ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

আনসার পরিচয়ে কারা ছিল সচিবালয় ঘেরাওয়ে - এসএম আকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৮ অগাস্ট, ২০২৪ ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৭৮ বার


আনসার পরিচয়ে কারা ছিল সচিবালয় ঘেরাওয়ে - এসএম আকাশ

আনসারদের আন্দোলন নিয়ে নানা প্রশ্ন জনমনে। বিবিসির প্রতিবেদন মতে, ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। গত রবিবার রাতে আনসারদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সচিবালয় অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনায় আনসার সদস্যদের অনেককে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়া ওইসব আনসার সদস্যকে উদ্ধার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন সেনা সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হন, যাদের একজনের অবস্থা গুরুতর। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা সচিবালয় ঘেরাও করা আনসার সদস্যদের মোকাবেলা না করলে সেখানকার পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারতো। খবরে এ প্রশ্নও তোলা হয় যে, অন্তর্বর্তী সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও কেন আনসার সদস্যরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিলেন?
ঘটনাক্রমে রবিবার রাতেই আনসারদের আন্দোলনের ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে পড়ে। সরকার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও আনসারদের একটি অংশ সচিবালয় ছেড়ে যেতে রাজি হননি। তারা ছিলেন নাছোড়বান্দা। কর্তৃপক্ষকে চাপ দেন ওই রাতেই প্রজ্ঞাপন জারির, যা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। এ বিষয়ে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বক্তব্য, আসলে দাবি মানা না মানা নয়, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সচিবালয়কে অবরুদ্ধ করে দেশকে অবরুদ্ধ করা। সচিবালয়ে আনসারদের হয়ে যিনি নেতৃত্ব দেন তিনি এক সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ছিলেন।  স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেই নেতাসহ অনেকে আনসার পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমরা জেনেছি এর আগে যিনি আনসারের ডিজি ছিলেন তিনি আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট। সারজিস আলমের অভিযোগ, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় বসে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র এবং নীলনকশার চেষ্টা করছে। একইদিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, স্বৈরাচারের দোসররা জনপ্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অস্থিতিশীল করতে নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দাবি মেনে নেয়ার পরও আনসার সদস্যরা কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখার সাহস পেলো কোত্থেকে? রিজভী আহমেদের মতে, আসলে দাবি আদায় নয়, অন্তর্বর্তীকালিন সরকারকে অস্থির করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব করা হচ্ছে।
বস্তুত, আনসারদের আন্দোলন নিয়ে যে অভিযোগ বা প্রশ্ন উঠেছে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এটা খুব সহজ হিসেব, দাবি আদায় তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরই তারা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতো। কিন্তু সেটা তারা করেনি, বরং অযোক্তিকভাবে রাতেই প্রজ্ঞাপন জারির জন্য চাপ দিয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করে, যা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনসার সদস্যদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ- তাদের কেউ ছাত্রলীগ, কেউ যুবলীগ, কেউ পুলিশ। অর্থাৎ বিশেষ কোনো গোষ্ঠী অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আনসার পরিচয়ে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়। রাজনীতি-সচেতনদের আশঙ্কা, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, চাপে ফেলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলা । কিন্তু শেষমুহূর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় তাদের সে অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই।  আমরা মনেকরি, সেদিন আসলে কারা আনসার পরিচয়ে সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছিল এটা উদ্ঘাটন করা জরুরি দেশ ও জাতির স্বার্থেই। ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। স্বভাবতই যেকোনো ধরণের ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে  এই সরকারকে স্বস্তিতে তার দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিতে হবে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের গুম-খুন ও দমন-পীড়ন এবং সাম্প্রতিক ছাত্রজনতার আন্দোলনে অনেক রক্তের বিনিময়ে নতুন করে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা কোনোভাবেই বিফলে যেতে দেয়া যাবে না।  
( লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, অপরাধের চোখ ২৪ ডটকম)


   আরও সংবাদ