ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

গরমে রোজা, সুস্থ থাকতে সেহরি ও ইফতারে যা খাবেন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল, ২০২৩ ২০:৩৬ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৩১ বার


গরমে রোজা, সুস্থ থাকতে সেহরি ও ইফতারে যা খাবেন

পহেলা বৈশাখের শুরুতে ও মাহে রমজান মাসের শেষ ১০ দিন চলছে। চৈত্রের শেষ খরতাপে পুড়ছে দেশ। রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত। তীব্র গরমে সবচেয়ে কষ্টে আছেন রোজাদার ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। রোজার মধ্যে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত না খেয়ে থাকা এবং এই সময়ে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে গেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়ে যায়। তাই খাবার নির্বাচন এমনভাবে করতে হবে যেন সারাদিন শক্তি পাওয়া যায় এবং ইফতারের পরেও সুস্থ থাকা যায়।

 

দেশজুড়ে এই প্রচন্ড গরমের মধ্যে প্রত্যেকেরই খাওয়াদাওয়ায় সঠিক নিয়ম মেনে চলাটা জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট জীবনধারা অনুসরণ করতে পারলে গরমে সুস্থ থাকা সম্ভব। 

 

গরমের কারণে অনেকেই এখন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন; যেমন- পানিস্বল্পতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, হিট স্ট্রোক, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আমাশয়, গরমজনিত সর্দি–কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও জন্ডিস। তাই গরমের দিনগুলোতে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে।

 

শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখা, সেই সাথে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যেসব খাবার এই সময়ে আমাদের জন্য উপকারী, সেগুলো গ্রহণ করতে হবে প্রতিদিন নিয়ম করে।

 

যেহেতু এখন রমজান মাস, তাই খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আরো বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রোজার মধ্যে সেহরি থেকে ইফতার পর্যন্ত না খেয়ে থাকা এবং এই সময়ে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে গেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়ে যায়। তাই খাবার নির্বাচন এমনভাবে করতে হবে যেন সারাদিন শক্তি পাওয়া যায় এবং ইফতারের পরেও সুস্থ থাকা যায়। অনেক সময় ইফতারে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়ার কারণে অসুবিধা দেখা দেয় শরীরে। এছাড়াও পুষ্টির ঘাটতির কারণেও অনেক সমস্যা দেখা দেয়।

 

গরমে রোজা রেখে ইফতারে কি কি খাবেন:

 

প্রথমত ইফতার হতে হবে সুষম, অর্থাৎ খাবারে সব খাদ্য গ্রুপের উপাদান বিদ্যমান থাকা, যেন আমাদের শরীর সঠিকভাবে পুষ্টি পায়।

 

আমরা সাধারণত ঘাম, শ্বাস, প্রস্রাব এবং মলের মাধ্যমে দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার তরল হারাই। তাই প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি বা অন্যান্য হাইড্রেটিং তরল পান করা উচিত। দুধ, চিনি-মুক্ত পানীয়, চা-কফি, সেইসাথে বিশ্বস্ত ট্যাপের জলের মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে মনে রাখতে হবে, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়গুলোর একটি মূত্রবর্ধক প্রভাব রয়েছে, যা আপনাকে তরল হারাতে বাধ্য করে, তাই এসব পানীয় সর্বনিম্ন রাখার পরামর্শ  দেওয়া হয়।

 

ফলের রস এবং স্মুদিও অনেক উপকারী, তবে এগুলো প্রতিদিন ১৫০ মিলি গ্লাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে।

 

আমাদের নির্দিষ্ট চাহিদাগুলো বয়স, আকার, লিঙ্গ এবং শারীরিক কার্যকলাপের পরিমাণের উপর নির্ভর করে, পাশাপাশি তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতাসহ পরিবেশগত কারণের উপরও নির্ভর করে।

 

যেহেতু গরমের কারণে ঘাম হয় এবং শরীর থেকে অনেক পুষ্টি বের হয়ে যায়, সেহেতু আমাদের খাবারটি সেই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হতে হবে। খাবারের মধ্যে তরমুজ , ডাবের পানি, সব্জি স্যুপ, টক দইয়ের পানীয় , লেবুর শরবত ইত্যাদি যেকোনো দুইটি পানীয় রাখতে হবে । কারণ এসব খাবারে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে এবং ইলেকট্রোলাইট থাকে।

 

ফলের সালাদ

 

একটি সালাদে কলা, বেরি, আপেল, শশা, এভোকাডো টমেটো , মেলন ইত্যাদি মেশালে খাবারটি অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হবে যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং ঠান্ডা রাখবে। এসব ফলে রয়েছে অনেক পুষ্টি, যা গরমে প্রতিদিন খাওয়া জরুরি।

 

খাবারে বৈচিত্র আনার জন্য চিড়া-দই-কলা বা আপেল অথবা সবজি স্যুপ রাখতে পারেন। তাতে পুষ্টি এবং পানির চাহিদা পূরণ হবে একসাথে। সবজিতে রোগ প্রতিরোধী উপাদান থাকায় আমাদের জ্বর ,কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধ করতে সহযোগিতা করে।এছাড়াও ফাইবার থাকায় এটি কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।

 

দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকায় এটি আমাদের গাট ব্যাক্টেরিয়াগুলো দূর করে করে পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে, সেই সাথে শরীরকে ঠান্ডা রাখে।

 

তাপমাত্রা এবং দিনের আলোকঘন্টার সংখ্যা ও ঋতু পরিবর্তনগুলো আমাদের ক্ষুধাকে প্রভাবিত করে। গ্রীষ্মকালে ক্ষুধা কমে যায়, বিশেষ করে যখন আমরা গরম অনুভব করি। এর একটি কারণ হলো শরীর খাদ্য হজমের মতো ক্রিয়া হ্রাস করে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।"

 

যদিও এই ধরনের ক্ষুধা কমে যাওয়া আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হতে পারে, তবে আমরা যে খাবার খাই তা সঠিক পুষ্টিসম্পন্ন কিনা তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা নিজেদেরই সাহায্য করতে পারি।

 

এই সময়ে রাতের খাবারে তে ভাত, সাথে পাতলা ঝোলের সবজি এবং মাছ বা মুরগি রাখা যেতে পারে। চিড়া খেলে ফল এবং টক দই দিয়ে খাওয়া যেতে পারে রাতের খাবারে। সেই সাথে পানি গ্রহণও ঠিক রাখতে হবে।

 

সেহরি করার বিষয়ে জোর দেওয়া উচিত এবং অবশ্যই আমাদের সবার সেহরি করেই রোজা রাখা উচিত। সেহরিতে সুষম খাবার রাখতে হবে। ফাইবারযুক্ত খাবার আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।

 

খাবার খাওয়ার পরে যেকোন একটি ফল রাখা যেতে পারে।

 

এই গরমে প্রসেসড ফুড, তেলে ভাজা খাবার, অতিরিক্ত চা-কফি, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

 

এভাবে বাছাইকৃত খাবার এবং পানীয় নিয়ম করে প্রতিদিন গ্রহণ করলে এবং জীবনযাত্রা সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারলে গরমের মধ্যেও সুস্থভাবে রোজা পালন করা সম্ভব হবে।

 

(সামিয়া তাসনিম গুলশানের ল্যাবএইড হাসপাতালের একজন পুষ্টিবিদ।


   আরও সংবাদ