ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ০৯:১১ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৫৭ বার
বরগুনার বিভিন্ন উপজেলায় সারাবছরই বিশুদ্ধ পানির সংকট বিরাজ করে। এই সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য পতিত সরকারের সময় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, অর্ধসমাপ্ত কাজ রেখে বিল উত্তোলন ও উপকারভোগী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতির মতো নানা অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের আওতায় বরগুনার তিনটি উপজেলায় ৫ হাজার ৫৪২টি পরিবারকে তিন হাজার লিটার ধারণক্ষমতার ট্যাংক সরবরাহের কথা ছিল। প্রতিটি ইউনিটের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪৫ হাজার টাকা, পাশাপাশি ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্মাণের জন্য অতিরিক্ত ৬ হাজার ৯৮০ টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও ট্যাংক, পাইপলাইন ও ফিল্টারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়নি। প্ল্যাটফর্ম নির্মাণে প্রথম শ্রেণির ইটের পরিবর্তে নিম্নমানের ইট ব্যবহার, কম সিমেন্ট ও নিম্নমানের বালু প্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে। এতে তৈরি কাঠামোর স্থায়িত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন উপকারভোগীরা।
সরজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির উঠোনে প্রকল্পের দেওয়া পানির ট্যাংক থাকলেও সেটি ব্যবহার করার জন্য সংযোগ দেওয়া হয়নি; অধিকাংশ বাড়িতেই একই অবস্থা। ভুক্তভোগীরা পুকুরের পানি ব্যবহার করছেন। ওই এলাকায় পাঁচটি বাড়ি পরিদর্শন করে দেখা গেছে কোথাও পানির প্ল্যান্ট নেই; কেবল প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ করেই ঠিকাদার কাজ শেষ করেছে। নিম্নমানের কাজের কারণে প্রকল্পের উপকরণ এখন জরাজীর্ণ দেখা যায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, বৃষ্টি পানি সংরক্ষণের এই প্রকল্পের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে ৫–১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছিল। প্ল্যাটফর্ম সম্পন্ন হওয়ার পরেও ট্যাংক বাড়ি পর্যন্ত আনতে হয়েছে উপকারভোগীদের নিজ খরচে। ট্যাংক আনার দুই বছর পরও সংযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে ট্যাংকগুলো জঞ্জালভরা ও নষ্ট হয়ে পড়ছে।
উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের বেঁচে থাকার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পানির মতো মৌলিক সেবা বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বেশ উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনিক পর্যায়ে দ্রুত তদারকি, স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ভার নেওয়া না হলে উপকূলের এসব মানুষ আরও গভীর ভোগান্তির মুখে পড়বেন, স্থানীয়রা এটাই জানিয়েছেন।
বালিয়াতলী গ্রামের হামিদা বেগম জানান, প্রকল্পে নাম উঠাতে তার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। এরপর শুধু প্ল্যাটফর্ম করে তারা চলে গেছে, আজ পর্যন্ত পানির ট্যাংকসহ কিছুই পাননি। তারা যে কষ্টের কারণে এই প্রকল্পে নাম দিয়েছিলেন, তা এখনো আগের মতোই রয়েছে।
আরেক ভুক্তভোগী আরিফ ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পে নাম লেখাতে আমাদের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। দুই বছর আগে প্ল্যাটফর্ম করা হলেও ট্যাংক দেওয়া হয়েছে এবং তারপর থেকে কেউ আর খোঁজ নেয়নি। এখন এগুলো পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। কাজটি যদি ভালোভাবে করা হত, তাহলে সমস্যা কমে যেত; তারা নিম্নমানের কাজ করায় প্ল্যাটফর্ম অনেক জায়গায় ভেঙে পড়ছে। যদি ট্যাংকে তিন হাজার লিটার পানি ভর্তি করা হয়, তবে তা ডেবে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।
দুলাল মোল্লা নামে আরও এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, তারা খুব পানির সংকটে রয়েছেন। সরকার তাদের এই সমস্যার কথা বিবেচনা করে প্রকল্প নেওয়ায় প্রথমে খুশি হয়েছিলেন, কিন্তু দুই বছর ধরে ঠিকাদার তাদের ঘোরাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কেউ এ বিষয়ে নজরদারি করেনি। তারা চান, এর সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ ঘটনায় মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি।
বরগুনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম ঢাকায় আছেন বলে অফিস সূত্রে জানানো হয়। পরবর্তীতে তার মোবাইলে বারবার ফোন করলেও ফোনটি রিসিভ করেননি।
বরগুনা সনাক (টিআইবি) সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, বরগুনায় বৃষ্টি পানি সংরক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকার যে প্রকল্প চলছে, তার সুফল মানুষ পাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ যদি সুফলই না পায়, তবে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করাই ভালো। এই ধরনের কাজের গাফিলতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।