ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১ অক্টোবর, ২০২২ ১২:৩৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩০৬ বার


দোয়া মুমিনের হাতিয়ার

মুমিনের যাপিত জীবনের এক অনন্য অনুষঙ্গ হলো দোয়া। মুমিন ব্যক্তি নিজের জীবনের জন্য সর্বদা দোয়া করে, তেমনি জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এই কামনা করে যে, সবাই তার জন্য দোয়া করুক। ‘দোয়া চাই’ বা ‘দোয়া করবেন’- শব্দগুলো চারপাশ থেকে প্রতিনিয়ত মুমিনের কানে ভেসে আসে।

দোয়া শব্দটি আরবি যার উৎস হচ্ছে- ‘দাওয়াত’ শব্দটি। দাওয়াত অর্থ ডাকা বা আহ্বান করা। কিন্তু পারিভাষিকভাবে দোয়া শব্দটি খাস করে মহান প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালাকে ডাকাকেই বোঝায়। এর উৎস হলো আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা আমাকে ডাকো (উদউনি), আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো’ (সূরা মুমিন-৬০)।

স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার এই বাণীটি মুমিন ব্যক্তির প্রতি পদক্ষেপে মনে থাকে। তাই তো প্রকৃত মুমিন সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করে চলে। উম্মতে মুহাম্মদির বিশেষ সম্মানের কারণে তাদের সবাইকে দোয়া করতে আদেশ ও তা কবুল করার ওয়াদা করা হয়েছে। কাব আহ্বারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, পূর্বযুগে কেবল নবীদেরই দোয়া করার আদেশ দেয়া হতো এবং শুধু তাদের দোয়াই কবুল করা হতো। এখন এই আদেশ সবার জন্য ব্যাপক করা হয়েছে এবং এটি উম্মতে মুহাম্মদিরই বৈশিষ্ট্য (ইবনে কাসির)।

এমনকি অন্য আয়াতে আল্লাহ এটিও ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি কাছেই আছেন। কেউ দোয়া করলে আল্লাহ তার জবাব দেন। এমনকি দোয়ার মাধ্যমে কি চাইতে হবে সে সম্পর্কেও আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বহু আয়াত উল্লেখ করেছেন।

হাদিস শরিফে দোয়াকে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা: প্রচুর দোয়া শিখিয়ে গেছেন। মূলত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শেখানো দোয়াগুলোই মুমিন জীবনের পাথেয়।

হাদিস থেকে আমরা পাই, ‘প্রত্যেক দোয়াই ইবাদত।’ মূলত ইবাদত হলো কারো সামনে চূড়ান্ত দ্বীনতা অবলম্বন করা। অর্থাৎ, নিজেকে কারো মুখাপেক্ষী মনে করে তার সামনে কামনা-বাসনার হস্ত প্রসারিত করাই হলো সবচেয়ে বড় দ্বীনতা। আর ইবাদতের মূলকথা এটিই। এমনিভাবে প্রত্যেক ইবাদতের উদ্দেশ্য হলো- আল্লাহর কাছে মাগফিরাত ও জান্নাত কামনা এবং ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা করা। আর এটিই হলো দোয়া। সুতরাং, দোয়াই ইবাদত আর ইবাদতই দোয়া। দুটোর শাব্দিক অর্থ ভিন্ন হলেও ভাবার্থ একই।

আবার যে ব্যক্তি ইবাদতে মশগুল থাকার কারণে দোয়া করারই ফুরসত পায় না, আল্লাহ তাকে না চাইতেই সব কল্যাণ দান করবেন। তিরমিজি ও মুসলিমের বর্ণনায় আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে এমনিভাবে মশগুল হয় যে, আমার কাছে প্রয়োজন চাওয়ারও সময় পায় না, আমি তাকে প্রার্থনাকারীদের চেয়ে বেশি দেবো।’

কেউ নিজেকে বড় ও বেপরোয়া মনে করে দোয়া থেকে বিরত থাকলে আল্লাহ তার ওপর অসন্তুষ্ট হন। তেমনিভাবে কোনো গুনাহের কাজ বা সম্পর্কচ্ছেদ করার দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না। আবার হারাম পন্থায় উপার্জিত খাদ্য খেয়ে দোয়া করলেও আল্লাহ কবুল করেন না। অন্যমনষ্কভাবে বা মনে সন্দেহ নিয়ে দোয়া করলেও তা কবুল হয় না।

মুমিন বান্দাহ আল্লাহর কাছে যে দোয়া করে, তা কবুল হয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে দোয়া কবুল না হতেও দেখা যায়। এর জবাবে আবু সাঈদ খুদরি রা: বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘মুসলমান আল্লাহর কাছে যে দোয়াই করে, আল্লাহ তা দান করেন, যদি তা কোনো গোনাহ অথবা সম্পর্কচ্ছেদের দোয়া না হয়।’ দোয়া কবুল হওয়ার উপায় তিনটি। তন্মধ্যে কোনো না কোনো উপায়ে দোয়া কবুল হয়। ১. যা চাওয়া হয়, তাই পাওয়া; ২. প্রার্থিত বিষয়ের পরিবর্তে পরকালের কোনো সওয়াব ও পুরস্কার দান করা এবং ৩. প্রার্থিত বিষয় না পাওয়া। কিন্তু কোনো সম্ভাব্য আপদ-বিপদ সরে যাওয়া (মাজহারি)।

তাই দোয়া করে তার ফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করা বা অস্থির হওয়া মুমিনের কাজ নয়। আবার দোয়া কবুল হতে না দেখে হতাশ হয়ে দোয়া করা ছেড়ে দেয়াই মূর্খতার পরিচায়ক।


   আরও সংবাদ