ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দাপ্তরিক কাজে সতর্কতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬০৭ বার


দাপ্তরিক কাজে সতর্কতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য

আবুল আলিয়া (রহ.) বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেওয়া হতো যে আমরা যেন কোনো বস্তু খাদেমের কাছে দেওয়ার সময় সিলমোহর করে, ওজন করে বা গুনে দিই, যাতে তার অভ্যাস খারাপ না হতে পারে বা আমাদের কেউ কুধারণার শিকার না হয়।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১৬৬)

হাদিসবিশারদরা বলেন, হাদিসে মূলত দায়িত্বশীল ও নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিদের সতর্ক করা হয়েছে। তারা যেন অধীনদের সততার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হয়ে নিজের করণীয় কাজটি করে ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করে। তারা এমন অসতর্ক থাকবে না যে তাদের কর্মীরা অসৎ পন্থা অবলম্বনে প্রলুব্ধ হয়। সচেতনতা মুমিনের বৈশিষ্ট্য : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি একই গর্তে দুইবার দংশিত হয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৩)

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘মুমিন হবে বিচক্ষণ ও সচেতন। তার ভেতর কোনো প্রকার অসচেতনতা থাকবে না, যাতে সে বারবার প্রতারিত না হয়। কেউ কেউ বলেন, মুমিন দুনিয়ায় কোনো অপরাধ করার পর শাস্তি হলে পরকালে আর শাস্তি না হওয়াই হাদিসের উদ্দেশ্য। আমি বলি, ব্যাপকার্থে এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করা সম্ভব। তবে মূল উদ্দেশ্য অসচেতনতা থেকে সতর্ক করা এবং স্বভাবজাত বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা ব্যবহার করা।’ (ফাতহুল বারি : ১০/৫৩০)

সতর্কতার দুই উদ্দেশ্য :  হাদিসে সতর্কতার দুটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো অসতর্কতার সুযোগে কর্মী যেন অসৎ কোনো কাজের প্রতি প্রলুব্ধ না হয় এবং কর্মীর প্রতি যেন অহেতুক মন্দ ধারণা তৈরি না হয়। সাধারণ সতর্কতা অবলম্বন এবং অহেতুক মন্দ ধারণা পরিহার উভয়টির নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী শরিয়ত। এমনকি চুরির শাস্তি প্রমাণের জন্য সম্পদ ‘সংরক্ষিত’ থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে। এটাই সাহাবায়ে কেরামের অভ্যাস ছিল। সালমান (রা.) বলেন, ‘আমি খাদেমের কাছে কোনো বস্তু দেওয়ার সময় গণনা করে দিই, যাতে কুধারণা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১৬৭)

অহেতুক মন্দ ধারণা নয় : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ধারণা-অনুমান সম্পর্কে তোমরা সাবধান হও। কারণ অলীক ধারণা পোষণ সবচেয়ে বড় মিথ্যা। তোমরা পরস্পর গোয়েন্দাগিরি করো না, ঝগড়া-বিবাদ করো না, অসাক্ষাতে দোষচর্চা কোরো না, হিংসা ও ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করো না। আল্লাহর বান্দারা, সবাই ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৬)

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) অহেতুক মন্দ ধারণা পোষণ এবং সে মন্দ ধারণার ভিত্তিতে গোয়েন্দাগিরি, বিবাদ, দোষচর্চা ও বিদ্বেষ পোষণের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন; বরং সবার সঙ্গে ভাইসুলভ আচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

কর্মী হবে বিশ্বস্ত : মালিক অসতর্ক ও অসচেতন হলেও কর্মী বিশ্বস্ততার পরিচয় দেবে। পবিত্র কোরআনে আদর্শ কর্মীর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘তাদের একজন বলল, হে আমার পিতা, তুমি একে মজুর নিযুক্ত করো। কেননা তোমার মজুর হিসেবে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী, বিশ্বস্ত।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)

আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে সাদিতে লেখা হয়েছে, ‘শক্তিশালী হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য যে কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা সম্পন্ন করার সামর্থ্য থাকা আর বিশ্বস্ত হওয়ার অর্থ খিয়ানত না করা। কাউকে কোনো কাজে নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে এ দুই বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। চাই তাকে মজুর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক বা অন্য কোনো পদে। কেননা এ দুটি গুণের উভয়টি বা একটির অনুপস্থিতি ঘটলে সংকট তৈরি হয় এবং এ দুই গুণের সমন্বয়ে কাজ পূর্ণতা লাভ করে।’

আল্লাহ সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


   আরও সংবাদ