স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর, ২০২৫ ১৬:১৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২৩ বার
সৌদি আরবে বক্সিং বা ইউএফসি ইভেন্টে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে প্রায়ই ভিআইপি গ্যালারিতে দেখা যায়। তবে গত সপ্তাহে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের ডিফেন্ডার দারা ও’শেকে যেভাবে কনুই মেরে লাল কার্ড দেখলেন, তা যেন সেই ইউএফসি থেকেই অনুপ্রাণিত!
ক্যারিয়ারের প্রথম এই লাল কার্ডের মাশুল বেশ চড়া হতে পারে রোনালদোর জন্য। ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের শেষলগ্নে পাওয়া এই শাস্তির কারণে আগামী জুনে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে নিষিদ্ধ থাকতে পারেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
রোনালদোর অনুপস্থিতিতে অবশ্য পর্তুগাল কোনো অসুবিধায় পড়েনি। বরং রোববার লিসবনে আর্মেনিয়াকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে তারা। গত দুই বছরের মধ্যে এটি দ্বিতীয়বার, যেখানে রোনালদোকে ছাড়াই ৯ গোল করল পর্তুগাল (এর আগে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে ৯-০ জয়)।
৪০ পেরোনো রোনালদো কি এখনো সেরা অপশন? বিশ্বকাপের আর মাত্র ২০০ দিনের মতো বাকি। কিন্তু রোনালদোর সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এবং তাকে ছাড়া দলের বিশাল জয় কোচ রবার্তো মার্টিনেজকে নতুন করে ভাবাচ্ছে। ৫ বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকার বর্তমান বয়স ৪০, বিশ্বকাপের সময় হবে ৪১। তাকে কি শুরুর একাদশে রাখা উচিত, নাকি তরুণদের ওপর ভরসা করা উচিত, সেই প্রশ্ন এখন জোরালো।
আল নাসরের সঙ্গে ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তি বাড়ানো রোনালদো মার্টিনেজের অধীনে নেশনস লিগ ও বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১৪ ম্যাচে ১৩ গোল করে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। স্পেনের বিপক্ষে নেশনস লিগ ফাইনালে তার গোলেই সমতায় ফিরেছিল পর্তুগাল, যা পরে টাইব্রেকারে জেতে তারা।
পরিসংখ্যান যা বলছে নেতৃত্ব আর অভিজ্ঞতায় রোনালদো অতুলনীয় হলেও বয়সের ছাপ তার পারফরম্যান্সে স্পষ্ট। নেশনস লিগে তার সর্বোচ্চ গতি ছিল ৩১.৭ কিমি/ঘণ্টা, যা তরুণ স্প্যানিশ তারকা লামিন ইয়ামালের চেয়ে সামান্য বেশি হলেও টুর্নামেন্টের সেরা ৪০০ গতির তালিকায় নেই। তার সতীর্থ নুনো মেন্ডেস যেখানে ৩৬.৬ কিমি/ঘণ্টা গতিতে দৌড়েছেন।
এছাড়া মাঠে দৌড়ানোর (গ্রাউন্ড কাভার) দিক থেকেও পিছিয়ে রোনালদো। নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার আর্লিং হালান্ড রোনালদোর চেয়ে প্রায় ২০০ মিনিট কম খেলে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছেন। সুইডিশ স্ট্রাইকার ভিক্টর গিওকারেসও তার চেয়ে অনেক বেশি সচল ছিলেন।
পর্তুগাল দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে দিয়োগো জতার মর্মান্তিক মৃত্যু। গত জুলাইয়ে স্পেনে এক সড়ক দুর্ঘটনায় লিভারপুলের এই ফরোয়ার্ড ও তার ভাই আন্দ্রে সিলভা প্রাণ হারান। ৪৯ ম্যাচে ১৪ গোল করা জতা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ স্কোয়াডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতেন। এই শোক কাটিয়ে ওঠা দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
জতার অবর্তমানে বিকল্প হিসেবে আছেন গনসালো রামোস, জোয়াও ফেলিক্স ও রাফায়েল লেয়াও। তবে পিএসজিতে খেলা রামোস ক্লাবে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন না, কারণ সেখানে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলছেন ২০২৫ সালের ব্যালন ডি'অর জয়ী উসমান ডেম্বেলে। ফেলিক্স আল নাসরে রোনালদোর সতীর্থ হিসেবে খেলছেন কিছুটা পেছনের পজিশনে। আর এসি মিলানের লেয়াও মূল স্ট্রাইকার হিসেবে পরীক্ষিত নন, তিনি মূলত উইংয়েই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বিকল্পের অভাব এবং রোনালদোর গোল করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতার কারণে তাকে বাদ দেওয়া কঠিন। সৌদি প্রো লিগে টানা দুই মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ২০২৪-২৫ মৌসুমেও ৩০ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে তার ৫টি গোলের ৩টিই এসেছে সিক্স-ইয়ার্ড বক্সের ভেতর থেকে, যা তার 'পজিশনিং' সেন্সের প্রমাণ দেয়।
বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে দাপটের সঙ্গে খেলা এখন আর বিরল নয়। এনএফএল কিংবদন্তি টম ব্র্যাডি ৪৩ বছর বয়সে সুপার বল জিতেছেন, বাস্কেটবলের লেব্রন জেমস ৪১ বছরেও এনবিএ কাঁপাচ্ছেন। রোনালদোর ফিটনেস ও নিবেদন তাকে এই কাতারে রাখে।
অন্য কোনো ৪১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার হলে হয়তো তাকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করা সহজ হতো। কিন্তু নামটা যখন রোনালদো, তখন তাকে বেঞ্চে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কোচের জন্য সবসময়ই কঠিন।