ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৫৮ বার


সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ

ইসলাম ডেস্ক: মানুষের চরম ভোগলিপ্সা প্রসঙ্গে ‘দ্য প্রিন্স’ গ্রন্থে ম্যাকিয়াভ্যালি বলেছেন, ‘মানুষ দ্রুত পিতৃবিয়োগ ব্যথা বিস্মৃত হয়; কিন্তু কখনোই সে তার পৈতৃক সম্পত্তির মায়া ভুলতে পারে না।’ মানুষের দুরন্ত বাসনার সর্বগ্রাসী জিহ্বা শান্তির পৃথিবীতে কখনো বা অশান্তির জ্বলন্ত শিখায় ফুঁক দেয়। কিন্তু ভূমিহীন যারা, তারাও এই মাটির পৃথিবীতেই বিচরণ করে আবার ভূমির দাবি ও দখলের জন্য আপনজনের ভূমিকায় অন্তরের উচ্চারণ, ‘মাটি কেন দুভাগ হয় না।’

মানবপ্রবৃত্তির স্বাভাবিকতা প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আছে :

‘মনোরম করা আছে কামনা অপার

মানুষের কাছে যাহা অধিক চাওয়ার

সন্তান নারী আর সোনা ও রুপার

অশ্ব পশুরাজি ক্ষেত ও খামার।’

(কাব্যানুবাদ, সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪)

ভূমি নিয়ে বিরোধপূর্ণ ভূমিকায় আপনজনের শোণিত ধারায় স্নাত হয় শান্তির মায়াময় পবিত্র ধরিত্রী। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘ইন্নাল আরদা লিল্লাহ—নিশ্চয়ই ভূমির মালিক আল্লাহ, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকার দান করেন। মানবিক সম্পর্কের স্বার্থের দ্বন্দ্বে মানুষ হয়ে ওঠে অন্ধ এবং চায় ছলে-বলে, কলে-কৌশলে অন্যের ওপর আধিপত্য করতে। কেননা প্রাচুর্যের মোহ মানুষের সহজাত—পরিতাপ প্রত্যেক পশ্চাতে নিন্দুকের জন্য, যে সম্পদ জমা করে, গণনা করে এবং ধারণা করে যে এটাই তাকে অমর করবে।’ (সুরা : হুমাজা, আয়াত : ১-৩)

প্রাচুর্যের মোহ যতই মানুষকে অস্থির রাখুক না কেন, সব সম্পদের প্রকৃত মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষের মালিকানা হলো সাময়িক ও সীমিত। আল-কোরআনের ভাষায়, ‘আল্লাহই সব জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং অতঃপর এর ব্যবহার ও প্রয়োগের জন্য বিধি-বিধানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’ (সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ৫০)

সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সবার কাম্য চাহিদা পূরণ করা ইসলামের শাশ্বত নীতি। একের ভোগাকাঙ্ক্ষায় অন্যের ভোগান্তি ইসলাম সমর্থন করে না। তাই প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যার ঘর নেই এ দুনিয়ায় সে ঘর পাবে, যার সম্পদ নেই সে সম্পদ পাবে; কিন্তু যার বিবেক নেই সে সম্পদ জমা করবে।’ (মুসনাদ আহমদ)

রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘থাকার জন্য একটি ঘর, লজ্জা নিবারণের জন্য একখণ্ড বস্ত্র, ক্ষুধা নিবারণের জন্য কয়েকটি রুটি, পানি পানের জন্য একটি পাত্র—এর অতিরিক্ত কোনো সম্পদের অধিকারী হওয়ার হক আদম সন্তানের নেই।’ (তিরমিজি)

সম্পদ বণ্টনে ইসলামের উত্তরাধিকার নীতি খুবই কার্যকর। মৃত ব্যক্তির ঋণ, অসিয়ত ও দাফনের খরচের পর অবশিষ্ট সম্পদ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সুরা নিসার ৭, ১২, ১৭৭ নম্বর আয়াতসহ আল-কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আবার জমিজমা ভোগদখলহীন ফেলে রাখা অথবা অন্যায়ভাবে অন্যের জমি দখলে রাখা ইসলামে নিষিদ্ধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) ভূপৃষ্ঠকে তোমাদের জীবিকার্জনের জন্য নরম ও অনুকূল করে দিয়েছেন।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১৫)

অন্যদিকে অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে প্রিয় নবী (সা.)-এর কঠোর উচ্চারণ, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের এক বিঘত জমি আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত স্তবক জমি ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

বস্তুত জীবনধারণের জন্য জীবিকার্জন একটি ফরজ কর্তব্য এবং এর পদ্ধতি হতে হবে ‘হালালান তাইয়্যেবা’ বা বৈধ ও পবিত্র। তাই বাড়ি-গাড়ি, জমিজমার মালিক হওয়া নিন্দনীয় নয়। শুধু মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার সব ক্রিয়াকর্মের ভিত্তি বা জীবননাট্যের মঞ্চ হলো মাটি বা জমি। আর মাটিতেই তাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

‘মাটি হতে তোমাদের সৃষ্টি করিয়া

মাটিতেই তোমাদের নিব ফিরাইয়া

মাটি হতে পুনরায় আনব বের করিয়া।’

(কাব্যানুবাদ, সুরা : ত্ব-হা, আয়াত : ৫৫)

আর সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর রেঙ্গুনে নির্বাসিত দিনগুলোতে তাঁর কবরের জন্য যে স্মৃতিফলক রচনা করেছিলেন তা হলো :

‘কতই না দুর্ভাগ্য জাফর তোমার

ভারতের বুকে না মিলিলো—

মাটি (দুগজ) মাত্র হাত চার।’


   আরও সংবাদ