ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৩০ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪১৭ বার
পিতা-মাতার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। আর সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো পিতা-মাতা। পিতার-মাতার জন্য সন্তান শ্রেষ্ঠ নিয়ামত, তদ্রƒপ সন্তানের জন্যও পিতা-মাতার শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। সুতরাং সন্তানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা ও দ্বীনদাররূপে গঠন করা, সন্তানকে সত্যিকার মানুষ করতে না পারলে এমন সন্তান দ্বারা পিতা-মাতার কোনো লাভ হবে না, না দুনিয়ায়, না পরকালে। তাই তাদের সুন্দরভাবে প্রতিপালন করা ও তাদের জন্য আল্লøাহর কাছে দোয়া করা আবশ্যক। শুধু দোয়া নয়, মনীষীদের মতো সাত বছর পর্যন্ত এদের সাথে খেলা করা, পরবর্তী সাত বছর প্রশিক্ষণ দেয়া, সাত বছর সঙ্গ দেয়া তারপর তাদের দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। বিনা কারণে প্রহার করা, ধমক দেয়া, কড়া নজরে রাখা উচিত নয়। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হয়। সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দোয়া এবং পিতা-মাতার জন্য সন্তানের দোয়া কবুল করা হয়।
সন্তানের জন্য দোয়া : নবী-রাসূলরা সন্তানের জন্য দোয়া করেছেন। হজরত ইবরাহিম আ:-কে যখন আল্লøাহ তায়ালা মানব জাতির ইমাম হিসেবে ঘোষণা দেন, তখন তিনি এ বলে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দোয়া করেছিলেন- ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা হবে আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর এবং আমাদেরকে করুন মুত্তাকিদের জন্য অনুসরণযোগ্য নেতা’ (সূরা ফুরকান-৭৪)। তিনি আরো দোয়া করেন, ‘হে আমাদের রব! তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকে এমন একজন বার্তাবাহক প্রেরণ করুন, যিনি তাদের কাছে, আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন’ (সূরা বাকারা-১২৯)। হজরত ইবরাহিম আ:-এর দোয়ার ফসল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রেরণ। আল্লøাহ তায়ালা সন্তানকে শিখিয়েছেন পিতা-মাতার জন্য দোয়া করতে। যেমন-হে আমাদের প্রতিপালক! যে দিন হিসাব-নিকাশ অনুষ্ঠিত হবে সে দিন আমাকে এবং আমার পিতা-মাতাকে আর মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিন’ (সূরা ইবরাহিম-৪১)।
আরো ইরশাদ করেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের (পিতা-মাতার) প্রতি রহম করুন, সেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৪)। পিতা-মাতার কাম্য হওয়া উচিত যেন তাদের সন্তান-সন্ততি দ্বীনদার ও চরিত্রবান হয়। নবী-রাসূলরা স্বীয় সন্তানদের হিতোপদেশ দিয়েছেন। হজরত লুকমান হাকিমের কথা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদের উল্লেখ করেছেন। যেমন- ১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করো না; ২. সালাত কায়েম করবে; ৩. মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দেবে আর অসৎকর্ম থেকে বিরত রাখবে এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করবে; ৪. অহঙ্কারবশত মানুষকে অবজ্ঞা করবে না ও অহঙ্কার করবে না; ৫. প্রয়োজনাতিরিক্ত উচ্চস্বরে কথা বলবে না’ (সূরা লুকমান)।
হজরত ইয়াকুব প্রসঙ্গে আল্লøাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা কি উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকুবের মৃত্যু নিকটবর্তী হয়? যখন সে সন্তানদের বলল, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা বলল, আমরা আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের উপাস্যের ইবাদত করব। তিনি একক উপাস্য ও আমরা তাঁর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পিত’ (সূরা বাকারা-১৩৩)।
মহানবী সা:-এর দোয়া : মহানবী সা: সাহাবিদের নবজাত শিশুদের কোলে নিয়ে খেজুর চিবিয়ে মিষ্টি রস তাদের মুখে দিতেন এবং তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন। রাসূলুল্লøাহ সা:-এর জামাতা আলী রা:-এর কন্যা ফাতিমা রা: ও নাতি হাসান ও হোসাইন রা:-এর জন্য দোয়া করেছেন। একদা হজরত আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন রা:-কে এক সাথে একত্র করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত তথা পরিবার তাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করে তাদেরকে পবিত্র করুন’ (সহিহ মুসলিম, মিশকাত-৬১৩৫)।
হজরত আয়েশা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: একদা সকালে পশমের তৈরি চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হন। এরপর হাসান ইবন আলী এলে তাকে চাদরের নিচে স্থান দেন, তারপর হুসাইন এলে তাকেও স্থান দেন, তারপর ফাতিমা এলে তাকেও চাদরের নিচে স্থান দেন। অতঃপর বলেন, ‘হে আহলে বাইয়াত! আল্লাহ তায়ালা চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং পরিচ্ছন্ন করতে’ (সহিহ মুসলিম, মিশকাত-৬১৩৬)। হজরত বারা ইবন আযেব বলেন, আমি হাসান ইবন আলী রা:-কে রাসূল সা:-এর কাঁধে দেখেছি। তিনি তখন বলছেন, ‘হে আল্লøাহ!
আমি তাকে ভালোবাসি, আপনিও তাকে ভালোবাসুন’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। হজরত উসামা ইবন যাদের রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা: একদা হাসান ও হুসাইন রা:-কে ধরে বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তাদের ভালোবাসি, আপনিও তাদের ভালোবাসুন’ (সহিহ বুখারি)। মহানবী সা: অন্যত্র বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি হাসান-হুসাইনকে ভালোবাসি, আপনিও তাদেরকে ভালোবাসুন এবং যারা তাদেরকে ভালোবাসে আপনি তাদেরকেও ভালোবাসুন’ (তিরমিজি)। আরো বলেছেন, ‘হুসাইন আমার অংশ, আমি হুসাইনের অংশ। হুসাইনকে যে ভালোবাসবে আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। হুসাইন আমার নাতি’ (তিরমিজি)। সব সাহাবির কল্যাণের জন্য রাসূলুল্লাহ সা: দোয়া করেছেন। কয়েকজনের জন্য বিশেষভাবে দোয়া করেছেন।
হজরত ইবনে আব্বাস রা: বলেন, মহানবী সা: আমাকে তাঁর বক্ষের সাথে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে প্রজ্ঞা দান করুন’ (সহিহ বুখারি, মিশকাত-৬১৪৭)। হজরত ইবনে আব্বাস রা: আরো বলেন, একদা রাসূলুল্লøাহ সা: শৌচাগারে প্রবেশ করলে আমি নীরবে অজুর পানি রেখে আসি। তিনি শৌচাগার থেকে বের হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এ পানি কে রেখেছে? তখন আমার কথা বলা হলে তিনি আমার জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লøাহ! তাকে দ্বীনের তত্ত্বজ্ঞান দান করুন’ (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম মিশকাত-৬১৪৮)। হজরত আবু বকর রা: প্রসঙ্গে বলেন, ‘আল্লাহ আবু বকরের প্রতি রহম করুন। সে তার কন্যাকে আমার কাছে বিয়ে দিয়েছে, তার বাহনে করে হিজরত করিয়েছে, গারে সাওরে আমার সাথী হয়েছে, স্বীয় মাল ব্যয় করে বিল্লালকে আজাদ করেছে। আল্লøাহ ওমরের প্রতি রহম করুন! সে তিক্ত হলেও সত্য কথা বলেছে। আল্লাহ ওসমানের প্রতি রহম করুন! ফেরেশতাও তাকে দেখে লজ্জাবোধ করে। আল্লাহ আলীর প্রতি রহম করুন! হে আল্লাহ! সে যেখানেই থাকুক সত্যকে তার সাথী করে দিন’ (তিরমিজি, মিশকাত-৬১৩৪)। রাসূল সা: বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আবদুর রহমান ইবনে আওফকে জান্নাতের শীতল পানি পান করান’ (আহমাদ)।
রাসূল সা: একদা দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! আবু হুরায়রা ও তার মাকে আপনার মুমিন বান্দাদের প্রিয় করে দিন এবং মুমিনদেরও তাদের প্রিয় করে দিন’ (সহিহ মুসলিম, মিশকাত-৬২১৩)। আনসার ও মুহাজিরের জন্য দোয়া করতে গিয়ে রাসূল সা: বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আনসার, মুহাজির, তাদের সন্তান ও তাদের সন্তানদের সন্তানকে ক্ষমা করে দিন’ (মুসলিম)। খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননকালে আনসার ও মুহাজিরের জন্য দোয়া করেন, ‘হে আল্লøাহ! আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দিন’ (বুখারি)।