ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:০৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৪০ বার
হিজরি সনের তৃতীয় মাস ‘রবিউল আউয়াল’। ‘রবি’ অর্থ বসন্তকাল, ‘আউয়াল’ মানে প্রথম। ‘রবিউল আউয়াল’ মানে হলো প্রথম বসন্ত বা বসন্তকালের প্রথম মাস। প্রিয় নবি (সা.)-এর বহুমাত্রিক স্মৃতিধন্য এই মাস মানবসভ্যতার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। মুসলিম মানসে এই মাস শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মহিমায় পরিপূর্ণ।
মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) ১২ রবিউল আউয়ালে দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। রিসালাতের মহামিশনের সফলতা ও পরিপূর্ণতার অতীব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, ইসলামি ধর্মরাষ্ট্র তথা সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার সূচনা যে হিজরত, তাও সংঘটিত হয়েছিল এ মাসেই। এই মাসের ১২ তারিখেই আখেরি নবির তিরোধান বা ওফাত হয়েছিল।
আবার এ মাসেই মহান রবের সান্নিধ্যে চলে যান। তিনি উম্মাহর জন্য এক অনন্য আদর্শ রেখে যান। সেই আদর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা উম্মাহ সব সময় চালিয়ে যাবে—এটিই উম্মাহর জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
হিজরি সন প্রবর্তনের আগ পর্যন্ত আরবে ঐতিহাসিক কোনো ঘটনাকে স্মারক করে সময়ের হিসাব করা হতো। এমনই এক ঐতিহাসিক ঘটনা হলো হাতি বাহিনীর ঘটনা। আবিসিনিয়ার বাদশা নাজ্জাশি কর্তৃক নিযুক্ত ইয়েমেনের গভর্নর আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য হাতি বাহিনী নিয়ে মক্কায় অভিযান পরিচালনা করেছিল। মহান আল্লাহ নগণ্য পাখির মাধ্যমে সেই বাহিনীকে ধুলায় মিশিয়ে দেন। কোরআন মজিদে এ বিষয়ে একটি বিশেষ সুরা (সুরা ফিল) অবতীর্ণ হয়েছে। হাতি বাহিনীর ঐতিহাসিক এ ঘটনার বছরই (আমুল ফিল) মহানবি (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। সেটি ছিল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাস।
জন্ম-মৃত্যু সব মানুষের থাকবেই। নবি-রাসুলগণও এর বাইরে নন। স্বল্প সময়ের এই পৃথিবীতে আসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চিহ্নিত করে তা পূর্ণ করার চেষ্টা অব্যাহত রাখাই হলো মানুষের কাজ। নবি করিম (সা.)-এর পৃথিবীতে আগমনের উদ্দেশ্য হলো আদর্শের বাস্তবায়ন। আর উম্মাহর কাজ হলো তার অনুসরণ। নবী (সা.) তার কথা, কাজ, সম্মতি এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের মাধ্যমে সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই করে গেছেন।
আল্লাহ বলেন, ‘এবং সে (রাসুল) মনগড়া কথাও বলে না। এ তো (কোরআন) অহি, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়’ (সুরা নাজম, আয়াত: ৩-৪)।
আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং নবি (সা.)-এর জন্মে আনন্দিত হয়েও আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে আবু তালিব ও আবু লাহাব জাহান্নামি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কোরআনে আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর অভিশপ্ত হওয়ার ঘোষণাসংবলিত ‘সুরা লাহাব’ অবতীর্ণ হয়েছে। আবার জায়েদ বিন হারেসা (রা.)-এর মতো একজন ক্রীতদাস নবি (সা.)-এর আদর্শ গ্রহণ করার ফলে মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে কোরআন মজিদে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে (সুরা আহযাব, আয়াত: ৩৭)।
মনুষ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর পরিচয় প্রকাশ করা। নবি-রাসুল প্রেরণের লক্ষ্য হলো মানুষকে আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তাই আল্লাহকে পেতে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ রাসুলে আকরাম (সা.) যা যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে।
পবিত্র কোরআনের ঘোষণা, ‘যা দিয়েছেন তোমাদের রাসুল (সা.), তা তোমরা ধারণ করো; আর যা থেকে তিনি বারণ করেছেন, তা হতে বিরত থাকো’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)।
আরও বলা হয়েছে, ‘বলুন (হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।
হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হব তার নিকট তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু হতে প্রিয়’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড: হাদিস: ১৩ ও ১৪)।
রবিউল আউয়াল মাসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো পরিপূর্ণ জীবন বিধান। আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম ইসলামকে পূর্ণাঙ্গরূপে সর্বস্তরে বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব আল্লাহদ্রোহী শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও ন্যায় সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করা।
আর এটাই নবি বা রাসুল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য; যা পবিত্র কোরআনে বারবার বিবৃত হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসুল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারেন সর্ব ধর্মের শিখরে’ (সুরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৮)।