ঢাকা, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪,
সরকার অনুমোদিত নিবন্ধন নম্বর ১৯১
Reg:C-125478/2015

অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত রুখে দিতে হবে - এসএম আকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট


প্রকাশ: ১১ অগাস্ট, ২০২৪ ১৬:৩২ অপরাহ্ন | দেখা হয়েছে ১৮২ বার


অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত রুখে দিতে হবে - এসএম আকাশ

স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অঘটন ঘটছে।সম্প্রতি এ বিষয়ে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে যে চিত্র ফুটে ওঠে তা হচ্ছে, মাঝখানে তিনদিন দেশে কোনো সরকার না থাকায় নেতৃত্ব সংকটে প্রশাসনে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির  অবনতির কারণ। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের অনেকের বাড়িঘরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের অনেকে দেশ ছেড়েছেন। আর যারা দেশে আছেন, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, বেশকিছু থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে ঘটেছে হামলা, অস্ত্র লুট ও আসামি পালানোর ঘটনা। এমন এক পরিস্থিতিতেই  নিরাপত্তা শঙ্কায় কর্মবিরতির ডাক দেয় পুলিশ। এতে অনেক এলাকায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা বেড়ে গেছে, যা সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। 
সবমিলিয়ে সরকারবিহীন তিনদিন  দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বেশ নাজুক হয়ে পড়ে, যা দুঃখজনক ও উদ্বেগের। এরই মধ্যে গত ৮ আগষ্ট নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে । এতে জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি অনেকটাই ফিরে এসেছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় জনসাধারণের নানা পদক্ষেপে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা একপ্রকার বন্ধই হয়ে গেছে। এখন রয়েছে মূলত ডাকাতির আতঙ্ক। অনেক এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণ দল-মত, ধর্ম-বর্ণ, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সংগঠিত হয়ে ডাকাত প্রতিরোধে পাহারা বসিয়েছে। সেনাবাহিনী তাদের সহযোগিতা করছে। এতে এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বহু ডাকাত বা দুর্বৃত্ত জনসাধারণের হাতে ধরা পড়েছে। ডাকাতির ঘটনাও কমে গেছে। আসলে গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে যেমন কার্যকর কোনো সরকার ছিল না, তেমনি এইসময় দেশে পুলিশি কোনো কার্যক্রমও ছিল না। সন্দেহ নেই, দুর্বৃত্তরা গত কয়েকদিন এই পরিস্থিতিরই সুযোগ নিয়েছে। সচেতন সমাজের মতে, এ পরিস্থিতির অন্তরালে রয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলের যড়যন্ত্রও। তাদের উদ্দেশ্য, ছাত্র-গণঅভ্যূত্থানে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তা ম্লান করে দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার। কিন্তু দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্রজনতার বিজয়কে ম্লান হতে দেয়া যাবে না। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘সরকারপতনের প্রেক্ষাপটে দেশের আইনশৃঙ্খলার যে অবনতি হয়েছে, তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকার দেবে’। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রথমত দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফেরাবে, যেটি চরমভাবে কমে গেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে আশা করা যায়,  অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বগ্রহণের আগেই  ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা পুনর্গঠনের যে কাজ শুরু করা হয়েছে, তা শিগগির আরো জোরদার হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব মূলত পুলিশের। কিন্তু স্বৈরাচারের পতনের পর নানা কারণে পুলিশ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। গত ৬ আগস্ট পুলিশের অধস্তন কর্মচারী সংগঠন দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করে । তাদের অভিযোগ, যেভাবে থানা-পুলিশের ওপর নির্বিচার হামলা হচ্ছে, একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে, সেখানে তাদের পক্ষে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে,  পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দিয়েছিল। অস্বীকার করা যাবে না, প্রধানত পুলিশি শক্তির ওপর ভর করেই ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। জাতীয় ও স্থানীয় সকল নির্বাচনে পুলিশি শক্তিকে যেমন উপর্যুপরি অপপ্রয়োগ করা হয়েছে, তেমনি বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, গুম-খুনেও। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের আগ মুহূর্তে দেখা যায়, পুলিশের অধস্তনদের ছাত্রজনতার আন্দোলন মোকাবিলায় পাঠিয়ে বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আত্মগোপনে চলে যান। তারা বুঝতে পারেন, ছাত্রজনতার সম্মিলিত দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সামনে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদি শক্তির পরাজয় অনিবার্য। তাই ছাত্রজনতার পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটার আগেই তারা ‘চাচা আপনপ্রাণ বাঁচা’ বলে পলায়ন করেন। শেখ হাসিনা সরকার পুলিশ বাহিনীকে নানাভাবে কলুষিত করেছে, কিন্তু এর দায় গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর দেয়া যায় না।
 সেক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ৭ আগষ্ট বিএনপির জনসভায় প্রদত্ত ভার্চুয়াল ভাষণে যথার্থই বলেছন, ‘পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভাঙতে চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছ’। তার আশঙ্কা, দেশের চলমান অর্জনকে নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা মনেকরি, তারেক রহমানসহ দেশের সচেতন সব মহলের এ আশঙ্কাকে আমলে নিয়েই দল-মত, ধর্ম-বর্ণ পরিচয় এর ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কাউকে আইন হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।পুলিশ বাহিনী দ্রুত পুনর্গঠন করতে হবে এবং একে একটি দলবাজিমুক্ত পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ এই নীতিবাক্যকে সত্যি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।


   আরও সংবাদ