ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩ মার্চ, ২০২৪ ০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৩৯ বার
তারাবী অর্থ : আরাম করা, বিশ্রাম করা, ধীরে ধীরে। বর্তমানে মুসলিম সমাজে ‘তারাবীর’ সালাতটি তারাবী সালাত নামেই বিশেষভাবে পরিচিত। কুরআন ও হাদীসের কোথাও এই তারাবী শব্দটির উল্লেখ নেই। হাদীসে এ সালাতকে اللَّيْلِ صَلَوْةُ (সালাতুল লাইল), قِيْامِ رَمَضَان (কিয়ামে রামাযান), قِيَامُ اللَّيْل (কিয়ামুল লাইল) ও তাহাজ্জুদ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
১। আয়িশা (রাঃ) বলেছেন : একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মাসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছুসংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করে। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করে, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হয়। পরবর্তী রাতে তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করে। সকালে তারা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে। তৃতীয় রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করে। চতুর্থ রাতে মাসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হলনা, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফাজরের সালাতে বেরিয়ে এলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাশাহহুদ পাঠ করলেন। এরপর বললেন : ‘আম্মা বাদ’ শুন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিলনা, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফারয হয়ে যাবার আশংকা করেছি (তাই বের হইনি)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যু হয়ে যায়, আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়। [বুখারী/১০৫৭, ১৮৮০, মুসলিম/১৬৫৪, ইবন মাজাহ/১৩২৭]
২। আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যে লোক রামাযানের রাতে ঈমানের সঙ্গে এবং সাওয়াবের আশায় (সালাতে) দাঁড়ায়, তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। ইব্ন শিহাব বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তিকাল করলেন। আর নির্দেশও এ অবস্থায়ই রয়ে গেল। তারপর আবূ বাকার (রাঃ)-এর গোটা খিলাফাত কাল এবং উমারের (রাঃ) খিলাফাতের প্রথম ভাগ এভাবেই কেটে গেল (অর্থাৎ সকলেই একা একা কিয়ামে রামাযান (তারাবীহ) পড়তো)। আবদুর রাহমান ইব্ন আবদুল কারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : আমি রামাযানের এক রাতে উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) সাথে মাসজিদে নাববীর দিকে বের হলাম। দেখলাম, লোকরা বিক্ষিপ্ত জামা‘আতে বিভক্ত। কেহ একা একা সালাত আদায় করছে। কোথাও এক ব্যক্তি সালাত আদায় করছে আর কিছু লোক তার সঙ্গে একতেদা করে সালাত আদায় করছে। তখন উমার (রাঃ) বললেন : আমার মনে হয়, এদের সবাইকে একজন কারীর সাথে জামা‘আতবন্দী করে দিলে সবচেয়ে উত্তম হবে। এরপর এ ব্যাপরে তিনি দৃঢ় সংকল্প হলেন এবং তাদেরকে উবাই ইব্ন কা‘ব (রাঃ)-এর পিছনে জামা‘আতবন্দী করে দিলেন। আমি আরেক রাতে আবার তাঁর (উমার (রাঃ)) সাথে বের হলাম। দেখলাম, লোকজন তাদের ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করছে। উমার (রাঃ) বললেন : এটি উত্তম ‘বিদ‘আত’ বা সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা। রাতের যে অংশে সালাত না পড়ে লোকেরা ঘুমায় তা যে অংশে তারা সালাত আদায় করে তার চেয়ে উত্তম। অর্থাৎ রাতের প্রথম অংশের চেয়ে শেষ অংশের সালাত বেশি উত্তম-এটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। আর লোকেরা তখন রাতের প্রথম অংশেই সালাত আদায় করত। [বুখারী/১৮৭৮]
৩। আবূ সালামা ইব্ন আবদুর রাহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেসা করলেন : রামাযানে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাতের সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযান মাসে এবং রামাযান মাস ছাড়াও (অন্যান্য মাসে রাতের সালাত) এগার রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করতেননা। চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে তোমার প্রশ্নের অবকাশ নেই। তারপর চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তারপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, তখন আমি জিজ্ঞেসা করলাম : ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আপনার বিতর আদায়ের আগে কি আপনি নিদ্রা যান? তিনি বললেন : হে আয়িশা! উভয় চোখ তো ঘুমায়, কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায়না। [বুখারী/১০৭৬, ১৮৮১, মুসলিম/১৫৯৩, আবূ দাউদ/১৩৪১, তিরমিযী/৪৩৯ ]
৪। যে ব্যক্তি রামাযান মাসের রাতে ঈমানের সাথে সাওয়াব লাভের আশায় সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [বুখারী/১৮৭৭-আবূ হুরাইরা (রাঃ), মুসলিম/১৬৪৯, তিরমিযী/৮০৬, নাসাঈ/২২০০, আবূ দাউদ/১৩৭১]
৫। কুরআন দেখে দেখে তিলাওয়াত করে কিয়ামে রামাযান/কিয়ামুল লাইল/তাহাজ্জুদ/তারাবীর সালাত আদায় করা সম্বন্ধে :
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তিকালের পর আয়িশা (রাঃ) এর ক্রীতদাস (গোলাম) যাকওয়ান আবূ আমর (রঃ) রামাযান মাসে কিয়ামে রামাযানের (তারাবীর) সালাতে কুরআন দেখে দেখে তিলাওয়াত করে ইমামাতী করতেন এবং আয়িশা (রাঃ) অন্যদের সঙ্গে মুক্তাদী হয়ে যাকওয়ান (রঃ) এর পিছনে সালাত আদায় করতেন।
এ বিষয়ে দেখুন :
(ক) আয়িশা (রাঃ) এর ক্রীতদাস (গোলাম) যাকওয়ান (রঃ) কুরআন দেখে কির‘আত পড়ে আয়িশা (রাঃ) এর ইমামাতি করতেন। [বুখারী/অনুচ্ছেদ-৯৬, ২য় খন্ড]
(খ) উরওয়া (রঃ) বলেন : যাকওয়ান আবূ আমর (রঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা (রাঃ) এর ক্রীতদাস (গোলাম) ছিলেন। আয়িশা (রাঃ) এর ইন্তিকালের পর যাকওয়ান (রঃ) মুক্তিপ্রাপ্ত হবেন বলে ঘোষনা ছিল। (উক্ত যাকওয়ান (রঃ)) রামাযান মাসে কিয়ামে রামাযানের (তারাবীর) সালাতে ইমামাতি করতেন এবং আয়িশা (রাঃ) তাঁর পিছনে (অন্যদের সঙ্গে) মুক্তাদী হয়ে সালাত আদায় করতেন ও কুরআন পাঠ শুনতেন। [মুয়াত্তা মালিক/কিয়ামে রামাযান (তারাবী) অধ্যায়-রেওয়ায়ত-৭]
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত আল কুরআন ও হাদীস গ্রন্থ হতে সংকলিত।