ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

ইসলামের অনুপ্রেরণা ভাই-বোনের সম্পর্ক রক্ষায়

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৯ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ৮৬০ বার


ইসলামের অনুপ্রেরণা ভাই-বোনের সম্পর্ক রক্ষায়

ইসলাম: পৃথিবীতে মা-বাবার পর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাই-বোনের। একসঙ্গে থাকা, স্কুল-মক্তবে আসা-যাওয়া, গল্প-আড্ডা, বেড়াতে যাওয়া ও মান অভিমানসহ পরিবারের সুখ-দুঃখের চিরসঙ্গী থাকে এই ভাই-বোনেরা। মা-বাবার আদর-শাসনে বেড়ে ওঠা অম্লমধুর এই সম্পর্ক একসময় ফিকে হয়ে যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকের স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব ও পরিবার গড়ে ওঠে। ফলে ছোটখাটো ঘটনার জের ধরে অনেক সময় ভাই-বোনের মাঝে দূরত্ব তৈরি হয়। শৈশবের সুখস্মৃতি অস্বস্তি ও তিক্ততায় রূপান্তরিত হয় পরিণত বয়সে। কিন্তু ইসলাম এই দূরত্ব ও তিক্ততা সমর্থন করে না; বরং শৈশব থেকে আমৃত্যু একে অপরের প্রতি যত্নবান ও শ্রদ্ধাশীল হওয়ার গুরুত্বারোপ করে। এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আত্মীয়তা বা রক্তের সম্পর্ক আল্লাহর আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখবেন। আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪১৩)

আর রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মাঝে ভাই-বোনের সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি। তাই যে ব্যক্তি বোনদের প্রতি যত্নশীল হবে তাদের ফজিলতের কথা তুলে ধরে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার তিনটি মেয়ে অথবা তিনটি বোন আছে অথবা দুটি মেয়ে অথবা দুটি বোন আছে, সে তাদের প্রতি ভালো ব্যবহার করলে এবং তাদের (অধিকার) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করলে তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত আছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৬)

তা ছাড়া স্বভাবত বোনেরা ভাইয়ের প্রতি আন্তরিক ও দুর্বল হয়ে থাকে। তাদের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসার টান একটু ব্যতিক্রমী হয়। ইতিহাসে ভাইয়ের প্রতি বোনের আন্তরিক ভালোবাসার অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো, একবার হাজ্জাজ বিন ইউসুফ এক নারীর স্বামী, সন্তান ও তার ভাইকে যুদ্ধবন্দি করে তার কাছে নিয়ে আসে। এরপর ওই নারীকে বলল, তুমি এই তিনজনের মধ্যে কোনো একজনকে মুক্ত করে নিতে পারো। তখন ওই নারী জবাবে বলেন, স্বামী তো আমার আছে। আর সন্তান আমার থেকে জন্ম হয়েছে। তবে ভাইকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, তাই আমি ভাইকেই গ্রহণ করলাম। তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললেন, তার এই সুন্দর বক্তব্যের জন্য আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম। (মুহাদারাতুল উদাবা : ১/৪৩৪)

তাই ভাইদের কর্তব্য বোনদের দায়িত্বের প্রতি সর্বদা সচেষ্ট হওয়া। সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় বোনদেরর পাশে থাকা। বিশেষভাবে বাবার অপারগতা বা তার অবর্তমানে বোনের লালন-পালন, উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দেওয়াও ভাইয়ের দায়িত্ব। (বুখারি, হাদিস : ৫১৩০)

এমনকি ঘরে যদি ছোট বা অবিবাহিত বোন থাকে তাদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি রাখা। কোনোভাবেই যেন তারা কষ্ট না পায়; বরং নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করে হলেও বোনদের ভালো রাখার চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে জাবের (রা.)-এর একটি ঘটনা খুবই স্মরণীয়। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে জাবের, তুমি বিয়ে করেছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, কেমন, কুমারী না অকুমারী? আমি বললাম, না; বরং অকুমারী। তিনি বলেন, কোনো কুমারী মেয়েকে বিয়ে করলে না কেন? সে তো তোমার সঙ্গে আমোদ-ফূর্তি করত। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমার আব্বা উহুদের যুদ্ধে শাহাদত লাভ করেছেন। রেখে গেছেন ৯ মেয়ে। এখন আমার ৯ বোন। এ কারণে আমি তাদের সঙ্গে তাদের মতো একজন আনাড়ি মেয়েকে এনে একত্র করা পছন্দ করিনি; বরং এমন একটি নারীকে (পছন্দ করলাম) যে তাদের চুল আঁচড়ে দিতে পারবে এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে। তিনি বলেন, ঠিক করেছ। (বুখারি, হাদিস : ৪০৫২)

তাই দুনিয়া ও আখিরাতে সৌভাগ্যবান ও সফল হতে চাইলে আত্মীয়তা রক্ষা; বিশেষভাবে বোনদের হক ও মর্যাদা রক্ষার বিকল্প নেই।

সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৮৫)

আল্লাহ তাআলা আমাদের ভাই-বোনের মর্যাদা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন।


   আরও সংবাদ