ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:৫৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২৪ বার
এই পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। প্রত্যেক মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তার পরও এ ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার যেন শেষ নেই। সবাই চায় একটি অর্থপূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত জীবন। তবে এ পৃথিবীর সাফল্যের সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। কারো কাছে সাফল্য মানে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স, বড় বড় অট্টালিকা, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। আবার অনেকে এই পৃথিবীতে সাদামাটা বসবাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে। তাদের বলা হয় পৃথিবীর রক্ষক। তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবী টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ যেদিন পৃথিবীতে আল্লাহকে ডাকার মতো একটা মানুষও থাকবে না, সেদিন আল্লাহ এই পৃথিবী ধ্বংস করে দিবেন। পৃথিবী রক্ষাকারীদের কুরআন ও হাদিসের ভাষায় মুমিন বলা হয়।
ইসলাম ও মুমিনের জীবন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময় মুমিনের জীবন ক্রয় করে নিয়েছেন। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বলুন, আমার নামাজ, আমার সবরকম ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহ রাব্বুল আল্লামিনের জন্য (সূরা আনআম : ১৬২)।
তাই মুমিনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র আল-কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জীবন কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে। অবশ্যই তিনি (তার ওপর) সন্তুষ্ট হবেন (সূরা লাইল : ২০-২১)। অর্থাৎ মুমিন কারো বন্ধুত্ব করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, আবার কারো সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অপর দিকে মানুষের মধ্যে কেউ এমনও আছে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বিক্রি করে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়ই মেহেরবান ( সূরা আনআম : ৭৯)। হজরত উমামা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে কাউকে ভালোবাসল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিছু দান করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আবার দান থেকে বিরত থাকল তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেই ঈমানের পূর্ণতা লাভ করল (আবু দাউদ)। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরকে ভালোবাসবে তাদের জন্য কিয়ামতের দিন পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিয়ামতের কঠিন সময়ে যখন কেউ কাউকে চিনবে না তখন আল্লাহ তাদের আরশের ছায়ায় জায়গা করে দেবেন। আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন, যারা আমার জন্য পরস্পরকে ভালোবাসতে, তারা কোথায়? আজ তোমাদেরকে আমার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবো। আজ আমার আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া নেই (মুসলিম : ৪৬৫৫)। পৃথিবীর ইতিহাসে ঈমানের পূর্ণতা লাভ করার জন্য এমন অনেক আল্লাহপ্রিয় আছেন, যারা একমাত্র আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন।
মানুষ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। স্বপ্ন পূরণেও আপ্রাণ চেষ্টা করে। তার পরও সবার সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। এজন্য মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, মহান আল্লাহকে ভুলে যায়। কিন্তু আল্লাহর বান্দা কখনো হতাশ হবে না। এই পৃথিবী তাদের জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র। তাই তাদের জীবনে এই ক্ষণস্থায়ী সুখ তুচ্ছ বিষয়। তারা সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা করে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সব গোনাহ মাফ করবেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা যুমার : ৫৩)।
বর্তমানে আত্মহত্যা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর বান্দার নিকট জীবন খুবই মূল্যবান নেয়ামত। তারা বিশ্বাস করে, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহর রহমতের দরজা খোলা আছে। এজন্য তারা আল্লাহর দিকে একমুখী হয়। তাদের সামনে আল্লাহ তায়ালার নাম নিলে ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে ওঠে।
পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সাচ্চা ঈমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর কেঁপে উঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে’ (সূরা আনফাল : ২)। এ ছাড়া জীবনে কখনো জিনা ব্যভিচারে লিপ্ত, পিতা-মাতার অবাধ্য, আমানতের খিয়ানত করা যাবে না। সর্বদা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, হালাল উপায়ে উপার্জন, মানুষের হক নষ্ট না করে জীবন পরিচালনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে জীবনের মূল্য বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন। সূত্র : নয়া দিগন্ত