কবির হোসেন
প্রকাশ: ১১ অগাস্ট, ২০২২ ১১:৫১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০১ বার
সময়ের সমষ্টিই মানুষের জীবন। সময় আল্লাহর দান। মানবজীবনে এই সময়ের গুরুত্ব অনেক। সময়ের মূল্যায়ন করা একজন মোমিনের জন্য অপরিহার্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সময়ের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা আসর, আয়াত: ১-৩)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হলো, সৌভাগ্যবান কারা? তিনি বললেন, সৌভাগ্যবান তারা, যারা দীর্ঘায়ু লাভ করেছে এবং তা নেক আমলের মাধ্যমে অতিবাহিত করেছে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, দুর্ভাগা কারা? তিনি বললেন, দুর্ভাগা তারা যারা দীর্ঘায়ু পেয়েছে এবং তা বদ আমলে কাটিয়েছে বা আমলবিহীন অতিবাহিত করেছে। (তিরমিজি: ২৩২৯, মুসনাদে আহমাদ: ১৭৭৩৪, হিলইয়াতুল আউলিয়া ৬:১১১)।
মানুষকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হিসাব দিতে হবে। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘রোজ হাশরে শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি মানুষ পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া এক কদমও নড়তে পারবে না। তার জীবনকাল কী লক্ষ্যে কাটিয়েছে? যৌবনকাল কী কাজে ব্যয় করেছে? কোন পথে আয় করেছে? কী কাজে ব্যয় করেছে? জ্ঞান অনুযায়ী কর্ম সম্পাদন করেছে কি না?’ (তিরমিজি ৪:৬১২/২৪১৬)। কিন্তু মানুষ মোহের ঘোরে আচ্ছন্ন থাকে।
প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসকে তার বিপরীত পাঁচটি জিনিসের পূর্বে মূল্যায়ন করো ও তার সদ্ব্যবহার করো। তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, সচ্ছলতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে, অবসরকে ব্যস্ততার পূর্বে, জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।’ (বায়হাকি, শোআবুল ইমান: ১০২৪৮, মুসনাদে হাকিম: ৭৮৪৬, আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)।
উদাসীনতায় সময় পার করা। সময়ের প্রতি অবহেলা করা। উভয়টিই ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ সাবধান করে দিয়ে কোরআনুল কারিমে বলেন: ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদিগকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা সমাধিসমূহ দেখতে পাও (তোমাদের মৃত্যু হয়)। এটি কখনো সংগত নয়! অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলি, এটি মোটেই সমীচিন নয়; তা তোমরা অনতিবিলম্বে জানতে পারবে। না, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা মোহগ্রস্ত হতে না। তোমরা (সময়ের প্রতি উদাসীন কর্মে অবহেলাকারীরা) অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে (তাতে প্রবেশ করবে)। পুনশ্চ! অবশ্যই অতি অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম চাক্ষুষ দেখে (তাতে প্রবেশ করে তার শাস্তি ভোগ করে) প্রত্যয় লাভ করবে। অতঃপর অবশ্যই সেদিন তোমাদিগকে প্রদত্ত সব নিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।’ (সূরা ১০২ তাকাছুর, আয়াত: ১-৮)।
আল্লাহ তাআলা চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেছেন সময়ের হিসাবের নিমিত্তেই। কোরআনের বর্ণনা, ‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তাদের মনজিল নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ (সুরা: ১০ ইউনুস, আয়াত: ৫)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, ইহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চন্দ্রের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মনজিল; অবশেষে সেটি শুষ্ক বক্র পুরোনো খর্জুর শাখার আকার ধারণ করে।’ (সুরা: ৩৬ ইয়াসিন, আয়াত: ৩৮-৩৯)।
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী-পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস ১২টি।’ (সুরা: ৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬)।
সুতরাং সময়কে মূল্যায়ন করে প্রতিটি মোমিনের জীবন পরিচালনা করাই উত্তম পথ। আল্লাহ আমাদের সময়ের মূল্যায়ন করার তাওফিক দিন। আমিন
লেখক: সাংবাদিক