ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৪ ০৯:০৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২৬ বার
।। মৌলভী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভুইয়া ।।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দশম হিজরি জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখে আরাফাতের বিশাল ময়দানে উপস্থিত প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার সাহাবীর সম্মুখে ইহজীবনের অন্তিম ভাষণ দান করেন, যা ‘বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ’ নামে পরিচিত। তিনি ১০ই যিলহাজ্জ কুরবানীর দিন ‘মিনা’য় অবস্থানকালে সকালে সূর্য উপরে উঠলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি সাদা-কালো মিশ্রিত বাহনে আরোহন করে (কংকর নিক্ষেপের পর) জামরায়ে আক্বাবায় অপর একটি ভাষণ দেন। বিদায় হজে¦র সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফ হতে মদীনা শরীফের দিকে যাত্রা করেন এবং ১৮ই যিলহজ¦ ‘গাদীরে খুম’ বা জলাশয়ের নিকটে পৌঁছে সেখানে যাত্রা বিরতি করেন। তিনি এখানে ভাষণ প্রদান করেন। এটাকে গদির এ খুমের ভাষণ বলা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনশ যোদ্ধার এক বাহিনী আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নেতৃত্বে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন। হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র পরিচালনাধীন সৈন্যবাহিনী ইয়েমেনে অত্যন্ত সফল হয়েছিলো এবং সেখানে সে দলটি বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনীমতের মালামাল) লাভ করে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু গণিমতের অংশ থেকে খুমুস (পাঁচভাগের এক অংশ) আলাদা করে রাখেন যার ভিতরে বিপুল পরিমাণ শণজাত (লিলেনের) কাপড়ও ছিলো। যা গোটা সেনাবাহিনীর চাহিদা মেটাতে সক্ষম ছিলো। সাহাবীদের ভেতর থেকে অনেকে সেই কাপড় থেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাদের কিছুটা ধার দেয়ার জন্য আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে অনুরোধ করেন। এর কারণ হলো দলটি সেখানে তিনমাস অবস্থান করছিলো এবং তাদের ব্যবহার্য কাপড়ও যথেষ্ট ছিলো না। কিন্তু আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তা দিতে অস্বীকার করেন এবং তা সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
ইবনু হিশামের বর্ণনায় আছে,
لَمّا أَقْبَلَ عَلِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ مِنْ الْيَمَنِ لِيَلْقَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكّةَ، تَعَجّلَ إلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، وَاسْتَخْلَفَ عَلَى جُنْدِهِ الّذِينَ مَعَهُ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِهِ، فَعَمِدَ ذَلِكَ الرّجُلُ فَكَسَا كُلّ رَجُلٍ مِنْ الْقَوْمِ حُلّةً مِنْ الْبَزّ الّذِي كَانَ مَعَ عَلِيّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ.فَلَمّا دَنَا جَيْشُهُ خَرَجَ لِيَلْقَاهُمْ، فَإِذَا عَلَيْهِمْ الْحُلَلُ؛ قَالَ: وَيْلَك! مَا هَذَا؟ قَالَ:كَسَوْت الْقَوْمَ لِيَتَجَمّلُوا بِهِ إذَا قَدِمُوا فِي النّاسِ، قَالَ: وَيْلك! انْزِعْ قَبْلَ أَنْ تَنْتَهِيَ بِهِ إلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ: فَانْتَزَعَ الْحُلَلَ مِنْ النّاسِ، فَرَدّهَا فِي الْبَزّ، قَالَ: وَأَظْهَرَ الْجَيْشَ شَكْوَاهُ لِمَا صُنِعَ بِهِمْ.
ইয়েমেন বিজয়ের পর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর বাহিনীর সহ-অধিনায়ককে সেখানকার দায়িত্ব হস্তান্তর করে মক্কার উদ্দেশ্যে চলে যান। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চলে যাবার পর সেই সহ-অধিনায়ক সবদিক বিবেচনা করে সৈন্যদলকে লিলেনের কাপড় ধার দেবার সিদ্ধান্ত নেন। অল্পদিন পরে পুরো দলটিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যোগ দেয়ার জন্য রওয়ানা করে। দলটির আগমনের খবর পেয়ে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মক্কা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। কাছে এসে তিনি দেখতে পান তাদের গায়ে সেই লিলেনের পোষাক। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন এবং তাদের নির্দেশ দেন তৎক্ষণাৎ সে পোষাক খুলে পুরাতন পোষাক পরার জন্য। আলীর নির্দেশ মান্য করলেও দলটির নেতাসহ সকলেই খুব ক্ষুব্ধ হয় এবং গোটা বাহিনীর মাঝে বড় ধরনের ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
খবরটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়েও পৌঁছায়। শুনে তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيّ، قَالَ: اشْتَكَى النّاسُ عَلِيّا رِضْوَانُ اللهِ عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِينَا خَطِيبًا، فَسَمِعْته يَقُولُ: أَيّهَا النّاسُ، لاتشكوا عليّا، فو الله إنّهُ لَأَخْشَنُ فِي ذَاتِ اللهِ، أَوْ فِي سَبِيلِ اللهِ، مِنْ أَنْ يُشْكَى.
“হে মানব সকল, আলীকে দোষারোপ কোরো না; কেননা সে আল্লাহর পথে (ন্যায়ের পক্ষে) এতোই বিবেকবান যে তাকে দোষারোপ করা চলে না।’ ( )
বুরায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন,
بَعَثَ النَّبيُّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ عَلِيًّا إلى خَالِدٍ لِيَقْبِضَ الخُمُسَ، وكُنْتُ أُبْغِضُ عَلِيًّا، وقَدِ اغْتَسَلَ، فَقُلتُ لِخَالِدٍ: ألَا تَرَى إلى هذا! فَلَمَّا قَدِمْنَا علَى النَّبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ ذَكَرْتُ ذلكَ له، فَقالَ: يا بُرَيْدَةُ، أتُبْغِضُ عَلِيًّا؟ فَقُلتُ: نَعَمْ، قالَ: لا تُبْغِضْهُ؛ فإنَّ له في الخُمُسِ أكْثَرَ مِن ذلكَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে খুমুস (গনীমতের এক পঞ্চমাংশ) নিয়ে আসার জন্য খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে পাঠালেন। (রাবী, বুরায়দা বলেন, কোন কারণে) আমি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র প্রতি নারাজ ছিলাম, আর তিনি গোসলও করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে আসলে আমি তাঁর কাছে বিষয়টি উল্লেখ করলাম। তখন তিনি বললেন, হে বুরায়দা! তুমি কি আলীর প্রতি অসন্তুষ্ট? আমি উত্তর করলাম, জ্বী, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার উপর অসন্তুষ্ট থেকো না। কারন খুমুসের ভিতরে তার প্রাপ্য অধিকার এ অপেক্ষাও বেশি রয়েছে।
কিন্তু হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথা কিছু মানুষ হয়তো মেনে নেন। কিন্তু সাহাবী বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেকের ক্ষোভ এতে মিটে যায়নি। দোষারোপ চলতেই থাকলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ শেষে মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফ ফেরার পথে এ দলটি গাদির খুম নামের এক কুপের কাছে যাত্রাবিরতি করলো। সেখানে হযরত আলীর নামে আবার অভিযোগ তোলা হলো। এবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ক্ষুব্ধ হলেন ও লোকদের ডেকে আলী সম্পর্কে বললেন।
أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ قَالُوا بَلَى قَالَ أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي أَوْلَى بِكُلِّ مُؤْمِنٍ مِنْ نَفْسِهِ قَالُوا بَلَى قَالَ فَأَخَذَ بِيَدِ عَلِيٍّ فَقَالَ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ
‘আমি কি তোমাদের জীবনের চেয়ে আওলা’ (শ্রেয়তর, অধিকতর মূল্যবান) নই?’ আসহাবে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম যখন উত্তরে বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ, জি, (আপনি শ্রেয়তর)’, তখন তিনি বলেন, ‘তাহলে আমি যার মওলা, আলীও তার মওলা।’ যাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে গাদীরে খুমে বিশ্রামের জন্যে থামলে তিনি সবাইকে সমবেত করেন এবং হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র হাত ধরে ওই একই কথা (আমি যার মওলা, আলী-ও তার মওলা) পুনর্ব্যক্ত করেন। অতঃপর এ দুআ যোগ করেন:
اللّٰهُمَّ وَالِ مَنْ وَالَاهُ ، وَعَادِ مَنْ عَادَاهُ
‘হে আল্লাহ! আপনিও তাকে ভালোবাসুন, যে আলীকে ভালোবাসে; আর তাকে শত্রু হিসেবে গণ্য করুন, যে তার প্রতি শত্রুতাভাব পাষেণ করে।’ এরই ফলশ্রুতিতে হযরত আলী’র বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ প্রশমিত ও স্তব্ধ হয়ে যায়।”( )
অন্য আরেকটি কারণ: ইবনে ক্বাসীর তাঁর ‘আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায় কিতাবে লিখেন,
وَالْمَقْصُودُ أَنَّ عَلِيًّا لَمَّا كَثُرَ فِيهِ الْقِيلُ وَالْقَالُ مِنْ ذَلِكَ الْجَيْشِ ; بِسَبَبِ مَنْعِهِ إِيَّاهُمُ اسْتِعْمَالَ إِبِلِ الصَّدَقَةِ ، وَاسْتِرْجَاعِهِ مِنْهُمُ الْحُلَلَ الَّتِي أَطْلَقَهَا لَهُمْ نَائِبُهُ ، وَعَلِيٌّ مَعْذُورٌ فِيمَا فَعَلَ ، لَكِنِ اشْتُهِرَ الْكَلَامُ فِيهِ فِي الْحَجِيجِ ، فَلِذَلِكَ وَاللهُ أَعْلَمُ لَمَّا رَجَعَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ حَجَّتِهِ وَتَفَرَّغَ مِنْ مَنَاسِكِهِ وَرَجَعَ إِلَى الْمَدِينَةِ فَمَرَّ بِغَدِيرِ خُمٍّ ، قَامَ فِي النَّاسِ خَطِيبًا فَبَرَّأَ سَاحَةَ عَلِيٍّ ، وَرَفَعَ مِنْ قَدْرِهِ وَنَبَّهَ عَلَى فَضْلِهِ ; لِيُزِيلَ مَا وَقَرَ فِي نُفُوسِ كَثِيرٍ مِنَ النَّاسِ ، وَسَيَأْتِي هَذَا مُفَصَّلًا فِي مَوْضِعِهِ ، إِنْ شَاءَ اللَّهُ ، وَبِهِ الثِّقَةُ .
হযরত আলী’র অধীনস্থ সৈন্যরা বস্ত্রের পরিবর্তন নিয়েই কেবল ক্ষুব্ধ ছিলেন না, বরং তাঁরা সামগ্রিকভাবে গনীমতের মালামাল বণ্টন নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের বদৌলতে মুসলমানবৃন্দ অনেক উট লাভ করেন (গনীমত হিসেবে), কিন্তু তিনি সবাইকে সেগুলোর মালিকানা ও দখল নিতে বারণ করেন। আল-বায়হাক্বী বর্ণনা করেন হযরত আবূ সাঈদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে এ মর্মে যে, হযরত আলী তাঁদেরকে ওই উটগুলোতে চড়তেও নিষেধ করেন। কিন্তু তিনি যখন মক্কার উদ্দেশ্যে ইয়েমেন ত্যাগ করেন, তখন তাঁর সহ-অধিনায়ক মানুষের দাবির মুখে আত্মসমর্পণ করেন এবং সৈন্যদেরকে উটগুলোতে চড়ার অনুমতি দেন। হযরত আলী এটা দেখার পর রাগান্বিত হন এবং সহ-অধিনায়ককে দোষারোপ করেন।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيّ، قَالَ: اشْتَكَى النّاسُ عَلِيّا رِضْوَانُ اللهِ عَلَيْهِ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِينَا خَطِيبًا، فَسَمِعْته يَقُولُ: أَيّهَا النّاسُ، لاتشكوا عليّا، فو الله إنّهُ لَأَخْشَنُ فِي ذَاتِ اللهِ، أَوْ فِي سَبِيلِ اللهِ، مِنْ أَنْ يُشْكَى.
হযরত আবূ সাঈদ (রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু) বলেন: “আমরা মদীনা প্রত্যাবর্তনকালে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র কাছে হযরত আলী হতে আমাদের প্রত্যক্ষকৃত কঠোরতা সম্পর্কে উল্লেখ করি। তিনি (উত্তরে) বলেন: ‘থামো…আল্লাহর কসম, আমি জেনেছি সে আল্লাহরই ওয়াস্তে (বা খাতিরে) ভালো কাজ করেছে’।”
حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سُوَيْدِ بْنِ مَنْجُوفٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ بَعَثَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلِيًّا إِلَى خَالِدٍ لِيَقْبِضَ الْخُمُسَ وَكُنْتُ أُبْغِضُ عَلِيًّا، وَقَدِ اغْتَسَلَ، فَقُلْتُ لِخَالِدٍ أَلاَ تَرَى إِلَى هَذَا فَلَمَّا قَدِمْنَا عَلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَكَرْتُ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ ” يَا بُرَيْدَةُ أَتُبْغِضُ عَلِيًّا ”. فَقُلْتُ نَعَمْ. قَالَ ” لاَ تُبْغِضْهُ فَإِنَّ لَهُ فِي الْخُمُسِ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ ”.
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’কে (গনীমতের) খুমুস্ (তথা রাষ্ট্রীয় অংশ) আনতে হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র কাছে প্রেরণ করেন, আর আমি তাঁর প্রতি বৈরিতা রাখতাম। (ওই সময়) তিনি গোসল করেছিলেন। আমি হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদকে বলি: ‘আপনি কি এটা দেখতে পাচ্ছেন না?’ আমরা যখন হুজূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে হাজির হই, তখন বিষয়টি তাঁর কাছে পেশ করি। তিনি উত্তরে বলেন, “হে বোরায়দা, তুমি কি আলীর প্রতি শত্রুতাভাব পোষণ করো?” আমি উত্তরে বলি: ‘জি।’ তিনি বলেন: “বৈরিতা রেখো না, কেননা সে খুমুস্ হতে অধিকতর পাওয়ার হক্কদার।”
عَنْ بُرَيْدَةَ قَالَ غَزَوْتُ مَعَ عَلِيٍّ الْيَمَنَ فَرَأَيْتُ مِنْهُ جَفْوَةً فَلَمَّا قَدِمْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرْتُ عَلِيًّا فَتَنَقَّصْتُهُ فَرَأَيْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَغَيَّرُ فَقَالَ يَا بُرَيْدَةُ أَلَسْتُ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ قُلْتُ بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ.
হযরত বোরায়দা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেন, আমি হযরতে ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’র সাথে ইয়েমেন অভিযানে যাই এবং তাঁর তরফ থেকে শীতলতা প্রত্যক্ষ করি; তাই আমি (ফেরার পরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’এর কাছে এসে হযরত ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু)’র কথা উল্লেখ করে তাঁর সমালোচনা করি; এমতাবস্থায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র চেহারা মোবারক বদলে যেতে দেখি। আর তিনি বলেন: “ওহে বোরায়দা, আমি কি ঈমানদারদের তাদের নিজেদের চেয়েও কাছে নই?” আমি (উত্তরে) বলি: জি, এয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতঃপর তিনি বলেন: “আমি যার মওলা, আলী-ও তার মওলা।”
قَالَ حَدَّثَنِي بُرَيْدَةُ قَالَ بَعَثَنِي اَلْنَّبِيُّ صَلَّىَ اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَ عَلِيٍّ إِلَى الْيَمَنَ فَرَأيْتُ مِنْهُ جَفْوَةً فَلَمَّا رَجَعْتُ شَكَوْتُهُ إِلَىْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلْيْهِ وَسَلَّمَ فَرَفَعَ رَأسَهُ إِلَيَّ قَالَ يَا بُرَيْدَةُ مَنْ كُنْتُ مَوْلَاهُ فَعَلِيٌّ مَوْلَاهُ
হযরত বোরায়দা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে হযরত আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র সাথে ইয়েমেন অভিযানে প্রেরণ করেন এবং আমি তাঁর (হযরত আলীর) তরফ থেকে শীতলতা লক্ষ্য করি; আমি যখন প্রত্যাবর্তন করি, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করি। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন শির মোবারক (তাঁর দিকে) উঠিয়ে বলেন: “আমি যার মওলা, এই আলী-ও তারই মওলা।”
উক্ত ভাষণের মাধ্যমে আহলে বাইতের প্রতি সকলের মোহাব্বতের সম্পর্ক রাখার তাকীদ ও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর দ্বারা হযরত বুরাইদা আসলামী’র মন থেকে হযরত আলী’র প্রতি যে ধারণা ছিল তা দূরিভূত হয়ে যায়।
গাদিরে খুমের ঘটনা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি। গাদিরে খুমের ঘটনা মুসলিম জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষণীয়। গাদিরে খুমে রাসূল যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা মেনে চললে বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা অনেকাংশে কমে যায়।
বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ শেখ মুফিদ তাঁর আল-ইরশাদ বইয়ে লিখেছেন, নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে মোবাহেলার বেশ কিছু দিন পর বিদায় হজ্বের ঘটনা ঘটে। বিদায় হজ্বের কিছু দিন আগে রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে ইয়েমেনে পাঠান নাজরানের খ্রিষ্টানদের প্রতিশ্রুত অর্থ ও উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য। রাসূল (সা.) এ কাজে আলী(আ.)-কে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করেননি এবং অন্য কাউকে এ কাজের জন্য যোগ্য মনে করেননি।
'গাদির দিবসে মহানবী ডেকে বললেন সব মুসলমানকে
বলোতো, তোমাদের মওলা ও নবী কে?
সমস্বরে এলো উত্তর-তোমার রবই আমাদের মওলা,তুমিই নবী নি:সন্দেহে। তোমার কথার বরখেলাপ করবে না কেউ এ জগতে।
রাসূল বললেন-হে আলী ,আমার পরে তুমিই হবে সৃষ্টিকূলের নেতা, জাতিকে দেবে নির্দেশনা।
আমি যাদের নেতা আলীও তাদেরই নেতা। আমার নির্দেশ সবার প্রতি-সবার ভেতর থাকে যেন আলী-প্রীতি।
খোদা,তোমার কাছে আর্জি আমার
আলী যাদের ভালোবাসা,তুমিও তাদের ভালোবেসো
যারা তাকে শত্রু ভাবে,তুমিও তাদের শত্রু হইও। '
আল্লাহর নির্দেশে ১৮ই জ্বিলহজ্ব রাসূল (সা.), হজরত আলী (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করায় দিনটি হয়েছে মহিমান্বিত। এ দিনেই আল্লাহ ইসলাম ধর্মকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য অনুগ্রহ সম্পন্ন করেছেন। এই মহা অনুগ্রহের জন্য সব মুসলমানের উচিত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। এ কারণে যখনি ঈদে গাদির উপস্থিত হয় তখনি সব মুসলমানের উচিত এ দেয়া করা:
'আলহামদুল্লিল্লাযি জায়ালনা মিনাল মুতামাস্সিকিনা বিবিলায়াতি আমিরিল মুমিনিন।'
অর্থাত- আমিরুল মুমেমিন হজরত আলী (আ.)-এর নেতৃত্বের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হিসেবে সৃষ্টি করার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি।
লেখক: মৌলভী মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা ভুইয়া শিবপুরী
আল-ক্বাদলী-চিশতী, আল-নক্সবন্দী-মোজাদ্দেী-ওয়াইসী
পরিচালক, বিশ্ব আশেকান মজলিস পাক দরবার শরীফ
দুলালপুর, শিবপুর, নরসিংদী