ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারাম উৎসব উদযাপন

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৮:০৭ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৪ বার


 ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কারাম উৎসব উদযাপন

ছাইদুল ইসলাম, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি 

 

পুরুষরা সাদা ধুতি আর ঢিলেঢালা জামা পরে মাদল বাজাচ্ছেন। অন্যদিকে রঙিন কলস মাথায় নিয়ে নারীরা লাল হলুদ নীল রঙের শাড়ি, খোপায় বাহারি রংয়ের ফুল, কোমরে বিছা পড়ে মাদলের তালে তালে নাচছেন। মাদলের তালে নৃত্যের এই উৎসবের নামই ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব। কোথাও কোথাও এই উৎসব ডালপূজা বা বৃক্ষপূজা নামেও পরিচিত। 

 

 

নওগাঁর ধামইরহাটে কারাম বৃক্ষের ডাল পূজাকে ঘিরে ষষ্ঠতম ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব উদযাপন করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়। 

 

সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেল পাঁচটার সময় আগ্রাদ্বীগুন হাই স্কুল ফুটবল মাঠে আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের সভাপতি বিশত তিগ্যার সভাপতিত্বে প্রদীপ জ্বালিয়ে এর উদ্বোধন করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার কামরুজ্জামান সরদার।

 

নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে এই উৎসবের আয়োজন করে আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন আদিবাসী সমাজিক সংগঠন ও আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা সম্মেলন কমিটি। আর এতে সহযোগিতা করে আগ্রাদ্বীগুন আদিবাসীদের স্থায়িত্বশীলতা অর্জন (ASA) প্রকল্প ২য় ধাপ (Ext)।

 

বিকেলে সরজমিনে দেখা যায়, খোলা মাঠে বাঁশের মাথায় সাদা পতাকা (ঝান্ডি) বেঁধে এর চারদিক ঘিরে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নারী-পুরুষের নাচ-গান। এতে ২৫টি সাংস্কৃতিক দল নাচ-গান পরিবেশন করে। 

 

এ সময় নারীদের হলুদ, লাল ও সাদা, লাল পাড়ের শাড়ি, শাখা-সিঁদুর, গায়ে অলংকার, খোঁপায় বাহারি রঙের ফুল, হাতে ফুলের চুরি, পায়ে নুপুর, মাথায় ফুলের কলসসহ নানা সাজে অনুষ্ঠানে সমবেত হয়ে নৃত্য পরিবেশন করে। এই আয়োজন দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভিড় করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বাদ যায়নি শিশু-কিশোরেরাও।

 

এক দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসবকে ঘিরে সাঁওতাল, ওঁরাও, মাহাতো, পাহান, মাহালিসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা দুপুরের পর থেকে বদলগাছি, সাপাহার, দেবিপুর, পত্নীতলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৃত্য পরিবেশনের জন্য দলবদ্ধ হয়ে অনুষ্ঠানে সমবেত হতে শুরু করে। এবং তাঁদের নিজ নিজ রীতিতে দলবদ্ধ হয়ে কারাম উৎসবে নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। 

 

কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য নারী পুরুষেরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার প্রথম দিন উপোস থাকে। উপোস অবস্থায় মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনে। একারণে এর নাম কারাম উৎসব। 

 

কারাম উৎসবে অংশগ্রহণকারী মুনমুন ওরাও বলেন, ‘ভাদ্র মাসের এই সময় পূজা শেষে উপোস থাকা কিশোরীরা চিতই পিঠা, কুশলি পিঠা প্রভৃতি খাবার নিয়ে পরস্পরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে উপোস ভাঙে। এরপর নিজেদের মধ্যে সংগ্রহ করা চাল, ডালে তৈরি খিচুড়ি দিয়ে উপস্থিত স্বজন ও অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয়।'

 

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর উৎসবের শুরুতে বাপ দাদাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে প্রাচীন প্রথা মেনে ধর্মীয় রীতিতে কারাম গাছের ডাল মাটিতে পুঁতে পূজা করে বিভিন্ন বয়সের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারী পুরুষেরা। বিপদ-আপদ ও অভাব-অনটন থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে মূলত এই কারাম পূজা পালন করা হয়ে থাকে।’

 

আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের সভাপতি বিশত তিগ্যা সময়ের আলোকে বলেন, ‘নিজেদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দিতে এই উৎসবের আয়োজন করে আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন আদিবাসী সমাজিক সংগঠন ও আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা সম্মেলন কমিটি।’

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ধামইরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমাম জাফর, উপজেলা জনসাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মিলন কুমার সরকার, আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন মোস্তাক, আগ্রাদ্বীগুন কলেজের অধ্যক্ষ মোজাফফর রহমান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান পরিচালক যোগেন্দ্রনাথ সরকার।

 

এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল (ASA) প্রকল্পের মাঠ অফিসার বলাই মারান্ডী, পুষ্পিতা মার্ডী, কুরশিত পাহান, যতিন টপ্য প্রমূখ। 

 


   আরও সংবাদ