ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৫৮ বার
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মনগড়া মতবাদ কিংবা যুগ যুগ ধরে চলে আসা কোনো বাতিল প্রথা নয়। ইসলাম এমন ধর্ম আর জীবনব্যবস্থার নাম; যার পূর্ণতার ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা।
সূরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
জীবনে চলার পথে আপনি কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন? তার যুগোপযোগী সমাধানও ইসলামে বিদ্যমান। সমাজে চলতে গেলে নানা রকম মানুষের সাথে উঠাবসা করতে হয়। যেখানে শুধু মুসলিম নয় অমুসলিমরাও থাকে। তাদের সাথে কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও মেলামেশা কেমন হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম।
কোনো অমুসলিম যদি কোনো মুসলমানের প্রতিবেশী হয়, তা হলে মুসলমানের কর্তব্য হলো তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা। অর্থাৎ তারা দাওয়াত দিলে তা কবুল করা। তবে তা সবসময় নয়, মাঝে মধ্যে। কারণ রাসূল সা:-ও কোনো কোনো সময় ইহুদি-খ্রিষ্টানের বাড়িতে মেহমান হয়েছিলেন। তাদের কেউ অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া। অবশ্য এই ন্যায়সঙ্গত বা সৌজন্যমূলক আচরণ ততক্ষণ, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মুসলমানদের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধনে লিপ্ত না হয়। আর যদি মুসলমানদের প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য ক্ষতিসাধনে লিপ্ত থাকে তা হলে সৌজন্যমূলক আচরণ নয়, বরং তাদের যেকোনো বিপদে আনন্দ প্রকাশ করাই ঈমানের দাবি।
কোনো কাফের বা মুশরিক মারা গেলে তার জন্য দোয়া করা; যেমন- পরপারে শান্তিতে থাকুন, কবরে শান্তিতে বিশ্রাম নিন, ঈশ্বর আপনাকে মাফ করুন, এ জাতীয় দোয়া করা সম্পূর্ণ হারাম।
সুনানে নাসায়িতে সাঈদ রহ:-এর পিতা মুসাইয়্যাব থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, যখন আবু তালিবের মৃত্যু সমুপস্থিত হলো তখন রাসূল সা: তার কাছে এলেন এবং সে সময় তার সামনে আবু জাহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়্যাও ছিল। তিনি বললেন, ‘হে চাচাজান! আপনি একবার বলুন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। আমি এর দ্বারা আপনার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করব।’ তখন আবু জাহেল ও আবদুল্লাহ ইবনে আবু উমাইয়্যা বলল, হে আবু তালিব, আপনি কি আবদুল মুত্তালিবের ধর্ম থেকে ফিরে যাবেন? তারা সার্বক্ষণিকই এ কথা বলতে লাগল। শেষ পর্যন্ত তার মুখ দিয়ে শেষ শব্দ যা বের হয়েছিল তা হলো- আমি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মে থেকেই মৃত্যুবরণ করছি। তখন রাসূল সা: তার জন্য বললেন, ‘আমি আপনার জন্য অবশ্যই মাগফিরাত চাইব, যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়।’ (হাদিস নং-২০৩৫)
তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়, ‘নবী ও মুমিনদের জন্য বৈধ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, যদিও তারা নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন, এ কথা প্রকাশ হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’ (সূরা তাওবা, আয়াত-১১৩)
এখন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অন্তরে একটি প্রশ্ন উদয় হতে পারে যে, হজরত ইবরাহিম আ:-ও তো তাঁর পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন। অথচ তাঁর পিতা ছিল মুশরিক। এটি নতুন কোনো প্রশ্ন নয়। সাহাবায়ে কেরামদের অন্তরেও উদয় হয়েছিল। এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারিমে স্পষ্টভাবে দিয়েছেন। তার শানে নুজুলসহকারে উল্লেখ করা হলো- হজরত আলী রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে তার মুশরিক পিতা-মাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুনলাম। আমি তাকে বললাম, তোমার মৃত পিতা-মাতার জন্য কি তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করছ, অথচ তারা ছিল মুশফিক? সে বলল, ইবরাহিম আ: কি তার বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেননি, অথচ তাঁর বাবা ছিল মুশরিক? আমি বিষয়টি রাসূল সা:-এর কাছে উল্লেখ করলাম। তখন নিম্নোক্ত আয়াত নাজিল হলো।’ (সুনানে নাসায়ি-৩১০১) অর্থাৎ সূরা তাওবার ১১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াত দু’টি অবতীর্ণ হয়। ‘নবী ও মুমিনদের জন্য বৈধ নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদিও তারা নিকটাত্মীয়ই হোক না কেন, এ কথা প্রকাশ হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’ (সূরা তাওবা-১১৩) ‘আর ইবরাহিমের ক্ষমা প্রার্থনা তার পিতার জন্য শুধু সেই ওয়াদার কারণে, যেই ওয়াদা সে তার সাথে করেছিল।’ (সূরা তাওবা-১১৪)
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল যে, কোনো কাফির মারা গেলে তার জন্য পরপারে ভালো থাকার কিংবা মাগফিরাত কামনা করা জায়েজ নয়; বরং হারাম বা নিষিদ্ধ। এখন আপনি বিবেচনা করুন। কোন দৃষ্টিকোণ থেকে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন?