ঢাকা, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দৃষ্টি সংযতকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫২৫ বার


দৃষ্টি সংযতকারীর জন্য জান্নাতের ঘোষণা

চোখ জীবের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ চোখকে অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করে তা ব্যবহারে সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মানবজাতিকে সতর্ক করে বলেছেন তোমাদের চোখ যা দেখে আমি তা দেখি এবং পরকালে এ জন্য তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে।

চোখ আল্লাহর অনুগ্রহ : জীবের প্রতি আল্লাহর অসংখ্য অগণিত অনুগ্রহের মধ্যে যে কয়েকটির কথা আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন চোখ তার অন্যতম। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি কী তাকে চোখ দান করিনি?’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ৪)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে সাদিতে লেখা হয়েছে, চোখ মানুষের জন্য অনুগ্রহ তার সৌন্দর্য, দৃষ্টিশক্তি, ভাষা ইত্যাদি অপরিহার্য কল্যাণের বিবেচনায়। তবে এসব অনুগ্রহ পার্থিব জীবনের বিচারে।

চোখপ্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা কিভাবে আদায় করব : আল্লাহর বাণী ‘আমি কী তাকে চোখ দান করিনি?’-এর ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, আল্লাহ চোখ দানের কথা এ জন্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যেন চোখ দিয়ে দেখে নেয় আল্লাহ তার জন্য কি হালাল করেছেন এবং কি হারাম করেছেন। সে অনুযায়ী সে যেন তার চোখে পর্দা টানিয়ে দেয় তথা সংযত হয়। অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তির কল্যাণকর ও যথাযথ ব্যবহারই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সর্বোত্তম পথ। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

আল্লাহ দেখছেন আমাকে : আল্লাহ মানুষকে পার্থিব জীবনে কিছুটা ইচ্ছা-স্বাধীনতা দিয়েছেন, তবে তিনি সর্বদা দেখছেন মানুষ তার পাওয়া সীমিত স্বাধীনতা কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে; বরং মানুষ যখন মনে করে তাকে কেউ দেখছে না, তখনো মহান আল্লাহ তাকে দেখেন এবং তাঁর ফেরেশতারা তার কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করে রাখেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘সে (মানুষ) কী ধারণা করে তাকে কেউ দেখছেন না?’ (সুরা বালাদ, আয়াত : ৭)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে কি জানে না যে আল্লাহ দেখেন?’ (সুরা আলাক, আয়াত : ১৪)

চোখের পাপ আল্লাহর অজ্ঞাত নয় : অসংযত ও পাপ দৃষ্টি সাধারণত অন্যের অগোচরে থেকে যায়। তাই মানুষ পাপ দৃষ্টির ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন।’ (সুরা গাফির, আয়াত : ১৯)

পথে-ঘাটে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ : সাধারণত পথে-ঘাটে পাপ দৃষ্টিপাত বেশি হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) পথ চলার সময় দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। নবী (সা.) বললেন, ‘রাস্তার হক হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎ কাজের নির্দেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২২৯)

পাপ দৃষ্টি হৃদয় কলুষিত করে : পাপ দৃষ্টি মানুষের হৃদয়কে কলুষিত করে। তাই পবিত্র কোরআনে পরিশুদ্ধ হৃদয় লাভে দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন! তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০)

দৃষ্টি সংরক্ষণকারীর জন্য জান্নাত : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা আমাকে ছয়টি জিনিসের নিশ্চয়তা দাও, আমি তোমাদের জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব: যখন কথা বলবে সত্য বলো, অঙ্গীকার করলে পূরণ করো, আমানত রাখলে আদায় করো, লজ্জাস্থান হেফাজত করো, দৃষ্টি অবনত রাখো, হাত সংযত রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ)। আল্লাহ সবাইকে দৃষ্টি অবনত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।


   আরও সংবাদ