ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

কোরআনে ইব্রাহিম (আ.)-এর বর্ণনা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৩ জুন, ২০২৩ ১২:০২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৬৯ বার


কোরআনে ইব্রাহিম (আ.)-এর বর্ণনা

কোরআনে মহান আল্লাহ বহু জায়গায় ইব্রাহিম (আ.)-এর কথা এনেছেন। যার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো।

 

একাধিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

 

আল্লাহ তাঁকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছেন। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন পূর্ণ সফলতার সঙ্গে।

 

আল্লাহ বলেন, ‘এবং (সেই সময়কে স্মরণ করো), যখন ইব্রাহিমকে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি বিষয় দ্বারা পরীক্ষা করলেন এবং সে তা সব পূরণ করল।’ (সুরা : বাকার, আয়াত : ১২৪)

 

আগুনে নিক্ষেপ

 

ইব্রাহিম (আ.)-এর যুগের মানুষ ছিলেন বস্তু পূজারী। তাঁর পরিবারের সবাই ছিল মূর্তিপূজায় লিপ্ত। তিনি ছিলেন তাওহিদ বা একত্ববাদে বিশ্বাসী।

 

তিনি নবুয়ত লাভের পর স্বজাতিকে মূর্তি পূজা ত্যাগের আহবান জানান। তাওহিদের দাওয়াত ও প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতা করার কারণে নমরুদ ও তার পরিষদবর্গ তাকে আগুনে নিক্ষেপ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা (একে অন্যকে) বলতে লাগল, তোমরা তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দাও এবং নিজেদের দেবতাদের সাহায্য করো, যদি তোমাদের কিছু করার থাকে।’ (সুরা :  আম্বিয়া, আয়াত : ৬৮) কিন্তু ইবরাহিম (আ.)-কে আল্লাহ রক্ষা করেন।

 

ইরশাদ হয়েছে, (সুতরাং তারা ইব্রাহিমকে আগুনে নিক্ষেপ করল) এবং আমি বললাম, হে আগুন, ঠাণ্ডা হয়ে যাও এবং ইবরাহিমের পক্ষে শান্তিদায়ক হয়ে যাও। তারা ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে এক দুরভিসন্ধি আঁটল; কিন্তু আমি তাদেরই করলাম মহা ক্ষতিগ্রস্ত। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৬৯,৭০) এ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাপিত হয়ে গেল আগুনের দহনশক্তি। অগ্নিকুণ্ড হলো পুষ্প উদ্যান। ইব্রাহিম (আ.) নিরাপদে আর নিশ্চিন্তে বসে রইলেন সেই উদ্যানে।

 

হিজরতের নির্দেশ

 

স্বজাতির প্রচণ্ড বিরোধিতা ও শত্রুতার মুখে আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে হিজরত করার নির্দেশ দেন। তিনিও চিরদিনের জন্য মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ইব্রাহিম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের দিকে হিজরত করছি। নিশ্চয়ই তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। অর্থাৎ আমার প্রতিপালকের সন্তুষ্টি হাসিলের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ২৬)

 

পথিমধ্যে বহু প্রতিকূল ও ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে তিনি পৌঁছালেন সুদূর সিরিয়ায়। সিরিয়ার অনুকূল পরিবেশ সুন্দর আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করল। তিনি ভাবলেন, হয়তো এটাই তার সফরের মঞ্জিল। দাওয়াতের জন্য এটাই উর্বর জমিন।

 

মক্কার অভিমুখে

 

কিন্তু না, আল্লাহ নির্দেশ দিলেন এমন এক ভূখণ্ডে হিজরত করতে, যেখানে গাছপালা পানি ও প্রাণীর কোনো চিহ্ন নেই। সেটা ছিল পবিত্র মক্কা ভূমি। আল্লাহ সেখানেই স্ত্রী আর শিশুসন্তানকে রেখে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ামাত্রই সিরিয়ার দিকে রওন হলেন। হাজেরা (আ.) তাঁকে চলে যেতে দেখে কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এই জনমানবহীন প্রান্তরে আমাদের একা রেখে কোথায় যাচ্ছেন! ইব্রাহিম (আ.) কোনো উত্তর দিলেন না। এরপর তিনি আবারও তার প্রিয় স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর কোনো নির্দেশে যাচ্ছেন? ইব্রাহিম (আ.) বললেন হ্যাঁ! হাজরা খুশি মনে বললেন, ঠিক আছে, যিনি আপনাকে চলে যেতে বলেছেন তিনি আমাদের ধ্বংস করতে পারেন না।

 

শিশুপুত্র ইসমাঈলকে কোরবানি

 

ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর ইঙ্গিতে মাঝেমধ্যে এসে বিবি হাজেরা ও শিশুকে দেখে যেতেন। এ সময় আল্লাহ স্বীয় বন্ধুর আবারও পরীক্ষা নিতে চাইলেন। নির্দেশ এলো কলিজার টুকরা ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করার। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর সে পুত্র যখন ইবরাহিমের সঙ্গে চলাফেরা করার উপযুক্ত হলো, তখন সে বলল, বাছা, আমি স্বপ্নে দেখছি যে তোমাকে জবাই করছি। এবার চিন্তা করে বলো, তোমার অভিমত কী। পুত্র বলল, বাবা, আপনাকে যার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যধারণকারীদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। সুতরাং (সেটা ছিল এক বিস্ময়কর দৃশ্য) যখন তারা উভয়ে আনুগত্য প্রকাশ করল এবং পিতা পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিল। আর আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইব্রাহিম, তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। নিশ্চয়ই আমি সৎকর্মশীলদের এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটা ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। এবং আমি এক মহান কোরবানির বিনিময়ে সে শিশুকে মুক্ত করলাম।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০২-১০৭)


   আরও সংবাদ