ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪১২ বার
আরব সমাজে যখন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির প্রচলন ছিল, তখন পেশিশক্তির জোরে খুন-হত্যা, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, ঘুষ-দুর্নীতি— এ সব অবাধে চলত। ইসলামের আবির্ভাবে সব রকম হত্যা, রক্তপাত, অরাজকতা, সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে শান্তি, স্থিতিশীলতা, সম্প্রীতি ও নিরাপত্তার মর্মবাণী ঘোষণা দিয়ে বিদায় হজের ভাষণে বললেন, ‘তোমাদের রক্ত তথা জীবন ও সম্পদ পরস্পরের জন্য হারাম; যেমন আজকের এই দিনে, এই মাসে ও এই শহরে অন্যের জানমালের ক্ষতিসাধন করা তোমাদের ওপর হারাম।’
‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানবজাতির জীবন-মরণ, মানসম্মান—সবকিছুই আল্লাহর পবিত্র আমানত। কোনো ব্যক্তি যদি এ আমানতের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে, তবে এর জন্য তাকে আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। হত্যার বদলে হত্যার ন্যায় কঠিন শাস্তি পেতে হবে। তা সত্ত্বেও সামান্য তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে অথবা রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে অহেতুক নিরীহ মানুষজনকে হত্যা করা হচ্ছে। সংবাদপত্রে ভেসে ওঠে এসব হত্যাকাণ্ডের বীভৎস চিত্র। হাদিসের কথায়, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি)
হত্যা, গুম, অপহরণ এ ধরনের কোনো অপরাধকেই ইসলাম সমর্থন করে না। প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্যে নিরপরাধ মানুষকে যারা হত্যা করে, তারা মানবতার শত্রু, ইসলাম তাদেরকে ঘৃণা করতে বলেছে। কারণ, তাদের কোনো ধর্ম নেই। নরহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ইসলামী শরিয়ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন’ (সূরা আন-নিসা : ৯২-৯৩)।
হত্যা ও গুপ্তহত্যা যেভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে একটি ভয়াবহ অপরাধ, তেমনি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিতেও জঘন্যতম অপরাধ। এ ধরনের অমানবিকতা দূর করতে হলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করতে হবে। তাকওয়া বা খোদাভীতি মনে থাকলে মানুষ কখনো কাউকে হত্যা করবে না। পরকালে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করার অনুভূতি জাগ্রত থাকলে মানুষের মধ্যে অপরাধের মাত্রা অনেক কমে যায়। কারণ, মানুষ জানে, তাকে একদিন আল্লাহর সামনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তখন নরহত্যার মতো মহাপাপের কথা জিজ্ঞাসা করলে সে কী জবাব দেবে? মানুষের অন্তরের এই অনুভূতি অন্যায় কাজ করতে বাধা দেয়।
নরহত্যার শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করল’ (সূরা আল-মায়িদা : ৩২)।
হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিসেও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা’ (তিরমিযি)। কিয়ামতের দিন নরহত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা হবে, তা হলো রক্তপাত (হত্যা) সম্পর্কিত’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নিরীহ মানুষকে অপহরণ, গুম, হত্যা ও গুপ্তহত্যা সম্পর্কে সচেতন ও সজাগ থাকা সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ।