ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২৫ ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন | দেখা হয়েছে ৩৩ বার
ঢাকা: কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ঘোষিত কথিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাশকতা প্রতিরোধে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত ফোর্স। এরই মধ্যে সড়কে মহড়া দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চালানো হবে সাঁড়াশি অভিযানও।
আগামী ১৩ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে হওয়া মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাশকতা চালাতে পারে- এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পলাতক দলটির নেতাকর্মীদের বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দিতে দেখা গেছে। তবে এমন কোনো শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারপরও বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে মিছিল করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। দুই একটি জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণেরও ঘটনা ঘটেছে। তাই ১৩ নভেম্বর বড় ধরনের নশকতার শঙ্কা না করলেও বিষয়টি একেবারে হালকাভাবে নিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত শনিবার (৮ নভেম্বর) ডিএমপি সদর দপ্তরে হওয়া এক বৈঠকে নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বাড়ানোসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বৈঠকের পর ডিএমপির সাত হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রস্তুতিসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মহড়া দিতে দেখা গেছে। ডিএমপির পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীও আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা ঠেকাতে মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে। আগামী সোমবার (১০ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে বাহিনীগুলোর সাঁড়াশি অভিযান।
র্যাব ও ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে বিশেষ তল্লাশি শুরু হবে। পাশাপাশি গ্রেপ্তার, টহল ও সাইবার মনিটরিং কার্যক্রমও বাড়ানো হবে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় এরই মধ্যে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা করার সক্ষমতা নেই। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে জমায়েত হতে না পারে সেজন্য সব থানাকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। যে কারণে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভাড়া করা যানবাহনের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। রেল ও নৌপথেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
ডিএমপির তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন বলেন, ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে আমাদের টহল কার্যক্রম বাড়ানো ও অপরাধীদের আইনের আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সেটি ঠেকাতে বলা হয়েছে। আমরা সজাগ ও সতর্ক আছি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী হুমকি দিচ্ছে। আমরা তা আমলে নিয়ে মাঠে আছি। ঢাকায় কেউ নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য যথেষ্ট তৎপর আছি। কেউ চেষ্টা চালালে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৩ নভেম্বর ঘিরে কোনো ধরনের শঙ্কা নেই জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বরের আগেও বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা হুমকি দিয়েছে। এটা গুজবেরও অংশ হতে পারে। এটাকে শঙ্কা মনে করার মতো কিছু না। তারপরও আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। কারণ, কোনো তথ্য পেলে সেটা আমরা উড়িয়ে দেই না। আমাদের কাজ হচ্ছে প্রতিটি তথ্যের খুঁটিনাটি যাচাই-বাছাই করা এবং সেই হিসেবে প্রস্তুতি রাখা। একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে সময় লাগে না। তাই আমরা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সতর্ক রয়েছি।
র্যাবের প্রস্তুতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল এবং গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় সজাগ আছে। বিশেষ করে ১৩ নভেম্বরের লকডাউনের তথ্য পাওয়ার পর আমরা আরও সতর্ক হয়েছি। যখনই আমরা কোনো তথ্য পাচ্ছি, তখনই আমরা সেটি যাচাই-বাছাই করছি। এছাড়া আমরা আমাদের টহল ও চেকপোস্ট কার্যক্রম এবং অভিযান বাড়াবো। আগামীকাল থেকে আমরা সেটি শুরু করবো। আমরা সর্বদা সজাগ আছি।
এ সময় তিনি কোনো তথ্য পেলে দ্রুত সেটি র্যাবের সংশ্লিষ্ট ইউনিটে জানানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকার পালিয়ে গেছে গণমানুষের প্রতিরোধে। গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে তাদের উৎখাত হয়েছে। এ পলাতক ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী আবারও যদি বিশৃঙ্খলা বা অপরাধ করার চেষ্টা করে, তাহলে জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে।
তিনি আরও জানান, দেশের জন্য, জনগণের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করে এবং করে চলেছে। যেসব ফেসবুক পেজ থেকে পলাতক ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে, সেই পেজগুলোকে নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছে।