ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

হাজার কোটির জায়গায় লাগল মাত্র সাড়ে ১২ কোটি - এস এম আকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১৩:৩০ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ২২৭ বার


হাজার কোটির জায়গায় লাগল মাত্র সাড়ে ১২ কোটি - এস এম আকাশ

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন স্থানে হামলা এবং অগ্নিসংযোগে বিদ্যুৎ খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বাস্তব হিসেবে এই ক্ষতির পরিমাণ সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ কোটি টাকা বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের। মেট্রোরেলের বিষয়েও অনুরুপ ক্ষতি দাবি করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পতিত সরকারের আজ্ঞাবাহী বশংবদ মিডিয়াগুলোতে প্রোপাগান্ডা চালানো হয়, মেট্টোরেল মেরামত করতে একবছর সময় লাগবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কিছুদিনের মধ্যেই মেট্টোরেলের চলাচল আবার শুরু হয়েছে এবং মেরামতে খরচ হয়েছে প্রদত্ত হিসাবের তুলনায় খুব সামান্য টাকায়।  অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদের মতে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরনের অতিরঞ্জিত বা ভিত্তিহীন কথাবার্তা সব সময়ই বলে এসেছে। যে প্রকল্প ২০০ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন সম্ভব, তাতে তারা হাজার কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়েছে। 
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন না হলে সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে স্থাপনাগুলো মেরামতের নামে নতুন করে আরো হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হতো। অপরদিকে এসব ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে আন্দোলনকারী হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে গায়েবি মামলায় ফাঁসিয়ে ভয়ঙ্কর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হতো, যা বিগত সাড়ে ১৫ বছর ধরেই করে এসেছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার। দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার রুদ্ররোষে সরকারের যখন ‘পড়োপড়ো’ অবস্থা তখনো তারা জাতির সামনে তুলে ধরেছে ক্ষয়ক্ষতির ভুয়া হিসাব। এতে অনুমান করা যায়, ‘মরার সময়’ও তাদের মাথায় ছিল দুর্নীতি-লুটপাটের ধান্দা। বস্তুত, আওয়ামী লীগ সরকার ছিল আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে লুটেরা একটি গোষ্ঠী দেশ ও জাতির কাঁধে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ৫ আগষ্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালানোর পর সংবাদমাধ্যমে নতুন করে উঠে আসছে তার সরকারের দুঃশাসন-অপশাসনের নানা চিত্র। প্রসঙ্গত, অতি সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবরের শিরোনাম এখানে তুলে ধরা যায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো লিখেছে, ‘ডিজিটালের নামে বিপুল ব্যয়, তবু সূচকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। আইসিটি বিভাগ ১৫ বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে। সুফল কম, অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। স্বাস্থ্যখাতে ছাত্রলীগ হলেই বড় পদ। জনগণের টাকায় সচিবের বাবার নামে হাসপাতাল। জমি দখলে অপ্রতিরোধ্য হাসনাত আবদুল্লাহ। নিয়োগে তাপসের পছন্দই শেষ কথা। শিক্ষামন্ত্রী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দখল। আট ব্যাংকে সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ৩৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। শুধু জনতা ব্যাংকেই ২৫ হাজার কোটি টাকা। করোনার পর তিনি নিয়েছেন ১২ হাজার কোটি টাকা। বেক্সিমকো পণ্য রফতানির আড়ালে করেছে অর্থপাচার। এস আলমের লাখ কোটি টাকা ঋণ, ব্যাংকে জমা মাত্র ২৬ হাজার কোটি টাকা। তার গৃহকর্মীর হিসাবেও পাওয়া গেছে কোটি টাকা। সরকার পতনের মাত্র ৪ দিন আগেও বসুন্ধরা গ্রুপকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধা। বিটিআরসির ৯২১ কোটি টাকা পরিশোধ না করে উধাও আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় লোকজন। পদ্মা সেতুর দুই ম্যুরালে ব্যয় ১১৭ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে লিটন চৌধুরীর চাপে কেনা হয়েছে ৯০০ কোটি টাকার জমি। ৭২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেললাইন বানানো হয়েছে, কিন্তু ট্রেন চলে  নামমাত্র। শেখ পরিবারের নাম থাকলেই প্রকল্প পাস। সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকা লিখেছে, আইসিটি শিক্ষার ১৩৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। গত শুক্রবার পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি খবরের শিরোনাম, ‘ইলিয়াস মোল্লার টাকার খামার’, ‘৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়, কাজে লাগেনি প্রশিক্ষণ প্রকল্প’, ‘পুকুর দখল, চাল সিন্ডিকেট ও কমিশনকান্ডের দানব সাবেক খাদ্যমন্ত্রী নওগাঁর সাধনের অপকীর্তি’, ‘ফেনীতে নিজাম হাজারীর ঘাটলার শাসন’ এবং খোদ রাজধানী ঢাকায় ‘রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নামে বরাদ্দ, হাসিনা-রেহানার নির্দেশে খাল ইজারা’। 
পত্র-পত্রিকার এসব শিরোনাম থেকে আঁচ করা যায়, কী ধরণের অরাজকতা কায়েম করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের রাজত্বে। কথিত আছে, একসময় বিদেশীরা লুণ্ঠন করে এদেশের সম্পদ নিয়ে গেছে তাদের দেশে। আর আওয়ামী লীগের এসব দস্যু নিজের দেশ  লুণ্ঠন করে অর্থ-সম্পদ নিয়ে গেছে বিদেশে। এতে পরিষ্কার,  এরা বিদেশী দস্যুদের চেয়েও নিকৃষ্ট।  পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে  এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়,  দেশের প্রতি ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও এদের ভেতর থাকলে এভাবে লুটপাট করতে পারতো না। লুণ্ঠিত সম্পদ দেশে থাকলেও তা হয়ত কোনো না কোনোভাবে বিনিয়োগ হতো এবং তাতে  দেশের উপকার হতো। কিন্তু সেই সুযোগও আওয়ামী দস্যুদের অনেকে রাখেনি। আমরা মনে করি, দেশ ও জাতির স্বার্থেই এই দস্যুদের তালিকাভুক্ত  করে আইনের আওতায় আনা যেমন জরুরি,, তেমনি এরা নানাভাবে দেশের যে অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে তা উদ্ধার করা প্রয়োজন।                লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক, অপরাধ চোখ ২৪ ডটকম


   আরও সংবাদ