ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ইসলামে শিশু-কিশোর পরিচর্যার গুরুত্ব

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৪ মে, ২০২২ ১২:০২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬৯ বার


ইসলামে শিশু-কিশোর পরিচর্যার গুরুত্ব

আল্লাহ তায়ালার অগণিত নিয়ামতের মধ্যে অন্যতম বিশেষ নিয়ামত হচ্ছে আদর্শ সন্তান। যা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের ফল। আমরা জানি আল্লাহ তায়ালা চাইলেই কেবলমাত্র কোনো ব্যক্তি সন্তান লাভ করতে পারেন। তাঁর অনুগ্রহ ব্যতীত কেউ সন্তানের আশা পোষণ করতে পারে না। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের এ যুগল (দম্পতি) থেকেই তিনি তোমাদের পুত্র-পৌত্রাদি সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাদের উত্তম রিজিক দান করেছেন। এর পরেও কি তারা বাতিলের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর নিয়ামাত অস্বীকার করবে? (সূরা নাহল-৭২)


 
পৃথিবীর বুকে এমন অসংখ্য মানুষ রয়েছে যাদের ধনসম্পদের অভাব না থাকলেও একটি সন্তান না থাকার কারণে তাদের পারিবারিক জীবনে প্রশান্তি নেই। নেই বংশ বৃদ্ধির অবলম্বন। তাদের হাজারো চেষ্টা সাধনা এবং কামনা বাসনা থাকলেও সন্তানের জনক বা জননী হতে পারেনি তারা। আবার এমনও রয়েছে যাদের জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সম্পদ না থাকলেও তারা বহুসংখ্যক সন্তানের জনক-জননী। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই। তিনি যা ইচ্ছা তা সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দান করেন অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ এবং ক্ষমতাশীল।’ (সূরা শুরা-৪৯-৫০)
আমরা কেমন সন্তানের আশা করব সেটিও আল্লাহ তায়ালা শিখিয়ে দিয়েছেন। দোয়া করতে হবে সুসন্তান লাভের- ‘হে আমাদের রব! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী এবং সন্তান-সন্ততি দান করো যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত-৭৪) ‘হে আমার রব! আমাকে তোমার নিকট হতে সৎ বংশধর দান করো।’ (সূরা আলে ইমরান-৩৮)


 
সন্তান আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিশেষ নিয়ামত। তাই এ সন্তান যদি হয় আদর্শ এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী তবে তা হবে পিতা-মাতার জন্য দুনিয়া এবং আখিরাতে কল্যাণের মাধ্যম। আর যদি সন্তান হয় অসৎ চরিত্রের অধিকারী তাহলে এটি হবে অকল্যাণের বিষধর সাপের মতো। সৎসন্তানের সুফল মৃত্যুর পরেও ভোগ করা যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিন প্রকার আমলের ফলাফল সে ভোগ করে। তার মধ্যে একটি হলো, এমন সচ্চরিত্রবান সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ তাই আমাদের উচিত সন্তানকে সৎ এবং চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলা।

বিশ্বমানবতার মহান শিক্ষক নবী সা: শিশুদেরকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। হাদিসে এসেছে, একবার রাসূল সা:-এর কানে হুসাইন রা:-এর কান্নার শব্দ এলো। এতে তিনি ভীষণভাবে ব্যথিত হলেন এবং হজরত ফাতিমা রা:-কে ডেকে বললেন, তুমি কি জানো না, তার কান্না আমাকে কষ্ট দেয়? হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত এক হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল সা: শিশু-কিশোরদের নিকট দিয়ে যাতায়াতের সময় তাদের সালাম করতেন। অপর এক হাদিস থেকে আরো জানা যায়, তিনি শিশুদের কান্না শুনতে পেলে নামাজ সংক্ষিপ্ত করে দিতেন এবং বলতেন, আমি চাই না যে, তার মায়ের কষ্ট হোক। তিনি আরো বলেন, ‘যারা বড়দের সম্মান করে না এবং ছোটদের আদর করে না তারা আমার উম্মাতের দলভুক্ত নয়।’


 
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার। আদর্শিক পরিবার, দেশ ও জাতি গঠন করতে হলে শিশুদের চরিত্রগঠনে মনোযোগী হতে হবে। রাসূল সা: বলেছেন, ‘কারো সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে যেন তার জন্য সুন্দর নাম রাখে এবং উত্তমরূপে তাকে আদব কায়দা, শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়।’ ‘প্রতিটি শিশুই ফিতরাত তথা ইসলাম গ্রহণের যোগ্যতাসহ জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানায়।’ রাসূল সা: বলেছেন, ‘পিত-মাতা সন্তানকে ভালো আদব কায়দা ও স্বভাবচরিত্র শিক্ষাদান অপেক্ষা উত্তম কোনো দান দিতে পারে না।’

শিশুদের নিরাপত্তা বিধান এবং তাদের সার্বিক বিকাশ সাধনে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। শান্তি বা যুদ্ধ যে কোনো অবস্থায় ইসলাম শিশুদের নিরাপত্তা প্রদানে গুরুত্বারোপ করেছে। পিতা-মাতা কোনো অবস্থাতেই সন্তানকে হত্যা করতে পারে না। সন্তানের কোনো প্রকার ক্ষতি হয় এরকম কোনো কাজ পিতা-মাতাসহ কারো জন্যই ইসলামসম্মত নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। তাদের আমিই রিজিক দেই এবং তোমাদেরও। তাদের হত্যা করা মহাপাপ। (সূরা বনি ইসরাইল-৩১) ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই জাহান্নাম থেকে রক্ষা করো যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাবের ফিরিশতাগণ! তারা আল্লাহ তায়ালা যাআদেশ করেন, তা অমান্য করেন না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করেন। (সূরা আত তাহরিম-৬)


 
প্রতিটি মানুষ তার পরিবার রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল। তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের ব্যাপারে দায়িত্বশীলা। সে এসবের রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। রাসূল সা: বলেছেন, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

প্রকৃতপক্ষে মানুষের শান্তি, স্বস্তি এবং নিরাপত্তার জন্য পরিবার একটি দুর্গ। এ পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে সন্তানকে আদর্শবান করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তাই সন্তান পরিপালনে আমাদের আরো যতœশীল হওয়া জরুরি।

সন্তানের চরিত্রগঠনে সবচেয়ে বেশি এবং গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবকের গুরু দায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনি হচ্ছেন মা। মায়ের আদর সোহাগ এবং পরম ভালোবাসায় বেড়ে ওঠে শিশু। শিশুর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব ক্ষেত্রেই মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি। বলা হয়, ‘মায়ের কোলই হচ্ছে শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্র।’ তাই যে মায়ের আদর্শে গড়ে উঠবে সন্তান সে মাকে কেমন আদর্শ ও চরিত্রবান হওয়া দরকার! আজকে অনেকেই মেয়েদের শিক্ষা অর্জনের ব্যাপারে নাক ছিটকান। মেয়েরা যদি আদর্শ এবং চরিত্রবান হিসেবে গড়ে ওঠে তাহলে তারা জাতিগঠনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখতে পারবেন। নেপোলিয়ন বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।’


 
তাই শিশুদের লালন পালনে আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমাদের নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে আদর্শ ও চরিত্রবান করে। নইলে ঘোর অমানিশায় হারিয়ে ফেলব আমাদের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য।


   আরও সংবাদ