ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

বন্যার তান্ডব : এই মুহূর্তে বড় কাজ দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৫ অগাস্ট, ২০২৪ ১০:১২ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ২২৪ বার


বন্যার তান্ডব : এই মুহূর্তে বড় কাজ দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো

দেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যেসব খবর-খবর দেখা যাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার। ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ দেশের ১২ টি জেলা এরই মধ্যে বন্যায় বিধ্বস্ত। পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয় এবং খাবার পানি ও খাদ্যের অভাবে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত ১৮ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন সূত্রমতে, প্রাণহানির সংখ্যা আরো বেশি। সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো কোনো স্থানে পানি কিছুটা কমলেও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত। গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে নতুন করে  ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী। বহু বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালা, শস্য ডুবে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। 
‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’য়ের মত এলাকাগুলো শুধু পানিতে ডোবেনি, ডুবে গেছে অন্ধকারেও। বিদ্যুৎ নেই। টিউবওয়েলগুলোও পানির নিচে। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। জীবন বাঁচাতে দূষিত পানি পান করে নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অনেক এলাকা হয়ে পড়েছে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন।  প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও প্লাবিত। সবকিছু মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা। বন্যা আমাদের দেশে নতুন কোনো দুর্যোগ নয়। ফি বছরই কমবেশি বন্যা হয়ে থাকে। তবে এবারের বন্যা নজিরবিহীন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে গত তিন দশকে এরকম ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। মওসুমের শুরু, মধ্য কিংবা শেষে সাধারণত সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে একাধিকবার বন্যা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার পূর্ব সীমান্তের ১২ টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বন্যা স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, রীতিমত একটা তান্ডব! সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ত্রিপুরার ধলাই জেলার বিশাল জলাধার ডুম্বুরের ( ৪১ বর্গকিলোমিটার) ‘স্ন্যাপ গেট’-এর তিনটির মধ্যে একটি খুলে দেয়া হয়েছে। পানির বেশি চাপ থাকলে এই গেট খুলে দেয়া হয়। কিন্তু তার আগে বিষয়টি ভাটির দেশকে জানাতে হয় যেন তারা বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়, ভারত গেট খুলে দেয়ার আগে বিষয়টি বাংলাদেশকে জানায়নি। এটা আন্তর্জাতিক রীতির বরখেলাপ। ভারতের এ আচরণ নিয়ে সর্বত্র সমালোচনা হচ্ছে । জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি আসলে বাংলাদেশের বন্ধু? দেশের শিক্ষার্থীরা ভারতের এ আচরণের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ একই ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। পাশাপাশি সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থার কার্যকলাপ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারো কারো মতে, সরকারের আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার কারো কারো ভাষ্য, যৌথ নদী কমিশনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বাংলাদেশ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারেনি। 
তবে এগুলো এই মুহূর্তে আমলে নেয়ার বিষয় নয়। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে পরে। এই মুহূর্তে দরকার বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এবং তা হচ্ছে, পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার, তাদের কাছে খাবার, খাবার পানি ও ওষুধ পৌঁছানো, এককথায় তাদের পুনর্বাসন। স্বস্তির বিষয়, বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণতৎপরতা, চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, পেশাজীবী, শিক্ষার্থী  কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের উপদেষ্টারা দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন এবং ত্রাণতৎপরতায় যোগ দিচ্ছেন।  আমাদের বিশ্বাস, সামর্থ্য অনুযায়ী সবাই সহযোগিতার হাত বাড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সহজ হয়ে যাবে।                              ( লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, অপরাধ চোখ ২৪ ডটকম)


   আরও সংবাদ