ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২৬ বার
ইহসান: মুমিনের অলঙ্কার
ইহসান আরবি পরিভাষা। এর বাংলা প্রতিশব্দ কর্মের বিশুদ্ধতা, একনিষ্ঠতা, দয়া করা, সৎকর্ম ইত্যাদি। ইহসান হলো স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি মানুষের যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে, সেগুলো সুন্দর ও উত্তমরূপে পালন করা।
মানবদেহ যেমন বাহারি অলঙ্কারে সুশোভিত হয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, তেমনি মুমিন মানস ইহসানের অলঙ্কার মাথায় নিয়ে পৃথিবীতে অনন্য মর্যাদায় আসীন হয়। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ইহসান করো। কেননা আল্লাহ ইহসানকারীদের ভালোবাসেন’ (সূরা বাকারা-১৯৫)।
তাকওয়ার সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে ইহসান। আল্লাহ তায়ালা ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর বিধান মতে জীবনের সব কাজ সুসম্পন্ন করা, কাউকে তার প্রাপ্য থেকে বেশি দেয়া কিন্তু তার থেকে নেয়ার সময় কিছু ছাড় দেয়া এবং লোভ, ক্রোধ, হিংসা-বিদ্বেষ, গিবত, অপবাদ, মিথ্যা, অহঙ্কার ইত্যাদি মন্দ স্বভাব থেকে পবিত্র হয়ে ইখলাস, আমানতদারিতা, বিনয়-নম্রতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি উত্তম চরিত্র দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করাই হলো ইহসানের মূল কথা।
আমলের বাহ্যিক সব শর্ত ও নিয়মাবলি রক্ষা করা (যেমন- নামাজে কেরাত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি সঠিকভাবে আদায় করা), নিয়ত বিশুদ্ধ করা, অন্তরে খুশু জাগ্রত হওয়া, অঙ্গগুলোর খুজু থাকা, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমল করা হলো ইহসানের শর্ত।
মূলত ইহসান মহান আল্লাহ তায়ালার একটি গুণ। যেমন- আল কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনি যেসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন, তার প্রত্যেকটিকে করেছেন ইহসানমণ্ডিত’ (সূরা সাজদা-৭)।
ইহসান নবী-রাসূলদেরও এক উল্লেখযোগ্য গুণ। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে তাদেরকে মুহসিনিন নামে অভিহিত করেছেন।
হাদিসে জিবরাইলে রাসূলুল্লাহ সা: ইহসানের দু’টি পন্থার কথা বলেছেন। এক. বান্দা এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন সে আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছে। বান্দার মধ্যে যখন এমন অনুভূতি সৃষ্টি হবে তখন সে অন্যায় কাজ বর্জন করতে পারবে। দুই. আর যদি বান্দা আল্লাহকে দেখতে না পায়, তবে অবশ্যই বান্দার মধ্যে এমন অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া যে, আল্লাহ তাকে দেখতে পাচ্ছেন। তাহলেই তার ইবাদতে কোনো ত্রুটি থাকবে না।
শুধু ব্যক্তিগত ইবাদতেই নয়, খাঁটি মুমিন ব্যক্তি সামাজিক জীবনের সব কর্তব্য ইহসানের সাথে পালন করে থাকেন।
শাদ্দাদ ইবনে আওস রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সব কিছুর ওপর ইহসানকে অবধারিত করেছেন। অতএব তোমরা (হত্যার উপযুক্ত কাউকে) হত্যা করলে সুন্দরভাবে হত্যা করো এবং ( কোনো পশু) জবাই করলে সুন্দরভাবে জবাই করো। জবাইকারী যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং জবাইয়ের পশুকে শান্তি দেয়’ (সহিহ মুসলিম)।
মুহসিন হওয়া একজন মুমিনের জীবনের চাওয়া-পাওয়া হওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মুহসিন ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। আমীন।