ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২২ ১০:১৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৭৩ বার


অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা

আগুন আমাদের নিত্যকার প্রয়োজনীয় বস্তু। আগুন ছাড়া আমাদের জীবন প্রায় নিষ্ক্রিয়ই বলা চলে। প্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতি খাবার দাবার তৈরিসহ শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে, বন্য জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষাসহ নানা প্রয়োজনে আগুন ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানেও কলকারখানায় আগুনের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার লক্ষণীয়। জীবনের অপরিহার্য বস্তু এই আগুন কখনো কখনো আমাদের জীবনে সীমাহীন বিপর্যয় আর দুর্ভোগ ডেকে আনে। জনপদ থেকে জনপদে আগুন তার ভয়াল তাণ্ডব ছড়িয়ে জনমনে অন্তহীন ভয় ও আতঙ্ক বিস্তার করে। সীমাহীন উৎকণ্ঠা আর স্বজন হারানোর অব্যক্ত কষ্টের কাব্যগাথা সৃষ্টি করে এই আগুন।

আগুন তার দানবীয় রূপ ধারণ করার ক্ষেত্রে অনেক সময় আমাদের অবহেলা আর গাফিলতি কারণ হিসেবে দেখা দেয়। বিশেষত রাতের বেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে। কারণ, রাতের বেলায় আগুন, বিদ্যুৎ এগুলো বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই রাতের বেলায় আগুন ব্যবহারে সতর্কতার বিকল্প নেই। রাসূলুল্লাহ সা: এ বিষয়ে তার প্রিয় উম্মতকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। মহানবী সা: রাতে ঘুমানোর আগে এমন জিনিসগুলোকে সতর্কতার সাথে সামলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যেগুলো রাতের বেলায় অগ্নিদুর্ঘটনার সূত্রপাত ঘটাতে পারে। জাবের রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা দরজা বন্ধ করবে, পানির পাত্রের মুখ বাঁধবে, পাত্রগুলো উল্টে রাখবে কিংবা পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে, বাতি নিভিয়ে দেবে। কেননা, শয়তান বন্ধ দুয়ার খুলতে পারে না, মশকের গিঁট খুলতে পারে না, পাত্রের মুখও অনাবৃত করতে পারে না। (বাতি নিভিয়ে দেবে) কেননা, দুষ্ট ইঁদুরগুলো লোকদের ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়’ (তিরমিজি-১৮১৯)।

রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নাহর অনুসরণে রাত্রিকালীন অনেক দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ হওয়া সহজ হয়ে যায়। বর্তমান যুগেও রাতে ঘুমানোর আগে আমাদের ঘরের যেসব জিনিস রাতের বেলা বিপদের কারণ হতে পারে, সেগুলো সামলে ঘুমানো উচিত।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপুতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাদেরকে নতুনভাবে অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনাগুলো নিয়ে ভাবার উপলক্ষ তৈরি করে দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ সেখানে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক শ’। পুরো দেশ এ ভয়াল অগ্নিকাণ্ডে শোকাহত, স্তব্ধ। যারা চলে গেছেন তাদের জন্য আমাদের দোয়া করার বিকল্প নেই। শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর উচিত আল্লাহ তায়ালার ফায়সালায় সন্তুষ্ট থেকে সবরের পরিচয় দেয়া। কারণ, আল্লাহ সবরকারীদের ভালোবাসেন। তিনি সবরকারীদের সাথে আছেন মর্মে কুরআনে নির্দেশনা এসেছে।


 
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত’ (সূরা বাকারা: ১৫৫-১৫৭)।

তাই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ভেঙে না পড়ে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে এ ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত। শোকাহত পরিবারের সদস্যরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর দু’টি হাদিসকে সান্ত্বনা হিসেবে গ্রহণ করে মনে প্রশান্তি খুঁজে পেতে পারেন।


 
এক. আবদুল্লাহ ইবনে জাবের তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর বাবা জাবের রা:কে তার রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তার কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। তখন মহানবী সা: বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ...’ (আবু দাউদ-৩১১১)।
দুই. জাবের বিন আতিক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সা: তাকে দেখতে আসেন। জাবের রা:-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ’ (ইবনে মাজাহ-২৮০৩)।

সীতাকুণ্ডের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আরো কয়েকটি অগ্নিদুর্ঘটনার সংবাদ গণমাধ্যমে এসেছে। পাবনা, ঢাকার মধ্যবাড্ডা, এরপর পুরান ঢাকায়। চারদিকে বিপর্যয় আর বিপর্যয়। অগ্নিদুর্ঘটনাসহ সব ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টির মৌলিক কারণ আমাদের কৃতকর্ম। হেন অন্যায় অপরাধ আর পাপাচার নেই যা আমাদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় আমাদের পাপাচার পরিত্যাগ করে আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার বিকল্প নেই।


 
পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা রুম-৪১)।

জনপদজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিপর্যয় দূরীকরণে আমাদের ঈমান ও তাকওয়ার পথে অগ্রগামী হওয়া অবশ্য কর্তব্য। এতে করে আবার এ জনপদে আকাশ-জমিনের বরকতের দ্বার খুলে যাবে। রহমতের অমীয় ফল্গুধারায় সিক্ত হবে এ জমিন।
পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নিয়ামতসমূহ উন্মুুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদের পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে’ (সূরা আরাফ-৯৬)।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় যারা মারা গেছেন, তারাও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। মহান আল্লাহ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করুন এবং তাদের উত্তম প্রতিদান দিন। যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুস্থতা ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ দান করুন।


   আরও সংবাদ