ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

মৃত্যুচিন্তা বদলে দেয় জীবন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১২ অগাস্ট, ২০২২ ১১:১২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৯১ বার


মৃত্যুচিন্তা বদলে দেয় জীবন

মৃত্যু নিয়ে আমি কোনো দুশ্চিন্তা করব না, আমার মৃতদেহের কি হবে সেটা নিয়ে কোনো অযথা আগ্রহ দেখাব না। আমি জানি আমার মুসলিম ভাইয়েরা করণীয় সবকিছুই যথাযথভাবে করবে।

তারা প্রথমে আমার পরনের পোশাক খুলে আমাকে বিবস্ত্র করবে, আমাকে গোসল করাবে, (তারপর) আমাকে কাফন পড়াবে, আমাকে আমার বাসগৃহ থেকে বের করবে, আমাকে নিয়ে তারা আমার নতুন বাসগৃহের (কবর) দিকে রওনা হবে। আমাকে বিদায় জানাতে বহু মানুষের সমাগম হবে, অনেক মানুষ আমাকে দাফন দেবার জন্য তাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম কিংবা সভার সময়সূচি বাতিল করবে।

আফসোস, অধিকাংশ মানুষ এর পরের দিনগুলোতে আমার এই উপদেশগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবে না।

যেসব জিনিসের অধিকার হারাব—
আমার ব্যক্তিগত জিনিসের ওপর আমি অধিকার হারাব, আমার চাবির গোছাগুলো, আমার বইপত্র, আমার ব্যাগ, আমার জুতোগুলো, হয়তো আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে উপকৃত করার জন্য আমার ব্যবহারের জিনিসপত্র দান করে দেবার বিষয়ে একমত হবে।

এ বিষয়ে তোমরা নিশ্চিত থেক যে, এই দুনিয়া তোমার জন্য দুঃখিত হবে না, অপেক্ষাও করবে না, এই দুনিয়ার ছুটে চলা এক মুহূর্তের জন্যও থেমে যাবে না, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা ব্যবসাবাণিজ্য সবকিছু চলতে থাকবে। আমার দায়িত্ব, কাজ অন্য কেউ সম্পাদন করা শুরু করবে। আমার ধনসম্পদ বিধিসম্মতভাবে আমার ওয়ারিশদের হাতে চলে যাবে, অথচ এর মধ্যে এই সম্পদের জন্য আমার হিসাব-নিকাশ আরম্ভ হয়ে যাবে; ছোট এবং বড়— অনুপরিমাণ এবং কিয়দংশ পরিমাণ, সবকিছুর হিসাব।

আমার মৃত্যুর পর প্রথম যা হারাতে হবে, তা আমার নাম! কেননা, যখন আমি মৃত্যুবরণ করব, তারা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলবে, কোথায় ‘লাশ’? কেউ আমাকে আমার নাম ধরে সম্বোধন করবে না, যখন তারা আমার জন্য জানাজার নামাজ আদায় করবে, বলবে, ‘জানাজা’ নিয়ে আস। তারা আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করবে না। আর যখন তারা দাফন শুরু করবে বলবে, মৃতদেহকে কাছে আন, তারা আমার নাম ধরে ডাকবে না!

এ জন্যই দুনিয়ায় আমার বংশপরিচয়, আমার গোত্র পরিচয়, আমার পদমযার্দা, এবং আমার খ্যাতি কোনো কিছুই আমাকে যেন ধোঁকায় না ফেলে, এই দুনিয়ার জীবন কতই না তুচ্ছ, আর যা কিছু সামনে আসছে তা কতই না গুরুতর বিপজ্জনক।

অতএব, শোন, তোমরা যারা এখনো জীবিত আছো, জেনে রাখ, তোমার মৃত্যুর পর তোমার জন্য তিনভাবে দুঃখ করা হবে,

১. যারা তোমাকে বাহ্যিকভাবে চিনত, তারা তোমাকে বলবে হতভাগা।
২. তোমার বন্ধুরা বড় জোর তোমার জন্য কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকদিন দুঃখ করবে। তারপর তারা আবার গল্পগুজব বা হাসিঠাট্টাতে মেতে উঠবে।
৩. যারা খুব গভীরভাবে দুঃখিত হবে, তারা তোমার পরিবারের মানুষ, তারা এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, এক মাস, দুই মাস কিংবা বড় জোর এক বছর দুঃখ করবে। এরপর, তারা তোমাকে স্মৃতির মণিকোঠায় যত্ন করে রেখে দেবে। মানুষের মধ্যে তোমাকে নিয়ে গল্প শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর তোমার জীবনের নতুন গল্প শুরু হবে। আর তা হবে পরকালের জীবনের বাস্তবতা। তোমার থেকে নিঃশেষ হবে তোমার
১. সৌন্দর্য, ২. ধনসম্পদ, ৩. সুস্বাস্থ্য, ৪. সন্তান-সন্ততি, ৫. বসতবাড়ি, ৬. প্রাসাদসমূহ ও ৭. জীবনসঙ্গী। তোমার কাছে তোমার ভালো অথবা মন্দ আমল ব্যতীত আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। শুরু হবে তোমার নতুন জীবনের বাস্তবতা। আর সে জীবনের প্রশ্ন হবে— তুমি কবর আর পরকালের জীবনের জন্য এখন কি প্রস্তুত করে এনেছ?

বস্তুত, এই জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে তোমাকে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন, এজন্য তুমি যত্নবান হও—

১. ফরজ ইবাদত
২. নফল ইবাদত
৩. গোপন সদকা
৪. ভালো কাজ
৫. রাতের নামাজের প্রতি। যেন তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারো।

এই লেখাটির মাধ্যমে তুমি মানুষকে উপদেশ দিতে পারো। কারণ তুমি এখনো জীবিত আছো। এর ফলাফল আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি কিয়ামত দিবসে মিজানের পাল্লায় দেখতে পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর স্মরণ করিয়ে দাও, নিশ্চয়ই এই স্মরণ মুমিনদের জন্য উপকারী।’

তুমি কি জান, কেন মৃতব্যক্তিরা সদকা প্রদানের আকাঙ্ক্ষা করবে, যদি আর একবার দুনিয়ার জীবনে ফিরতে পারত। আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার রব, যদি তুমি আমাকে আর একটু সুযোগ দিতে দুনিয়ার জীবনে ফিরে যাবার, তাহলে আমি অবশ্যই সদকা প্রদান করতাম’

তারা বলবে না, উমরা পালন করতাম। অথবা সালাত আদায় করতাম অথবা রোজা রাখতাম। আলেমরা বলেন, ‘মৃতব্যক্তিরা সদকার কথা বলবে, কারণ তারা সদকা প্রদানের ফলাফল তাদের মৃত্যুর পর দেখতে পাবে।

আর গুরুত্ববহ এই সদকার কাজটি তুমি এই কথাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে মাত্র ২ মিনিট সময় ব্যয় করে করতে পারো, যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় এর মাধ্যমে মানুষকে উপদেশ প্রদান করা। কারণ, উত্তম কথা হলো এক ধরনের সদকা।


   আরও সংবাদ