আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:০৭ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৬ বার
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাজনৈতিক ও বিভিন্ন আশ্রয় নীতিতে বড় পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ ও ভারতসহ সাত দেশকে নিরাপদ উৎস দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত আগেই করেছিল। নতুন এই নীতিতে ইউরোপের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা সম্মিলিতভাবে একমত হওয়ায় এসব দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন এখন দ্রুতই বাতিল হবে। আর ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।
সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
ব্রাসেলসে একমত হওয়া নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, মিসর, মরক্কো, তিউনিসিয়া, কলম্বিয়া ও কসোভো থেকে আগত রাজনৈতিক বা বিভিন্ন আবেদনকারীরা সাধারণত রাজনৈতিক নিপীড়ন বা যুদ্ধের ঝুঁকিতে নেই। তাই তাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত নয়। ফলে ইউরোপে তারা প্রবেশ করলেও আর আশ্রয়ের সুযোগ পাবেন না।
সোমবারের বৈঠকের বরাত দিয়ে ইউরোপের গণমাধ্যমগুলো জানায়, বৈঠকে পুরো ইউরোপের ২৭টি দেশে একই নিয়মে ও পদ্ধতিতে একীভূত ডিপোর্টেশন ব্যবস্থার ওপরও ঐকমত্য হয়েছে। কোনো নাগরিকের আবেদন এক দেশে প্রত্যাখ্যাত হলে অন্য দেশে আর ওই নাগরিকের আবেদনের সুযোগ থাকবে না। প্রত্যাখ্যাত আবেদনকারীদের আটক রাখার সুযোগ, পুনরায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তথ্য সমন্বয়ের ব্যাপারেও ঐকমত্য হয়েছে। একই সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপের বাইরে নিরাপদ তৃতীয় দেশ ধারণা যুক্ত করা হয়েছে। এতে কারও আবেদন বাতিল হলে অভিবাসীকে এমন দেশেও পাঠানো যেতে পারে যার সঙ্গে তার কোনো পারিবারিক বা সামাজিক সংযোগ নেই। ডেনমার্ক এই সিদ্ধান্তকে মাইলফলক বলে অভিহিত করেছে।
ইউরোপের গণমাধ্যমগুলো আরও জানায়, সোমবারের বৈঠকে ইউরোপের সীমান্ত-চাপ কমাতে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা থাকা ব্যক্তিদেরও বিভিন্ন দেশে সমানভাবে বণ্টন প্রক্রিয়াও নির্ধারণ করা হয়েছে। সদস্যরাষ্ট্রগুলো চাইলে আশ্রয়প্রার্থীকে নেবে অথবা না নিতে চাইলে আর্থিক অবদান বা সীমান্ত সহায়তা দিতে হবে। ২০২৬ সালের মধ্যভাগের মধ্যে ২১ হাজার আশ্রয় আবেদনকারীকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পুনর্বণ্টন করা হবে। কেউ না নিলে ৪২০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে যেসব রাষ্ট্র নেবেন তাদের সহায়তা করতে হবে।
পরিণতি ও প্রভাব
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নীতির সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোতে, যেখান থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইউরোপমুখী হয়। শুধুমাত্র ইউরোপের ইতালিতেই সমুদ্রপথে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে প্রবেশ করেছেন। নতুন তালিকায় সাতটি দেশকে নিরাপদ হিসেবে দেখানোয় এসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা এখন প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। লিবিয়া অথবা বলকান রাষ্ট্রগুলো দিয়ে কেউ ইউরোপে প্রবেশ করলেও তাদের দ্রুতই ডিপোর্টেশন সেন্টারে পাঠানো হবে বা তৃতীয় দেশে সরিয়ে নেওয়া হবে।
ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো আশা করছে, ২০২৬ সালে নতুন মাইগ্রেশন প্যাক্ট পুরোপুরি চালু হলে ইউরোপে আগত অনিয়মিত অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।