ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৯৬৫ বার
ইসলাম ডেস্ক: কিছুদিন আগে ইজরাইলে দেখা মিলেছে ‘সিংকহোল’। জেরুজালেমের ঘন বশতীপূর্ণ একটি এলাকার অংশ হঠাৎ দেবে যায়। এতে কেউ হতাহত না হলেও এর প্রভাবে সৃষ্ট রহস্যজনক দানবীয় গর্তে পড়েছে বেশ কিছু গাড়ি। হঠাৎ দানবীয় গর্ত তৈরির ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়। এর আগে মেক্সিকোর একটি আবাদি জমিতেও ১৫০ ফুট প্রশস্ত ও ৫০ ফুট গভীর গর্ত তৈরি হয়। এটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।
কেন এমন হচ্ছে পৃথিবীতে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ঘটছে এমন বিপর্যয়।
এমন ঘটনা পৃথিবীতে নতুন নয়। হাজার বছর আগেও পৃথিবীর বুকে এমন ঘটনা ঘটেছে, যা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পবিত্র কোরআন-হাদিসে শেষ যুগে এমন ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণীও রয়েছে। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এ ধরনের ঘটনার কারণের কথাও। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমরা কারুনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার সপক্ষে এমন কোনো দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তি থেকে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও নিজেকে সাহায্য করতে সক্ষম ছিল না।’ (সুরা আল কাসাস, আয়াত : ৮১)
অর্থাৎ কারুনকে তার অহংকারের ফলে প্রাসাদ ও সম্পদসহ ভূগর্ভে ধসিয়ে দিলাম। বিষয়টি মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর পবিত্র কালামে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘কারুন ছিল মুসার সমপ্রদায়ভুক্ত। কিন্তু সে তাদের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিল। আমি (আল্লাহ) তাকে দান করেছিলাম এমন ধনভাণ্ডার, যার চাবিগুলো বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ করো, তার জাতি তাকে বলেছিল, দম্ভ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৬)
কিন্তু সে তার দাম্ভিকতা ছাড়তে পারেনি। সে নিজেকে অপরিহার্য ভাবতে শুরু করেছিল, নিজেকে ভাবতে শুরু করেছিল অদম্য ও অসীম ক্ষমতাবান, যার পরিণতিতে মহান আল্লাহ তাকে তার সম্পদসহ ধসিয়ে দিয়েছেন।
পবিত্র কোরআনের এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে ভূমি ধস বা হঠাৎ দানবীয় গর্ত তৈরি হওয়ার কারণ মানুষের নাফরমানি, অহংকার প্রভৃতি। অহংকারের কারণে শুধু কারুনের এই পরিণতি হয়নি; বরং দুনিয়াবাসীকে সতর্ক করার জন্য মহান আল্লাহ এমন আরো ঘটনা ঘটিয়েছেন। হাদিসে শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জনৈক লোক তার দুটি চাদর পরিধান করে অহংকারের সঙ্গে চলাফেরা করছিল। আপন ব্যক্তিত্বকে সে ভালো মনে করছিল। অকস্মাৎ আল্লাহ তাকে জমিনে ধসে দিলেন। কিয়ামত অবধি সে মাটির জমিনে ধসতে থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৩৬০)
নাউজুবিল্লাহ! এসব ঘটনার দ্বারা মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে তোমরা যা কিছু নিয়ে অহংকার করো, অন্যকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করো, অন্যের ওপর জুলুম করো, তার কিছুই তোমাদের কোনো কাজে আসবে না। তোমরা নিজেদের শক্ত অবস্থানের গরিমায় দম্ভ দেখাও; কিন্তু মহান আল্লাহ যখন পাকড়াও করবেন, তখন তোমাদের পায়ের তলার সেই শক্ত মাটিও তোমাদের সঙ্গ দেবে না।
হাদিস শরিফে এ ধরনের দানবীয় গর্ত তৈরি হওয়ার আরো কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি ও পাথর বর্ষণস্বরূপ আজাব এ উম্মতের মাঝে ঘনিয়ে আসবে। জনৈক মুসলিম ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), কখন এসব আজাব সংঘটিত হবে? তিনি বলেন, যখন গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বিস্তৃতি লাভ করবে এবং মদ্যপানে সয়লাব হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২২১২)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু মালিক আল-আশআরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার উম্মতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। (তাদের পাপাসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তাআলা এদের মাটির নিচে ধসিয়ে দেবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২০)
উল্লিখিত হাদিসগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্রের বিস্তৃতি ও মদ্যপান যখন সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে, তখন পৃথিবীতে সিংকহোল বা দানবীয় গর্ত তৈরি হওয়ার মতো বিপর্যয় বেড়ে যাবে।
আবার আল্লাহর ঘরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার কারণেও এ রকম আজাব আসবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হাফসাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে একটি বাহিনী এ কাবা গৃহের বিপক্ষে যুদ্ধ করার ইচ্ছা করবে। তারপর তারা যখন ‘বাইদা’ নামক এক ময়দানে পদার্পণ করবে, তখন তাদের মাঝের অংশটি ভূমিতে ধসে যাবে। এ সময় অগ্রভাগের সৈন্যরা পশ্চাতের সৈন্যদের উচ্চ স্বরে ডাকতে থাকবে। অতঃপর প্রত্যেকেই ভূমিতে ধসে যাবে। বেঁচে যাওয়া একটি ব্যক্তি ছাড়া তাদের কেউ আর বাকি থাকবে না। সে-ই তাদের সম্বন্ধে অন্যদের খবর দেবে। (মুসলিম, হাদিস : ৭১৩৪)
ওপরের আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, অহংকার, মাদকাসক্তি, গান-বাজনা, আল্লাহর ঘরের সঙ্গে শত্রুতা প্রভৃতি ভূমিধসের মতো আজাবের কারণ। আমাদের উচিত সব গুনাহের কাজ থেকে তাওবা করে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া। মহান আল্লাহ সবাইকে তাঁর রহম চাদরে আশ্রয় দিন। আমিন।