ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

এইচএসসি’র স্থগিত পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে - এসএম আকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২২ অগাস্ট, ২০২৪ ১৬:৩৫ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৫১ বার


এইচএসসি’র স্থগিত পরীক্ষা বাতিল প্রসঙ্গে - এসএম আকাশ

অন্তর্বর্তী সরকার পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরীক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে গিয়ে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এর আগের দিন তারা একই দাবিতে  ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করেন। পরীক্ষার্থীদের দাবি, ‘তারা স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর দিতে চান না। ইতিমধ্যে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে এবং স্থগিত বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হোক’।স্থগিত পরীক্ষাগুলো তারা কেন দিতে চান না সে বিষয়েও তারা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন কর্তৃপক্ষীয় মহলের কাছে। একপর্যায়ে তাদের দাবি মেনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিলের ঘোষণা দেয়া হয়।তবে পরীক্ষার ফল কীভাবে দেয়া হবে সে সিদ্ধান্ত পরে জানানোর কথা বলা হয়। 
ঘটনাটি নিয়ে সমাজে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পরীক্ষার্থীও এ সিদ্ধান্তের বিপক্ষে।বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। নটর ডেম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এক বিবৃতিতে তাদের অবস্থান জানানো হয়েছে পরীক্ষার পক্ষে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়কও এভাবে পরীক্ষা বাতিল সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ফাহমিদুল হক তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন ‘এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটি বাতিল হোক।’ যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান আমিরুল আলম খান মনে করেন, ‘এতে শিক্ষার্থীদেরই ভুগতে হবে। তাই কষ্ট হলেও পরীক্ষা দেয়া উচিত ছিল। সরকারেরও পরীক্ষাটি নেয়া দরকার ছিল’। দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে অসংখ্য মানুষ পরীক্ষা বাতিলের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন।অনেকে বলছেন, পরীক্ষা না দিয়ে ফলাফল প্রকাশিত হলে তা মন্দ নজির হয়ে থাকবে।
সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েছে তার প্রায় সবই স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের বিপক্ষে। পরিস্থিতি দেখে মনে হওয়া সঙ্গত, সরকার আন্দোলনের মুখে বাকি পরীক্ষা বাতিল করে ‘মস্তবড়ো অন্যায়’ করেছে। কাউকে তেমন বাতিলের পক্ষে উচ্চবাচ্য করতে শোনা যাচ্ছে না। তবে বাতিলের সিদ্ধান্তকে একেবারে কেউই সমর্থন করছেন না, বিষয়টি তেমনও নয়। ঢাকা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের বিসিএস ক্যাডার সাবেক শিক্ষক কানাডাপ্রবাসী প্রকৌশলী একেএম মুছাব্বীর রুবেল তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘এইচএসসির বাকি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তটি  আমার মতে ঠিকই আছে’। তার যুক্তি-  প্রথমত,  এই সময়ে প্রচুর ছাত্রছাত্রীকে হাসপাতালে রেখে পরীক্ষা নেয়াটা ঠিক হতো না। দ্বিতীয়ত,  ছেলেমেয়েরা বড় ধরণের একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। তারা দেখেছে তারই পাশে কেউ না কেউ শহীদ হয়েছে, কেউ প্রচন্ডভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এই ধরণের শক থেকে বের হয়ে এসে পরীক্ষায় বসা বাস্তবেই কঠিন। তৃতীয়ত,  অধিকাংশ ছেলেমেয়েই প্রায় দুই মাস জুড়ে পড়ালেখার বাইরে ছিল। এই সময়ে হঠাৎ করে তাদের পক্ষে পড়ার টেবিলে বসে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া কঠিনই বটে। চতুর্থত,  এখনো বিপ্লবের ভ্যাংগার্ড হিসেবে তাদের মাঠে থাকার দরকার আছে। এবং পঞ্চমত,  ১৯৭২ সালের পরীক্ষার মতো অবাধ নকল হবার আশংকা তৈরি হতো। আর তার দোষ/দায় পড়তো এই ছেলে-মেয়েদের ওপরই। তাদেরকে খারাপভাবে চিত্রায়িত করার জন্যে অলরেডি পরাজিত পক্ষ একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মতে, ‘এইসব কারণে পরীক্ষা বাতিল করা ঠিকই আছে। যদি সম্ভব হতো  আরো সময় নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করা- সেটা অবশ্যই আরো বেশী ভালো হতো’।
অস্বীকার করা যাবে না, কানাডাপ্রবাসী ওই প্রকৌশলী সমালোচনার স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে একজন বিচক্ষণ শিক্ষকের মত কথাই বলেছেন। কেউ কেউ ঘটনাটিকে ‘মন্দ নজির’ বলে আখ্যা দিলেও পরীক্ষা বাতিল দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। এত তাড়াতাড়ি কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হয়নি। তখন এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।  পরের বছরও স্কুল-কলেজে নামমাত্র পরীক্ষা নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এছাড়া ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর কোনোরুপ পরীক্ষা ছাড়াই সবাইকে অটোপ্রমোশন দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে ডিগ্রি পরীক্ষা হলেও সেটা দেশের শিক্ষা-ব্যবস্থার  ইতিহাসে উম্মুক্ত নকল বা বই খুলে লেখার পরীক্ষা হিসেবে মন্দ নজির হয়ে আছে। তাছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ বিচক্ষণ পরীক্ষিত উজ্জ্বল একজন ব্যক্তিত্ব। তিনি পরীক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে অযৌক্তিক অনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত দেবেন বলে মনে করা যায় না। আন্দোলনের আগেই এইচএসসি ও সমমানের কমবেশি অর্ধেক পরীক্ষা হয়ে গেছে। শিক্ষা বোর্ডগুলো চাইলে হয়ে যাওয়া পরীক্ষাগুলোর ওপরই ফলাফল প্রকাশ করতে পারে। এর সঙ্গে বাকি বিষয়ের পরীক্ষা এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে ম্যাপিং করার যে প্রস্তাব পরীক্ষার্থীরা দিয়েছেন তা বিবেচনায় নিতে পারে। আমরা মনেকরি, যেকোনো বিষয়ে সমালোচনার আগে ভালো-মন্দ দুটো দিকই ভাবা উচিত। 
[ লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, অপরাধ চোখ ২৪. কম]


   আরও সংবাদ