ কায়েম করো, জাকাত প্রদান করো এবং রাসূলের আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’(সূরা আন নূর, আয়াত-৫৬)
আমাদের অনেক মা বোনের নামাজের প্রতি অবহেলা রয়েছে। অবহেলা কাটিয়ে নামাজ পরিপূর্ণ গুরুত্বসহকারে অবশ্যই পড়তে হবে। শুধু নিজে পড়লে হবে না পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে পড়তে হবে। আপনার পরিবারের সব সদস্যকে নামাজি হিসেবে তৈরি করার জন্য কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে।
১. মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর কানে আজান দিতে হবে। দুনিয়াতে এসে প্রথমেই সে জানবে আল্লাহ মহান। আমাদেরকে প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে।
২. সপ্তম দিনে অর্থবোধক ইসলামী নাম রাখতে হবে। আকিকা দিতে হবে।
৩. মায়ের বুকের দুধ পূর্ণমাত্রায় খাওয়াতে হবে।
৪. কথা বলা শুরু করলেই তার সামনে ভালো কথা বলতে হবে। শিশু যা শুনবে তা-ই শিখবে।
৫. শিশুরা হচ্ছে কাদামাটির মতো। আপনার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই গড়তে পারবেন। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে কলিজার টুকরো।
৬. গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সব কাজই গর্ভস্থ শিশুর ওপর প্রভাব পড়ে। পেটে বাচ্চা আসার সাথে সাথেই একজন মায়ের দায়িত্ব বেড়ে যায়। এ জন্যই পেটে বাচ্চা থাকলে মাকে বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত, ধর্মীয় পুস্তক পড়তে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
৭. তিন-চার বছর হলেই শিশুকে ছোট ছোট সূরা, দোয়া কালাম শিখানোর চেষ্টা করতে হবে। আর এই কাজ মাকেই করতে হবে। সাত বছর হতে হতে শিশুর নামাজের দোয়া কালাম শিখা হয়ে যাবে। এটা হচ্ছে কোনো মক্তব মাদরাসা ছাড়া মায়ের ঘরোয়া শিক্ষা।
হজরত আমর ইবনে শুয়াইব রা: থেকে বর্ণিত- সাত বছর হলেই তোমাদের সন্তানদের সালাত আদায় করতে আদেশ করবে। (আবু দাউদ-৪৯৫)
৮. সাত বছর হলেই নামাজ পড়তে হবে। মানে মা তার সন্তানকে সাথে নিয়ে নামাজ পড়বেন। এতে সন্তান নামাজে অভ্যস্ত হবে।
ছোট বলে অবহেলা করা যাবে না। কারণ এখনই মা-বাবা সচেতন না হলে বা সন্তানের নামাজ শিখাতে উদাসীন হলে পরবর্তী সময়টা মা-বাবার জন্য কঠিন হবে। শিশুরা কাদামাটির মতো। এদেরকে যেভাবে ইচ্ছা গড়া যায়।
একজন শিশুর পূর্ণ বিকাশ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদানের ক্ষেত্র মাকে অবশ্য অবশ্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। ১০ বছর হলে যেন সে নিজ দায়িত্বে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারে তার জন্য এই সময়টুকুতে মাকেই পরিশ্রম করতে হবে।
‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহ ভিরুতার পরিণাম শুভ।’ (ত্বোয়াহ -১৩২)
মা যখন নামাজের সময় হলে সন্তান ও পরিবারের সবাইকে নামাজের জন্য ডাকবে মিষ্টি মধুর ভাষায় তখন ইনশাআল্লাহ সবাই নামাজ পড়তে আগ্রহী হবে, পড়বে। একটা পরিবারে যখন নামাজ কায়েম হবে তখন সমাজে সুবাতাস বইবে। ধীরে ধীরে সমাজ থেকে অনাচার কমে যাবে। ‘নিশ্চয়ই নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।মা-বোনেরা ফজরে উঠতে অলসতা করবেন না। যতই শরীর খারাপ হোক, কষ্ট করে উঠুন ছেলেমেয়েকে ডেকে তুলুন নামাজের জন্য। ওরা উঠতে চাইবে না। এ সময় ভুলেও রাগারাগি করবেন না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আস্তে করে ডাকুন। আদরমাখা স্বরে ডাকুন। দেখবেন আপনার মিষ্টি মধুর ব্যবহারে ইচ্ছা না থাকলেও উঠবে, উঠতে বাধ্য হবে। সংসারের কাজগুলো গুছিয়ে জোহরের নামাজ পড়তে গিয়ে অনেক সময় কাজা করে ফেলেন। নামাজের সময় হলেই পাক সাফ হয়ে আগে নামাজ পড়ে নেবেন। তারপর বাকি কাজ শেষ করে গোসল করবেন। আসর মাগরিবও পড়বেন সময় হলেই। আগে নামাজ পড়ে কাজ। ঘুমানোর আগে অবশ্যই এশার নামাজ পড়ে ঘুমাবেন।
পবিত্র কুরআনে এসেছে ‘হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামাজ কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া।’