ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারী, ২০২৩ ১৯:০৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩২২ বার
গত বছর হজের পর থেকে কয়েক মাসে ওমরাহ পালন করতে গিয়ে মারা গেছেন ১২৩ জন বাংলাদেশি। অসংখ্য ওমরাহযাত্রী সৌদি আরবে হারিয়েও গেছেন।
এ বিষয়ে ওমরাহ যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতা চেয়েছেন হজ কাউন্সিলর।
গত ২৩ জানুয়ারি এ বিষয়ে সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) চিঠি পাঠিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।
এতে বলা হয়, ‘১৪৪৩ (২০২২ সাল) হিজরি সনের হজ পরবর্তী সময়ে পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বাংলাদেশ থেকে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অধিক সংখ্যক মুসলিম সৌদি আরব আগমনের সুযোগ পাচ্ছেন। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকেও বর্ধিত হারে ওমরাহযাত্রী আগমন করছেন। ফলে মক্কার হারাম এলাকা এবং হারাম সংলগ্ন এলাকাসমূহ সম্প্রতি অত্যন্ত জনাকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিপুল সংখ্যক ওমরাহযাত্রী এবং তাদের পরিবহনকারী যানবাহনের সমাগমে হারাম এলাকায় চলাচল অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রথমবার সৌদি আরবে আগত ওমরাহযাত্রীরা অধিকতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
চিঠিতে বলা হয়, ১৪৪৩ হজ পরবর্তী বিগত কয়েক মাসে ১২৩ জন বাংলাদেশি ওমরাহযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং অসংখ্য ওমরাহযাত্রী হারিয়ে যাওয়া বা নিখোঁজ হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
‘হারিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ওমরাহযাত্রীরা গাইডের নিয়ন্ত্রণে গ্রুপে চলাচল না করে একাই চলাচলের চেষ্টা করায় এমন ঘটনা ঘটেছে। ওমরাহযাত্রীরা হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রেই পাসপোর্ট সঙ্গে রাখছেন না। তাছাড়া আবাসিক হোটেলের বা ওমরাহ কোম্পানির কোনো তথ্য না নিয়েই অনেক সময় হোটেল থেকে একাকি বেরিয়ে পড়ছেন এবং হোটেলে ফেরত না যেতে পেরে হারিয়ে যাচ্ছেন।’
হজ কাউন্সিলর জানিয়েছেন, হারিয়ে যাওয়া যাত্রীদের খুঁজে পাওয়া যেমন দুরূহ, তেমনি হারানো ব্যক্তির কেউ সাক্ষাৎ পেলেও তাকে তার হোটেলে পৌঁছে দেওয়াও কঠিন। হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের অনুসন্ধানের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় সব থানা, স্থানীয় সব হাসপাতাল এবং অন্যান্য সম্ভাব্য স্থানে ভ্রমণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। জেদ্দা থেকে মক্কা ও মদিনায় গমন করে স্বল্পসংখ্যক জনবল এবং সীমিত জ্বালানি দিয়ে এমন কার্যক্রম পরিচালনা করা দূরুহ হয়ে পড়ছে।’
জহিরুল ইসলাম চিঠিতে আরও লিখেছেন, হারিয়ে যাওয়া ওমরাহযাত্রীদের অভিভাবক, নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজন এ কার্যালয়কে (হজ অফিস) হারানো ব্যক্তির অনুসন্ধানের জন্য নানারূপে চাপ সৃষ্টি করছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুঁজে না পাওয়ার কারণে এ অফিসকে দায়ী করছেন। উল্লেখ্য যে, বছরব্যাপী এরূপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অনুবাদক এবং পর্যাপ্ত জ্বালানি বরাদ্দ নেই। তাছাড়া বাংলাদেশ থেকে আসা ওমরাহযাত্রীদের ওমরাহ পালনের সামগ্রিক কার্যক্রমে এ অফিসকে সরাসরি সম্পৃক্ত রাখা হয় না, ওমরাহযাত্রী সংক্রান্ত কোনো তথ্য এ অফিসকে দেওয়া হয় না এবং ওমরাহযাত্রীর বাংলাদেশি এজেন্সি ও সৌদি আরবের এজেন্সির কোনো তথ্য এ অফিসকে জানানো হয় না। ফলে হারিয়ে যাওয়া ওমরাহযাত্রী সম্বন্ধে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
‘বাংলাদেশ থেকে আসা ওমরাহযাত্রীদের বিভিন্ন সেবা সংক্রান্ত বিষয় পর্যবেক্ষণ এবং সেবা নিশ্চিতকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে ওমরাযাত্রী সংক্রান্ত সব তথ্য এ অফিসকে সরবরাহ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। তাছাড়া হারিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে যাত্রীদের ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা তথ্য প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েও পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বছরব্যাপী ওমরাযাত্রী হারিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে নানা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে হারানো ওমরাহযাত্রীর বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে এ অফিসে প্রয়োজনীয় জনবল এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন’ বলে চিঠিতে জানানো হয়।
ওমরাহযাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার সংখ্যা কমাতে সুপারিশ তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ‘ওমরাযাত্রীদের গ্রুপভিত্তিক সৌদি আরবে প্রেরণ করা যেতে পারে। সৌদি আরবের মক্কা, মদিনার রাস্তাঘাট চেনেন এবং আররি ভাষা বোঝেন এমন গাইড সঙ্গে থাকতে হবে। সৌদি আরবে আসার পর ওমরাহযাত্রীদের স্থায়ী ঠিকানা, জরুরি যোগাযোগের মোবাইল নম্বর, মক্কা, মদিনায় আবাসিক হোটেলের ঠিকানা, ফোন/মোবাইল নম্বর, মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ এজেন্সির প্রতিনিধির নাম ও মোবাইল নম্বর ইত্যাদি উল্লেখিত ছবিসহ আইডি কার্ড আবশ্যিকভাবে সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে।’
পাসপোর্ট সাবধানতার সঙ্গে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনো কারণে পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ হজ অফিসে যোগাযোগ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে জেদ্দায় বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে ট্রাভেল পারমিট গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ১০৫ সৌদি রিয়াল ফি দিতে হবে বলেও চিঠিতে জানানো হয়।
একই সঙ্গে ওমরাহযাত্রী মৃতু্যবরণ করলে লাশ সৌদি আরবে দাফন কিংবা দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উপায়ও চিঠিতে জানিয়েছেন হজ কাউন্সিলর।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ থেকে ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যাওয়া যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং ওমরাহযাত্রীদের সার্বিক সেবা নিশ্চিতে জেদ্দার বাংলাদেশ হজ অফিসের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে।