আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৪৬ বার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনের গাজায় গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়ার পর থেকে অন্তত ৭৩৮ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭৭ জন নিহত হয়েছে।
হামাস কর্মকর্তা হুসাম বদরান মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে, যাতে তারা তাদের বিদ্যমান অঙ্গীকারগুলো পুরোপুরি পালন করে।
বদরান বলেন, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী চুক্তির লঙ্ঘন চালিয়ে গেলে এবং তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে গেলে পরবর্তী ধাপ শুরু হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “হামাস মধ্যস্থতাকারীদের বলেছে প্রথম ধাপ সম্পূর্ণ বাস্তবায়নে দখলদারদের ওপর চাপ দিতে।”
অক্টোবর ১০ থেকে কার্যকর হওয়া এ যুদ্ধবিরতির মূল লক্ষ্য ছিল গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার।
তবে পরবর্তী ধাপের বিষয়গুলো—গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন, সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন এবং ‘বোর্ড অব পিস’ নামে পরিচিত কাঠামো গঠন এখনো অমীমাংসিত।
ইসরায়েলি হামলা চলতে থাকায় ফিলিস্তিনিদের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্ষোভও বাড়ছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭৭ জন নিহত এবং ৯৮৭ জন আহত হয়েছে।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানান, যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাধা এখনো কাটিয়ে ওঠা বাকি।
তিনি বলেন, ওয়াশিংটন আশা করছে প্রথম দফায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন শুরু হবে ২০২৬ সালের শুরুর দিকে।
বর্তমানে আলোচনা চলছে কোন কোন দেশ এই বাহিনীতে অংশ নেবে, কীভাবে এর নেতৃত্ব পরিচালিত হবে এবং এর ‘রুলস অব এনগেজমেন্ট’ কী হবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় গঠিত ‘বোর্ড অব পিস’ থেকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন খবর পাওয়া গেছে। এই বোর্ড গাজার পুনর্গঠন নজরদারির উদ্দেশ্যে গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা স্পষ্টভাবে বলছে, ইসরায়েলকে গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে।
তিনি আরও জানান যে, গাজার স্থানীয় জনগণ থেকে একটি নতুন পুলিশ বাহিনী গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
এ ছাড়া মানবিক সাহায্য প্রবেশের বাধা দূর করতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
ইসরায়েলের নতুন দাবি নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামিরের দাবি, গাজায় ইসরায়েল-নিয়ন্ত্রিত এলাকা চিহ্নিত করা ‘হলুদ রেখা–ই নতুন সীমান্ত। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ইসরায়েল আংশিক প্রত্যাহারের পরও গাজার প্রায় ৫৮ শতাংশ অঞ্চলে অবস্থান বজায় রেখেছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলকে গাজা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার কথা, যদিও এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।
ইসরায়েলের আরও হামলা
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী খান ইউনুসে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিমান হামলা এবং আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে। হতাহতের কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
উত্তর গাজায় বেইত লাহিয়ায় ভবন ধ্বংসের কাজও অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি সেনারা।
গাজার কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং যুদ্ধবিরতি ও এর মানবিক প্রোটোকলের মূলভাবকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার ৩৬৬ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৪ জন আহত হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ১১৩৯ জন নিহত এবং ২০০ জনের বেশি মানুষ জিম্মি হয়।
সূত্র: আল জাজিরা