ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৮ বার
আমাদের প্রিয় নবী সা: এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন আল্লাহর একত্ববাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে, দ্বীন কায়েম করতে, সমুন্নত করতে ইসলামের ঝাণ্ডা, ছড়িয়ে দিতে তাওহিদের বাণী। আর এ কাজ করতে গিয়ে তিনি নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। বিপদের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি কখনো এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, যুদ্ধই ছিল যার একমাত্র সমাধান।
তিনি ছিলেন ক্ষমাপরায়ণ এক মহামানব। ছিলেন খুব দয়ালু একজন মানুষ। অপরাধীকে ক্ষমা করতে পছন্দ করতেন। দুর্বল-সবল সবার প্রতি ছিল তাঁর করুণার দৃষ্টি। ভ্রাতৃপ্রেমী এই মহান নেতা যুদ্ধ ছাড়া রক্তপাতহীন সম্প্রীতি বজায় রাখতে ছিলেন বদ্ধপরিকর। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সবখানেই ভালোবাসার আন্তরিক বন্ধন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
মক্কা বিজয় যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মাতৃভূমি যে মক্কা থেকে কাফির-মুশরিকরা তাঁকে বের করে দিয়েছিল, হিজরতের অষ্টম বছর সেই মক্কাতে বিজয়ের বেশে ফিরে এসেও সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। রক্তপাতহীন এ বিজয় ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিয়ামত অবধি মানুষ শিক্ষা নেবে এ থেকে। এমন মায়াময় ক্ষমার নজির কেবল মক্কা বিজয়ে নয়, প্রায় সব ক’টি যুদ্ধে তার উদাহরণ আমরা পাই।
যেখানে প্রিয় নবীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট পয়গাম থাকত, যারা যুদ্ধে শরিক হবে না, বৃদ্ধ, শিশু ও মহিলাদের ওপর কোনো আক্রমণ করা যাবে না। তাদের প্রত্যেককেই দিতে হবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। ইসলামের প্রথম যুদ্ধ ‘বদরের’ কথাই ধরা যাক। ইসলামকে চিরতরে নিঃশেষ করার জন্য এসে যে সব কাফির-মুশরিক এ যুদ্ধে বন্দী হয়েছিল, হত্যা করা ছাড়া মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের।
পারতপক্ষে কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন না তিনি। সহজ সন্ধিমূলক সমাধান ছিল তাঁর একান্ত চাওয়া। এমনকি যুদ্ধমুখর ভয়ানক অবস্থাতেও প্রতিপক্ষের প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখতেন তিনি। যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েও প্রথমেই শুরু করতেন না যুদ্ধ। প্রতিদ্বন্দ্বীকে লক্ষ করে ইসলামের দাওয়াত দেয়া ছিল মুসলিম যোদ্ধাদের সর্বপ্রথম কর্তব্য। এতে অস্বীকৃতি জানালে জিজিয়া বা করের আহ্বান জানাতেন তারা। এতেও কাজ না হলে শেষ অবলম্বন হিসেবে সিদ্ধান্ত হতো যুদ্ধ। এ ছাড়া যে উপায় নেই।
ইসলামের প্রায় বেশির ভাগ যুদ্ধই ছিল প্রতিরক্ষামূলক। আক্রমণাত্মক যুদ্ধের অনুমতি ইসলাম এতটা সহজ করেনি। সময়ে বাধ্য হয়েই কেবল এমন আক্রমণে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয় ইসলাম। ওহুদ, খন্দক, তাবুক ইত্যাদি যুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় আজো সাক্ষী দিচ্ছে এ সত্যতার ব্যাপারে।
আমাদের প্রিয় নবী ছিলেন শ্রেষ্ঠ সমরবিদ। বাহিনী সাজানো, সেনাদের জন্য উপযুক্ত স্থান বাছাই করা ইত্যাদি যুদ্ধের কলাকৌশলে ছিলেন অত্যধিক পারদর্শী। কৌশলী ও সুনিপুণ হওয়ার কারণেই, কম সংখ্যক সেনা আর সামান্য বাহন ও দুর্বল অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও আল্লাহর সাহায্যে বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করেন অনেক যুদ্ধে। শিখিয়েছিলেন আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে সংখ্যা কোনো বিষয় নয়, অল্পজন বেশি সংখ্যক দলকে নিমিষেই পরাজিত করতে পারে।
খন্দকের যুদ্ধে তিনি পারদর্শিতার এক চমক সৃষ্টি করেছিলেন। দিনের পর দিন মেহনত করে পরিখা খনন করে গড়ে তুলেছিলেন অতুলনীয় এক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। প্রতিপক্ষরা যা কল্পনাও করতে পারেনি হয়তো বা। হতাশার কালো মেঘ বরণ করেই তারা বিদায় হয়েছিল এখান থেকে।
তা ছাড়া আমাদের প্রিয় নবী সা: মারামারি, কাটাকাটি ছাড়াই সন্ধির মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসারে ছিলেন বিচক্ষণ। হুদায়বিয়ার সন্ধি আমাদের সেই সত্যতার সংবাদ দিয়ে থাকে। আল্লাহ তায়ালা যেই সন্ধিকে ‘স্পষ্ট বিজয় ’ বলে উল্লেখ করেছেন পবিত্র কুরআনে। বাহ্যিকভাবে ওই সন্ধি মুসলমানদের জন্য বিপরীতমুখী মনে হলেও এটিই তাদের বিজয়ের হাসি এনে দিয়েছিল শেষের দিকে।
রাসূল সা:-এর হাত ধরে, ইসলামের প্রতিটি যুদ্ধ ছিল বিজয়ের। আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার, একত্ববাদের পতাকা উড্ডীন করার। তাঁকে তো পাঠানোই হয়েছিল, তাওহিদের বাণীকে বিশ্ববুকে ছড়িয়ে দিতে। ইসলাম ধর্মকে অন্য সব ধর্মের ওপর শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করে সমুন্নত করতে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যুদ্ধ করো আহলে কিতাবের ওই লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম মনে করে না এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না কড়জোড়ে তারা জিজিয়া প্রদান করে।’ (সূরা তওবাহ-২৯)