ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ অগাস্ট, ২০২৪ ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৫৮ বার
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪ জন গত বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নতুন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত হয়েছেন, যা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা, চিকিৎসক বিধান রঞ্জন রায় ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফারুক-ই-আজম ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি। উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া অন্য ১১ জন হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নির্বাহী পরিচালক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন, পরিবেশ আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, নারী অধিকারকর্মী ফরিদা আখতার, ইসলামি চিন্তাবিদ আ ফ ম খালিদ হাসান, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর জাহান বেগম ও নির্বাচনব্যবস্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শারমিন মুরশিদ।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন নতুন এ সরকারকে স্বাগত জানাই। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মুখে গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ কার্যত সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার মধ্য দিয়ে সে শুন্যতা যেমন পূরণ হলো, তেমনি অনিশ্চিত একটা পরিস্থিতিরও অবসান ঘটলো । এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতির চরম এক সংকটকালে দেশ পরিচালনা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহার দেয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিলো এ সরকার, যা সহজ কোনো কাজ নয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী সরকার উপর্যুপরি স্বেচ্ছাচারিতা ও অপশাসন চালিয়ে নির্বাচনব্যবস্থাসহ দেশের প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস বা অকার্যকর করে ফেলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যেমন খুবই কঠিন, তেমনি তা সময়সাপেক্ষও। অস্বীকার করার সুযোগ নেই, জনপ্রশাসন,পুলিশপ্রশাসন, ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ন্যাক্কারজনকভাবে দলীয়করণ করে অঘোষিতভাবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম সংস্কার ছাড়া স্বচ্ছ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশই তৈরি করা যাবে না।
দেশের তরুণ-প্রজম্ম ভোটার হলেও তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগই পেলো না আজও। তারা জানলো না নির্বাচন কাকে বলে! ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ নির্বাচনের নামে হয়েছে দিনে-দুপুরে ডাকাতি ও নির্লজ্জ প্রহসন। দেশের সংবিধানকে কাঁটাছেড়া করে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে । রাষ্ট্রক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর দেয়া হয়েছে। অভিযোগ আছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে সাজানো বিভিন্ন মামলায় সরকার যেভাবে ইঙ্গিত করে, আদালত থেকে সেভাবেই রায় আসে। একটি মামলায় আদালতের রায় তারেক রহমানের পক্ষে যাওয়ায় ওই বিচারপতি প্রাণের ভয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এমন অবস্থায় দেশে নিশ্চয়ই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। শপথ নেয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে বলেছেন, 'অরাজকতার বিষবাষ্প এখন যে-ই ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্রজনতাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পূর্ণ শক্তি তাকে ব্যর্থ করে দেবে'। বস্তুত, এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ অরাজকতার বিষবাষ্প দূর করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। সচেতনদের কাছে স্পষ্ট , ছাত্র -গণঅভ্যূত্থানের অর্জনকে ম্লান করে দিতে স্বার্থান্বেষী একটি মহল দেশে অরাজকতা কায়েমে তৎপর। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরে দেশে তিনদিন সরকার ছিল না, পুলিশ ছিল না। 'ঝোপ বুঝে কোপ' মারার মত এই সুযোগটাই দুর্বৃত্তরা গ্রহণ করেছে। আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের কারণে দুর্বৃত্ত চক্র আর অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টির কোনো সুযোগ পাবে না। পরিশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কাম্য। #