ঢাকা, শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

৫ টাকার জন্য বাস টার্মিনালে তাণ্ডব

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ ০৯:২৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪০ বার


৫ টাকার জন্য বাস টার্মিনালে তাণ্ডব

মাত্র পাঁচ টাকা কম দেওয়া নিয়ে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকের দ্বন্দ্বে নগরীর কেন্দ্রীয় নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। অন্তত দুই শতাধিক বাস ভাঙচুর, একটিতে অগ্নিসংযোগ, আড়াইশ কাউন্টার ও তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং কাউন্টার থেকে অর্থ লুটের ঘটনা ঘটেছে। 

শনিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় এ তাণ্ডব চলে। রাত ৯টার পর সেনাবাহিনী এসে শিক্ষার্থীদের তাড়িয়ে দিয়ে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাত্র ৫ টাকার ভাড়া নিয়ে বিএম কলেজ শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে তর্ক ও হাতাহাতি হয়। পরে ১০০–১৫০ শিক্ষার্থী এসে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে থাকা বাস, সব কাউন্টারসহ যাবতীয় স্থাপনা ভাঙচুর করে। এ সময় নুর পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। কাছাকাছি ফায়ার সার্ভিস থাকায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের আরও বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাস টার্মিনালে তাণ্ডব চালায়। তারা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। বিএম কলেজ অধ্যক্ষ এসে শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা শান্ত হয়নি। সড়ক অবরোধ করায় বরগুনা, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর থেকে আসা যানবাহন আটকা পড়ে। রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা ছেড়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেন, যেভাবে বাস ও কাউন্টার ভাঙচুর করা হয়েছে, তাতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মহানগর পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুনুল ইসলাম বলেন, বাসের ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একজন অফিসার রেসপন্স করেছিলেন। ছাত্র ও শ্রমিকদের নিয়ে সমাধানের পথে যাচ্ছিলাম। কিন্তু উত্তেজনাকর একটি কথার কারণে সমাধান হয়নি। এরপর আস্তে আস্তে ঘটনা আরও বাড়তে থাকে। অন্যান্য বাহিনী বাধার কারণে দ্রুত আসতে পারেনি। তবে কেউ আহত হয়নি। কতটি বাস ভাঙচুর হয়েছে, তা এখনো গণনা করা যায়নি।

তিনি বলেন, প্রথম থেকেই পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে আর নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়নি।

শ্রমিক আল আমিন বলেন, বরিশালের হিজলা থেকে হিমেল হীরক পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে নথুল্লাবাদে আসে। ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ছাত্ররা বাসের চালককে মারধর করে। তারা যদি মারধর করে, শ্রমিকরাও তো প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এরপর ছাত্ররা সহ আরও কিছু দুষ্কৃতকারী এসে সব বাস ভাঙচুর করেছে। টার্মিনালে যত বাস আছে সব ভাঙচুর করা হয়েছে। টার্মিনালে লোকাল ১৫টি ও দূরপাল্লার আড়াইশ কাউন্টার ভাঙচুর এবং টাকা-পয়সা লুট করা হয়েছে।

বিএম কলেজ সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বলেন, আমাদের এক শিক্ষার্থী হেনস্তার শিকার হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমরা জানতে আসি। তখন শ্রমিকরা আমাদের পাল্টা হুমকি দিয়েছে, গালিগালাজ করেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার বিচার দাবিতে আমরা নথুল্লাবাদে অবস্থান নিয়েছি। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন বিচার না করবে, শ্রমিকদের আইনের আওতায় না আনবে এবং শিক্ষার্থী-যাত্রীবান্ধব পরিবেশ না গড়ে তুলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নথুল্লাবাদ না ছাড়ার ঘোষণা দেন তিনি।

বিএম কলেজ অধ্যক্ষ শেখ তাজুল ইসলাম বলেন, এখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। হাফ ভাড়া নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে। সেই ঘটনা জানার পর তার বন্ধুরা আসে। তাদের উপরও হামলা করা হয়। বিএম কলেজের ছাত্ররা সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদে এখানে এসেছে। আমি তাদের আশ্বস্ত করেছি যে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালের প্রশাসন ও বাস মালিক সমিতিকে নিয়ে সমাধান করা হবে।

বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারেফ হোসেন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে আড়াই ঘণ্টা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে তাণ্ডব চালানো হয়েছে। টার্মিনালের সব বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। কাউন্টার ভাঙচুর করে টাকা-পয়সা লুট করা হয়েছে। হাজারখানেক লোক ছিল। তারা ছাত্র ছিল কিনা এখনো বলতে পারছি না। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাও জানা যায়নি। রোববার সকাল থেকে কোনো বাস চলবে কি না, তাও সন্দেহ আছে। কারণ সবগুলো মেরামত করতে হবে।


   আরও সংবাদ