ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

নফল রোজা কেন রাখব

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২২ মে, ২০২২ ১১:০৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৮৭ বার


নফল রোজা কেন রাখব

প্রত্যেক কাজের আগে-পিছে আনুষঙ্গিক কিছু কাজ থাকে যা মূল কর্মকে সংরক্ষণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও সহজ করে। কাজটি যত গুরুত্বপূর্ণ হয় তার পূর্বপ্রস্তুতি তত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে কাজটি বারবার করার দরকার হলে পূর্ব অভিজ্ঞতাকে অনেক সময় শাস্ত্র হিসেবে চর্চা করা হয়। বিষয়টি বৈষয়িক সব কর্মেই প্রায় ঘটে। ব্যতিক্রম নয় ইবাদত-বন্দেগিতেও। অজুর ফরজ মাজহাব বিবেচনায় চার, ছয়, সাত কিংবা ৯টির মতো হয়। সে যাই হোক, আগে-পরে কিন্তু সুনান, মুস্তাহাব্বাত অনেক আছে। উদ্দেশ্য ফরজগুলো যাতে ভালোভাবে আদায় হয়। কারণ ফরজে অসম্পূর্ণতা থাকলে অজু হবে না।

অজু নামাজের চাবি। সুতরাং চাবির দাঁত ভাঙা হলে বা তাতে অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হলে তালা খোলা যেমন মুশকিল; তেমনি ত্রুটিযুক্ত অজু নামক চাবি দিয়েও নামাজ আদায় মুশকিল বা অসম্ভব। শরিয়া পরিভাষায় হারাম। ঠিক একই কথা নামাজের বিষয়ে। পাঁচ ওয়াক্ত ফরজের আগে-পরে সুনান, মুস্তাহাব্বাত রয়েছে। আবার নামাজ পড়াকালীন সময়ে ভেতরে কতগুলো ফরজ আছে। তার আগে-পরে আবার সুনান, মুস্তাহাব্বাত রয়েছে। এতক্ষণের আলোচনায় হয়তো স্পষ্ট হয়েছে নফল রোজার প্রয়োজন কেন।
ইসলামের পঞ্চভিত্তির মূলত তিনটি সবার জন্য শর্তহীনভাবে প্রযোজ্য। ঈমান, নামাজ ও রোজা। বাকি দু’টি- হজ ও জাকাত শর্তসাপেক্ষ। মালের নিসাব পূর্ণ হলে বছরান্তে জাকাত আর শারীরিক, আর্থিক ও সওয়ারির ব্যবস্থা থাকলে জীবনে একবার হজ ফরজ হয়, যা সীমিত ব্যক্তিদের ইবাদত। কিন্তু ঈমান সবাইকে সর্বক্ষণ বুকে ধারণ করতে হয়। নামাজ দৈনিক পাঁচবার পড়তে হয়। আর রোজা প্রতি বছর একমাস করে রাখতে হয়। এটি মৌলিক ইবাদত। এ জন্য অপরাপর ইবাদতের মতো এর আগে-পরে নফল বা সুন্নাহ রোজা থাকারই কথা। নফল রোজাগুলোর মাধ্যমে বান্দার বছরব্যাপী ট্রেনিং বা প্রস্তুতি চলতে থাকে যাতে মাহে রমজানের রোজাগুলো ঠিকমতো রাখতে পারে। নতুবা রমজানের সিয়াম সাধন কষ্টকর হয়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যারা সারা বছর নফল রোজায় অভ্যস্ত নন তারা রমজানের শুরুতে যথেষ্ট কষ্ট অনুভব করেন; কিন্তু শেষ দিকে স্বাভাবিক হন। তাছাড়া সাপ্তাহিক (সোম ও মঙ্গলবারের) রোজা ও পাক্ষিক (প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের) রোজাগুলো নিয়মিত কেউ আদায় করলে শারীরিক উপকার যেমন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত; ধর্মীয়ভাবেও সেগুলোর মূল্যায়ন তেমন প্রশংসনীয়।
 
সপ্তাহে দু’দিন করে মাসে আট দিন আর ‘আইয়্যামে বিজ’-এর তিন দিন, মোট প্রতি মাসে ১১ দিন রোজা রাখলে পাকস্থলিজনিত রোগ-ব্যাধি না হওয়ারই কথা। প্রাক-ইসলাম যুগে ‘আরবের চিকিৎসক’ হিসেবে খ্যাত বিজ্ঞ হাকিম আল হারেস বিন কালদা আসসাকাফি (মৃত্যু-৬৩৫ সাল) পেটকে যাবতীয় রোগের ঘর বা প্রসূতি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আল মিদাতু বাইতুল আদওয়া’। অতএব পেট ঠিক তো সব ঠিক, বডি ফিট। কথায় আছে, উনা ভাতে দুনা বল, অতি ভাতে রসাতল।’ এ ছাড়াও রোজা কামভাব দমিয়ে রাখে। হাদিস শরিফে স্ত্রীর ভরণপোষণে অক্ষম ব্যক্তিকে বিয়ে নিরুৎসাহিত করে রোজায় উৎসাহিত করা হয়েছে। কেননা তা নিবীর্যকরণ পদ্ধতি (বোখারি-৫০৬৫) এক হাদিসে, পাকস্থলি আর যৌনাঙ্গের পবিত্রতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। (তানবিহুল খাওয়াতির, দ্বিতীয় খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা) কারণ এ দু’টি অঙ্গ পাপের উৎস। রোজা দু’টিকেই নিয়ন্ত্রণ করে। এই দু’টি অঙ্গ নিয়ন্ত্রিত হলে কবিরা গুনাহ অনেকাংশে কমে যায়।

আরেক হাদিসে রোজাকে শরীরের জাকাত বলা হয়েছে। (ইবনে মাজাহ) অর্থাৎ স্থূলতা ও ওজন কমানোর শ্রেষ্ঠ ফর্মুলা সিয়াম সাধন। আর এ কথা সবাই জানি ভারী বা রুগ্ণ শরীরে ইবাদত করা খুবই মুশকিল। অভুক্ত-হাভাতে জনতার দুঃখ-দুর্ভোগ অনুধাবনের বিষয়টি তো আছেই। তদুপরি মানুষ যাতে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়, হাশরের মাঠে উম্মতে মুহাম্মদির শ্রেষ্ঠত্ব যাতে রোজার মাধ্যমেও বজায় থাকে সে জন্য সওয়াব ও ফজিলতের বহু হাদিস নবীজী সা: বলে গেছেন। এক হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার জন্য একটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা তার মুখমণ্ডল দোজখের আগুন থেকে ৭০০ বছরের রাস্তা দূরে রাখবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম) রমজানের প্রস্তুতি যাতে ভালোভাবে হয় সে জন্য শাবান মাসে তিনি রোজার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। আর এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় যত ঘনিয়ে আসে তার প্রস্তুতি তত বেশি করে নেয়া হয়।


   আরও সংবাদ