ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

দান-সদকায় আয়েশা (রা.)-এর অনুরাগ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৬৮৪ বার


দান-সদকায় আয়েশা (রা.)-এর অনুরাগ

ইসলাম ডেস্ক: একজন অসাধারণ মুসলিম নারী ব্যক্তিত্ব। বাল্যকালেই তাঁর মাঝে ছিল মহত্ত্ব, বড়ত্ব ও সৌভাগ্যের আভাস। তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম মেধাবী নারী। রহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সহধর্মিণী। তিনি ছিলেন রাসুল (সা.)-এর সর্বাধিক প্রিয় নারী।

প্রিয় নবীর সান্নিধ্য তাঁকে সোনার মানুষে পরিণত করেছে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান নারী। তাঁর মহৎ গুণগুলোর অন্যতম গুণ ছিল তিনি অধিক পরিমাণে দান-সদকা করতে পছন্দ করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘আয়েশা (রা.)-এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে রিজিক হিসেবে যা কিছু আসত, তা জমা না রেখে সদকা করে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৫০৫)

শুধু তা-ই নয়, তিনি অন্য নারীদের সাধ্যমতো সদকা করার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতেন। আয়েশা (রা.) বলতেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কোনো স্ত্রী যদি তার ঘর থেকে বিপর্যয় সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া খাদ্যদ্রব্য সদকা করে, তবে এ জন্য সে সওয়াব লাভ করবে আর উপার্জন করার কারণে স্বামীও সওয়াব পাবে এবং খাজাঞ্চিও অনুরূপ সওয়াব পাবে। তাদের একজনের কারণে অন্যজনের সওয়াবে কোনো কমতি হবে না। (বুখারি, হাদিস : ১৪২৫)

দান-সদকার প্রতি তাঁর আগ্রহ এতটাই বেশি ছিল যে তাঁর বেশি দান-সদকা নিয়ে মন্তব্য করায় তিনি তাঁর প্রিয় বোনের ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর সঙ্গে অভিমান করে বহুদিন কথা বলেননি।

একবার আয়েশা (রা.)-এর কাছে খবর এলো যে তাঁর কোনো একটি জিনিস দান করার ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! হয়তো আয়েশা (রা.) এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন, নয়তো আমি তাঁকে সম্পদদানের অযোগ্য ঘোষণা করব।’ আয়েশা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘সত্যি কি সে এ ধরনের কথা বলেছে?’ লোকেরা বলল, হ্যাঁ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করছি যে আমি ইবনে জুুবায়েরের সঙ্গে কখনো কথা বলব না।’ এ বিচ্ছেদকাল দীর্ঘায়িত হলে ইবনে জুবায়ের (রা.) আয়েশা (রা.)-এর কাছে মধ্যস্থতাকারী পাঠান। কিন্তু আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো কারো সুপারিশ গ্রহণ করব না এবং আমি আমার শপথও ভঙ্গ করব না।’ ব্যাপারটি ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর জন্য দীর্ঘায়িত হলে তিনি মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ ইবনে আবদে ইয়াগুসের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা দুজন বনু জোহরার লোক ছিলেন। ইবনে জুবায়ের (রা.) তাঁদের বলেন, ‘তোমাদের দুজনকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, আমাকে তোমরা আয়েশা (রা.)-এর সামনে পৌঁছিয়ে দাও। কেননা আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার মানত মানা তাঁর জন্য জায়েজ হয়নি।’ অতএব মিসওয়ার ও আবদুর রহমান (রা.) চাদর গায়ে জড়িয়ে ইবনে জুবায়ের (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে চললেন। শেষ পর্যন্ত দুজন আয়েশা (রা.)-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তাঁরা সালাম দিয়ে বলেন, আমরা কি ভেতরে আসতে পারি? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আসো।’ তাঁরা বলেন, হে উম্মুল মুমিনিন। আমরা সবাই কি ভেতরে আসতে পারি? আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, সবাই আসো।’ আয়েশা (রা.) জানতেন না যে তাঁদের সঙ্গে ইবনে জুবায়ের (রা.)-ও আছেন। তাঁরা ভেতরে প্রবেশ করলে ইবনে জুবায়ের (রা.) পর্দার ভেতর গিয়ে (তাঁর খালা) আয়েশা (রা.)-কে জড়িয়ে ধরে আল্লাহর দোহাই দিতে লাগলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। মিসওয়ার ও আবদুর রহমানও তাঁকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে ইবনে জুবায়ের (রা.)-এর সঙ্গে কথা বলতে এবং তাঁর ওজর ও অনুশোচনা গ্রহণ করতে বলেন। তাঁরা দুজন বলেন, আপনি তো জানেন, নবী (সা.) সালাম-কালাম ও দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কোনো মুসলমানের জন্য তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের বেশি দেখা-সাক্ষাৎ ও সালাম-কালাম বন্ধ রাখা জায়েজ নয়।’

তাঁরা দুজন যখন এভাবে আয়েশা (রা.)-কে বোঝালেন এবং বারবার এর ক্ষতিকর দিক স্মরণ করিয়ে দিলেন, তখন তিনিও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি (কথা না বলার) মানত ও শপথ করে ফেলেছি এবং অনেক কঠিন মানত।’ কিন্তু তাঁরা দুজন বারবার তাঁকে বোঝাতে থাকেন, যতক্ষণ না তিনি ইবনে জুবায়েরের সঙ্গে কথা বলেন। অতঃপর আয়েশা (রা.) তাঁর শপথ ভঙ্গের কাফফারা হিসেবে ৪০ জন গোলাম আজাদ করেন। এরপর যখনই এ মানতের কথা তাঁর স্মরণ হতো, তখনই তিনি কাঁদতেন, এমনকি চোখের পানিতে তাঁর ওড়না ভিজে যেত। (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, আহমাদ, আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩৯৮)

নবীপত্নী আয়েশা (রা.)-এর এই ঘটনা থেকে অনুমান করা যায় যে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা তাঁর কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এভাবে যদি প্রত্যেক মানুষ রাসুল (সা.)-এর সুন্নতগুলো গুরুত্বসহকারে আঁকড়ে ধরত, তাহলে আমাদের সমাজটা আরো সুন্দর হতো। মহান আল্লাহ সবাইকে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন।


   আরও সংবাদ