ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015
সংখ্যালঘুদের সম্পদ হরণে আওয়ামী লীগ শীর্ষে: জামায়াতে ইসলামীর নাম নেই, আন্তর্জাতিক রিপোর্টে চাঞ্চল্যকর তথ্য

সংখ্যালঘুদের সম্পদ হরণে আওয়ামী লীগ শীর্ষে

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:৪৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১২৩ বার


সংখ্যালঘুদের সম্পদ হরণে আওয়ামী লীগ শীর্ষে

হারুনুর রশিদ জয়পুরহাট 

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্ক চললেও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ও একাডেমিক গবেষণা বলছে— রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু সম্পদ দখলের সঙ্গে যুক্ত।

এমনকি একাধিক আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক ও মানবাধিকার সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৬৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের হাজার হাজার একর জমি রাষ্ট্র বা ব্যক্তিগতভাবে দখল হয়েছে।


 শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন, বাস্তবে সংখ্যালঘু বঞ্চনা

১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে “শোষণমুক্ত সমাজ” ও “ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি”র অঙ্গীকারে জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ।
কিন্তু স্বাধীনতার পর, ক্ষমতায় এসে দলটি ১৯৭৪ সালে ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন (Vested Property Act)’ নামে এমন একটি আইন পাশ করে, যার মাধ্যমে হাজারো সংখ্যালঘু নাগরিকের জমি ও সম্পদ রাষ্ট্রের নামে নিয়ে নেওয়া হয়।

আইনটি মূলত পাকিস্তান আমলের Enemy Property Act-এরই নতুন নাম, তবে কার্যত একইভাবে সংখ্যালঘু হিন্দুদের সম্পদ দখল চলতে থাকে।

 আইনের ধারাবিবরণী: শত্রু থেকে অর্পিত সম্পত্তি

সময়কাল    আইন / নাম    মূল বিষয়

১৯৬৫ (পাকিস্তান আমলে)    শত্রু সম্পত্তি আইন (Enemy Property Act)    ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চলাকালে ‘শত্রু দেশের নাগরিকদের’ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। অনেক হিন্দুর সম্পত্তি তখন এই আইনের আওতায় পড়ে।
১৯৭৪ (বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর)    অর্পিত সম্পত্তি আইন (Vested Property Act)    স্বাধীনতার পর আগের আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়, কিন্তু সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখল কার্যত অব্যাহত থাকে।
২০০১ ও পরবর্তীতে    অর্পিত সম্পত্তি ফেরত আইন (Vested Property Return Act)    সরকার প্রতিশ্রুতি দেয় সম্পত্তি ফেরত দেওয়া হবে, কিন্তু বাস্তবে খুব অল্প সম্পত্তি ফেরত গেছে।


যাদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল

হিন্দু সংখ্যালঘুদের মালিকানাধীন জমি — যাদের বিরুদ্ধে “ভারতের পক্ষে থাকা” বা “ভারতে চলে যাওয়া”র অভিযোগ ছিল।
 অনুপস্থিত মালিকদের জমি — যারা দেশত্যাগ করেছিল বা দীর্ঘ সময় নিজ সম্পত্তি ব্যবহার করেনি।

এই দুটি কারণেই হাজারো হিন্দু পরিবার তাদের পৈতৃক জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে।


 আন্তর্জাতিক গবেষণার পরিসংখ্যান

বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় রাজনৈতিক দলভিত্তিক সম্পত্তি দখলের হার নিম্নরূপ:

গবেষণা সংস্থা / উৎস    সময়কাল    দলভিত্তিক সম্পত্তি দখলের হার

Vivekananda International Foundation (VIF), ভারত    ১৯৬৫–২০০১    আওয়ামী লীগ: ৪৪.২%, বিএনপি: ৩১.৭%, অন্যান্য: ২৪.১%
ড. আবুল বারকাত ও আবুল হোসেন, “Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh”    ১৯৬৫–২০০১    আওয়ামী লীগ: ৪৪%, বিএনপি: ৩১%, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য: ২৫%
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (ASK) এবং ALRD রিপোর্ট    ২০০০-এর দশক    উভয় প্রধান দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) ক্ষমতায় থাকাকালে স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ দখলের ঘটনায় যুক্ত ছিল।


 জামায়াতে ইসলামী নাম নেই কেন?

সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হলো— এসব আন্তর্জাতিক রিপোর্টে জামায়াতে ইসলামী দলের নাম উল্লেখ নেই।
অর্থাৎ, সংখ্যালঘু সম্পদ হরণের অভিযোগে এই দলের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার প্রমাণ গবেষণাগুলোতে পাওয়া যায়নি।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, যেখানে জামায়াত প্রায়শই “ধর্মীয় রাজনীতি”র জন্য সমালোচিত, সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার দাবিদার দলগুলিই কি বাস্তবে সংখ্যালঘুদের ক্ষতির জন্য দায়ী?


 বিশ্লেষণ: ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ না রাজনৈতিক সুবিধাবাদ?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মূল দর্শন ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা ও বৈষম্যহীন সমাজ। কিন্তু স্বাধীনতার পর ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ বহাল রেখে দলটি সেই নীতির বিপরীতে গিয়েছে।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সময়েও একই ধারা অব্যাহত থাকায় সংখ্যালঘুদের ওপর আস্থা হারানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।


উপসংহার

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সম্পদহরণের ইতিহাস রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনিষ্ঠা নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
যেখানে আওয়ামী লীগ নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারক বলে দাবি করে, সেই দলটির নামই সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখলে সবচেয়ে বেশি উঠে আসা— নিঃসন্দেহে তা এক নৈতিক ও রাজনৈতিক দ্বৈততার প্রতিচ্ছবি।


   আরও সংবাদ