ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাত্পর্য

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩০৭ বার


শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাত্পর্য

হিজরি বর্ষপঞ্জির অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস শাবান। এই পবিত্র মাসটির নামকরণের প্রতি লক্ষ করলেই এর গুরুত্বের বিষয়টি সহজেই অনুধাবন করা যায়। শাবান শব্দের অর্থ বিস্তৃত হওয়া, বিচ্ছুরণ ঘটা, ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। আরবিতে এই মাসটির পূর্ণ নাম হলো—‘আশ্ শা’বানুল মুআজজাম’ তথা মহান শাবান মাস। এর আরেকটি অর্থ হলো—মধ্যবর্তী সুস্পষ্ট। যেহেতু এই মাসটি রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী, তাই এই মহিমান্বিত মাসকে শাবান নামে নামকরণ করা হয়।

 

আবার যেহেতু শাবান মাসের আগের মাস অর্থাত্ রজব মাসে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে আরব্য বেদুইনদের ঐ সময়ে ঘরে বসে সময় অতিবাহিত করতে হতো। আর শাবান মাসের পরের মাস রমজান ছিল প্রচণ্ড উষ্ণতার মৌসুম বিধায় অসহ্য গরমের কারণে রমজানেও তারা ঘর থেকে বের হতে পারত না। মধ্যখানের এই মাসটিই ছিল তাদের জন্য জীবিকা উপার্জনের উপযুক্ত সময়। তাই তারা এই সময়ে জীবিকার সন্ধানে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ত। এজন্য মাসটির নামকরণ করা হয়েছে শাবান।

 

মুসলিম উম্মাহ্র কাছে এই মাসটি অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাত্পর্যপূর্ণ। এ মাসের অতীব গুরুত্বের কারণেই মহানবি (স.) শাবানকে নিজের মাস বলে অভিহিত করেছেন। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে নবি করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, রজব হলো আল্লাহ্র মাস। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ্র মাস রজবকে সম্মান করল, সে আল্লাহ্র বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আল্লাহ্র বিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, মহান আল্লাহ্ তাকে জান্নাতুন নাঈমে প্রবেশ করাবেন। আবার শাবান হলো আমার মাস। আর যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল সে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করল। আর যে আমার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, কিয়ামতের দিন আমি হব তার অগ্রবর্তী এবং সওয়াবের ভান্ডার। আর রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস। এই মাসে নবি করিম (স.) বেশি বেশি করে এই বরকতময় দুআ পাঠ করতেন— ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাত্— হে আল্লাহ্! আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বিশেষ বরকত দান করুন এবং আমাদের রমজান মাস পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিন। (মুসনাদে আহমদ প্রথম খণ্ড: ২৫৯, শুআবুল ঈমান: ৩৫৩২)।

 

নবি করিম (স.) শাবান মাসের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাত্পর্যের বিবেচনায় এ মাসে অধিক হারে নফল ইবাদত-বন্দেগি করতেন। রমজানুল মুবারকের মর্যাদা রক্ষা এবং হক আদায়ের অনুশীলনের জন্য রসুলুল্লাহ্ (স.) শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করতেন। এ সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বলেছেন, নবি করিম (স.)-কে জিগ্যেস করা হলো—‘আপনার কাছে মাহে রমজানের পর কোন মাসের রোজা উত্তম?’ তিনি বললেন, ‘রমজান মাসের সম্মান প্রদর্শনের জন্য শাবানের রোজা উত্তম।’ (তিরমিজি)

 

শাবান মাস সম্পর্কে উম্মুল মু’মীনিন হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (স.) বলেছেন, আরবি বারো মাসের মধ্যে বরকতময় একটি মাস হলো শাবান। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা আদায় করেই তিনি মাহে রমজানের রোজা পালন করতেন। (আবু দাউদ : ২৪৩১)। অন্যদিকে এ মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে যেটাকে আরবিতে ‘লাইলাতুল বরাত’ বা মুক্তির রজনি বলা হয়। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত ১৫ তারিখের রাতকে ‘শবেবরাত’ বলা হয়। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ্ শাবান মাসের এই পবিত্র রজনীকে শবেবরাত নামে আখ্যায়িত করে। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিস্ফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে।

 

রসুল (স.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ আদায় করো, দিনের বেলা রোজা পালন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এ রাতে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, আমার কাছে কোনো গুনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে মুক্তি দেব। আছে কি এমন কেউ, আছে কি এমন কেউ?— এ আহ্বান করতে থাকেন ফজর পর্যন্ত।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ্: ১৩৮৮)

 

শাবান মাসে গুরুত্বপূর্ণ চারটি আমল বা কাজ আমলে নববি বা সুন্নতি আমল হিসেবে বিবেচিত। এ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারলেই রমজানের ইবাদতগুলো পালন করা সহজ হবে। পরিপূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভ সম্ভব হবে। তা হলো : (১) বেশি বেশি রোজা রাখা। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত উসামা বিন যায়েদ (রা.) রসুলুল্লাহ্ (স.)কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহ্র রসুল (স.)! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি অন্য মাসে এত পরিমাণ রোজা রাখতে দেখি না। অর্থাত্ আপনি কেন এ মাসে এত বেশি রোজা রাখেন? রসুলুল্লাহ্ (স.) বললেন, এটি এমন একটি মাস। যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করতে পারে না। তারা ভাবে যে, রমজান মাস তো আছেই।’ (সুনানে নাসাঈ) (২) বেশি বেশি  কোরআন তিলাওয়াত করা। (৩) বেশি বেশি দান-সাদকাহ্ করা। ও (৪) আল্লাহ্ তায়ালার কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা।


   আরও সংবাদ