ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৬৫ বার
হালাল উপার্জন মানে-বৈধ ও ন্যায্য উপায়ে অর্থ সম্পদ আয় করা। একজন মুসলমানের জন্যে হালাল উপার্জন করা ফরজ। মুসলমানের জন্যে সুদের উপার্জন হারাম, ঘুষের উপার্জন হারাম। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন করা অর্থও হারাম।
আর হালাল উপার্জন ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত আছে। হালাল ও পবিত্র বস্তু থেকে আহার করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মানবকুল, তোমরা পৃথিবীতে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করও না, নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৮)
নিম্নে হারাম উপার্জনের কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হলো—
১. উৎকাচ দেয়া-নেয়া : ঘুষের রাজত্ব আজ দেশের সর্বত্র আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে।
বকশিশ হলো ঘুষের প্রথম ধাপ। অথচ আল্লাহর রাসুল (সা.) লানত করেছেন- ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয় পক্ষকেই। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৬৫৩২; তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩৬)
২. সুদের লেনদেন : ঘুষের মতো সুদের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সর্বত্র। প্রান্তীয় জনপদ থেকে নগরাঞ্চলে সর্বত্র আজ সুদের সঙ্গে জড়িত এবং সুদভিত্তিক লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
অথচ সুদের ব্যাপারে মহান রবের কড়া হুঁশিয়ারি আছে—‘যারা সুদ খায় তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
এ ছাড়া রাসুল (সা.) ‘সুদ ভক্ষণকারী, সুদদাতা, সুদের লেখক ও সাক্ষীকে অভিসম্পাত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৫৯৭; তিরমিজি, হাদিস : ১২০৬)
৩. ওজনে কম দেয়া : ওজনে কম দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন মেপে দেয় তখন কম করে দেয়।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৩)
এ ছাড়া মাপে কম প্রদানকারীর শাস্তি সম্পর্কে রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো জনগোষ্ঠী মাপ ও ওজনে কম দেয়, তখন তাদের দুর্ভিক্ষ, খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি ও অত্যাচারী শাসকের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩১১৮)
৪. জাকাত না দেয়া : জাকাত-উপযোগী সম্পদ থাকা সত্ত্বেও জাকাত আদায় না করে উক্ত সম্পদ ভক্ষণ করা হারাম। মহান আল্লাহর বাণী—‘যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত দেয় না), তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও। কিয়ামতের দিন তা পাত বানানো হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তাদের পার্শ্বদেশ, কপাল ও পিঠে সেঁকা দেয়া হবে...।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৩৫-৩৬)
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘যে জাতি জাকাত দেয় না, তাদের আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণও করা হতো না, যদি প্রাণিকুল না থাকত।’ (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪০১৯)
৫. প্রতারণা, জুয়া ও বাজি ধরা : সব ধরনের প্রতারণা ইসলামে নিষিদ্ধ। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধোঁকা দিল সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৫; তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)
জুয়া ও বাজি ধরা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা, ভাগ্যনির্ধারক শর—এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৯০)
৬. চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই করা : ইসলামের দৃষ্টিতে এর মাধ্যমে উপার্জন হারাম। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ করও না...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
এ ছাড়া কোরআন-হাদিসে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের পৃথক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।
৭. চাকরিতে ফাঁকি দেয়া : যেকোনো চাকরিতে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে ইনকাম করা হারাম। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন আমানত (হকদারের প্রাপ্য) তার হকদারকে পৌঁছে দিতে...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
৮. পণ্য মজুদ করে রাখা : ইসলামে পণ্য মজুদদারি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য গুদামজাত করা হারাম কাজ। এতে করে প্রকৃত হকদার বঞ্চিত হয়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য গুদামজাত করে রাখল, সে অবশ্যই আল্লাহ থেকে মুক্ত, আর আল্লাহও তার থেকে মুক্ত।’ (সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস : ৩৩৬২)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল জীবিকা উপার্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন