ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৭৮৯ বার


ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা এখন আধুনিক ব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃত

ইসলাম: দুনিয়ার তাবৎ অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা ইসলামী অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং বিষয়ে আজকাল বেশি উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। ইসলামী অর্থনীতির কল্যাণকারিতা নিয়ে আজ তেমন একটা দ্বিধা আছে বলে মনে হয় না। তবে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের প্রায়োগিক কিছু দিক নিয়ে কতগুলো অযাচিত প্রশ্ন এবং সন্দেহ অনেকের মধ্যে কাজ করছে। কতিপয় বিষয় নিয়ে কারো কারো মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর একটি হলো ‘বাই-বিনিয়োগ’ পদ্ধতি। কেউ কেউ এটাকে সুদি ব্যাংকের ঋণদান পদ্ধতির মতোই মনে করেন এবং এই দুইয়ের তফাতকে গুলিয়ে ফেলেন।

তাঁদের প্রশ্ন হলো, ঋণদান পদ্ধতিতে প্রচলিত ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ আদায় করে। আবার ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্রয়-বিক্রয় বা বাই পদ্ধতিতেও বিক্রীত পণ্যের ওপর নির্ধারিত হারে মুনাফা ধার্য করা হয়। ইসলামী ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকের মতোই মুনাফা আদায় করে সন্তুষ্ট। এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগে ইসলামী ব্যাংক কখনো লোকসান বহন করে না। বিষয়টি নিয়ে যে সন্দেহ আছে তা নিরসন হওয়া দরকার।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত আছে-বাই-পদ্ধতি (বাই-মুয়াজ্জাল, বাই-মুরাবাহা, বাই-সালাম এবং ইসতিসনা), মুদারাবা, মুশারাকা এবং ইজারা পদ্ধতি। তবে এ কথা সত্য যে ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে কল্যাণকর বিনিয়োগ পদ্ধতি হলো মুদারাবা ও মুশারাকা। কিন্তু এই দুই পদ্ধতিতে বিনিয়োগের বেলায় প্রয়োজন বিশ্বস্ত গ্রাহক এবং সঠিক ব্যাবসায়িক পরিবেশ। যেটা সাধারণত ব্যবসায়ীদের মধ্যে নানা কারণে পরিলক্ষিত হয় না। তাই বাই-পদ্ধতিতে বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি প্রচলিত, যা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহসম্মত। এই পদ্ধতি অবশ্যই প্রচলিত ব্যাংকের বাই-পদ্ধতির মতো নয়; বরং বাই-পদ্ধতি ঋণদান পদ্ধতির চেয়ে উত্তম।

মনে রাখতে হবে, মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সব লেনদেন ক্রয়-বিক্রয় বা বাই-পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ প্রতিদিনের জীবনে ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। কেউ কোনো জিনিস/পণ্য বিক্রি করছে, অন্যজন সেটা ক্রয় করছে। আর এটা থেকে অর্জিত আয়কে সবাই মুনাফা হিসেবে বিবেচনা করছে। আবার এই ক্রয়-বিক্রয়কে কেউ অন্যায় বা সুদভিত্তিক লেনদেন বলে মনে করছে না; বরং ইসলামী ব্যাংক যখন এই একই কাজ করছে, তখন এই লেনদেনকে সন্দেহের চোখে দেখছে।     

ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রচলিত সুদভিত্তিক পদ্ধতির তুলনায় মুশারাকা ও মুদারাবা পদ্ধতির যেমন শ্রেষ্ঠত্ব আছে, এর পাশাপাশি ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি, বিশেষ করে বাই-মুরাবাহা ও বাই-মুয়াজ্জাল পদ্ধতিরও তেমনি শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকৃত। অর্থনৈতিক কল্যাণকারিতার বিচারে পুঁজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে মুশারাকা ও মুদারাবা পদ্ধতিই শ্রেষ্ঠ, কিন্তু ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতিতে লেনদেন করাও বৈধ। আর ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি যেহেতু শরিয়াহসম্মত, তাই এটি নিঃসন্দেহে প্রচলিত সুদভিত্তিক ঋণদান পদ্ধতি থেকে উত্তম। এ ছাড়া আরো একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের বেশির ভাগ হয়ে থাকে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতিতে। ফলে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতির গুরুত্ব ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।

পুঁজিবাদের সুদ ও ঋণভিত্তিক লেনদেন আর ইসলামের ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী শরিয়াহ কতগুলো বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে, যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এটা মনে রাখতে হবে যে বেচাকেনার সময় এর সঙ্গে মুনাফা ধার্য করা শরিয়াহবিরোধী নয়। আর নির্দিষ্ট হারে মুনাফা আদায় করাও শরিয়তের বিপরীত নয়। ঋণদানের সময়কার নির্দিষ্ট হারে সুদ নেওয়া এবং বাই-পদ্ধতিতে বেচাকেনার সময় নির্ধারিত হারে আদায় করা কোনোক্রমেই শরিয়াহবিরোধী বলে মনে করার কারণ নেই। আজকাল দেখা যায়, দোকানে নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করতে লোকেরা স্বস্তিবোধ করে। আমরা যে বাড়ি ভাড়া দিই, সেই ভাড়া যেমন পূর্ব নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট, তেমনি কাউকে গাড়ি ভাড়া দিলেও তা নির্ধারিত। বাড়ির মালিক বা গাড়ির মালিক তার যাবতীয় খরচসহ কত ভাড়া নির্ধারিত করলে সে মুনাফা করতে পারবে, তা নির্ধারিত করে দিলে শরিয়াহর কোনো বাধা নেই।

আর এটা না করলেই বরং শরিয়াহর দৃষ্টিতে অবৈধ। তাই বাই-পদ্ধতি বিশেষ করে বাই-মুরাবাহা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যই হলো লাভ বা মুনাফা পূর্ব নির্ধারিত থাকা। তাই ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ গ্রহণকালে বাই-পদ্ধতিতে নির্ধারিত হারে মুনাফা আদায় সঠিক নয় বা এটি ঋণপদ্ধতির মতোই—এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়।

আরেকটি বিষয় এখানে লক্ষ করার মতো যে ঋণদান পদ্ধতিতে পণ্য/জিনিস বেচাকেনার কোনো বালাই নেই। এখানে সুদ অর্জন করাই আসল উদ্দেশ্য। বিপরীতে, বেচাকেনা না হলে মুনাফা আদায় করার কোনো সহজ উপায় নেই। আর দুনিয়ার প্রতিটি ব্যবসায় বেচাকেনা থেকেই মুনাফা আসে। ঋণ দিয়ে আদায় করা হয় সুদ।


   আরও সংবাদ